আগরতলা, ২৪ ডিসেম্বর: বর্তমানে রোগীদের বাইরে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমেছে। রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য এখন ইন্টার ডিপার্টমেন্টাল রেফারেল সিস্টেম (IDRS) শুরু হয়েছে।
আজ আগরতলার প্রজ্ঞা ভবনে জাতীয় দন্ত চিকিৎসক দিবস-২০২৫ এবং ইন্ডিয়ান ডেন্টাল এসোসিয়েশনের, ত্রিপুরা রাজ্য শাখার ২৪তম বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজকের দিনটি বিশিষ্ট দন্ত চিকিৎসক পদ্মভূষণ ডাঃ রফিউদ্দিন আহমেদের জন্মদিন। ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি জয়পুরে ইন্ডিয়ান ডেন্টাল এসোসিয়েশনের সভায় ২৪ ডিসেম্বর দিনটি জাতীয় দন্ত চিকিৎসক দিবস হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজকের দিনটি পালন করা হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দাঁতের স্বাস্থ্য বা যত্ন সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝানো এবং নিয়মিত চেক-আপের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষকে আরো সচেতন করা। এক্ষেত্রে ডেন্টাল সার্জনদের ভূমিকা খুবই উল্লেখযোগ্য। এই দিনে মানুষের প্রতি ডেন্টাল সার্জনদের কি ভূমিকা সেটা অবহিত করাও অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই শুধু আজকের দিনটা নয়, অন্যান্য সময়েও যাতে এধরণের কার্যক্রম করা যায় সেই উদ্যোগ নিলে আরো ভালো হয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চাপ থেকে মুক্ত থাকার অন্যতম উপায় হচ্ছে হাসি। আর এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন ডেন্টাল সার্জনরা। দাঁত আমাদের সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দাঁত আত্মরক্ষার ক্ষেত্রেও বিশেষ কাজে আসে। আর ভারতবর্ষের ইতিহাসে কোন ডেন্টাল সার্জন মুখ্যমন্ত্রী হননি। কিন্তু আমি হয়েছি। তাই অনেক সময় বিরোধীরা বলেন যে একজন ডেন্টিস্ট কিভাবে রাজ্য চালাবেন।
আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। নতুন ভারত গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করছেন। আমরাও সেই দিশায় নতুন ত্রিপুরা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। ডেন্টিস্ট অ্যাক্টের জনক হচ্ছেন ডাঃ আর আহমেদ। ১৯৩৯ সালে প্রথমে তিনি বেঙ্গল ডেন্টিস্ট অ্যাক্ট করেন। পরবর্তী সময়ে ভারত সরকার ডেন্টাল অ্যাক্ট এবং ভারতীয় ডেন্টাল অ্যাক্ট ১৯৪৮ মডেল তৈরি করে। যা এখনো আমরা অনুসরণ করি। ডাঃ আহমেদ ১৯৫০ এ তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন। যা আমার সঙ্গে সাযুজ্য রয়েছে। ১৯৬৪ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দন্ত চিকিৎসায় ফরেনসিক ওডোনটলজির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এর মাধ্যমে অশনাক্ত মৃতদেহ শনাক্ত করা যায়। বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু কিংবা সুনামিতে মৃত্যু কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে মৃতদের শনাক্ত করা সম্ভব ফরেনসিক ওডোনটলজির মাধ্যমে। ডেন্টাল রেকর্ড থেকেই এটা সম্ভব হয়ে থাকে।
মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে বর্তমানে রাজ্যে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। রোগীদের কথা মাথায় রেখে জিবি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে। আরো ১০০টি শয্যা বৃদ্ধি করা হবে। রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য বর্তমানে ইন্টার ডিপার্টমেন্টাল রেফারেল সিস্টেম (IDRS) শুরু হয়েছে। মণিপুরের সিজা হাসপাতালের সহায়তায় রাজ্যে ৫টি কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। একটা কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার জন্য কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। তবে এজন্য আমাদের রোগীদের এক পয়সাও দিতে হয়নি। রাজ্যে একটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালু করতে সিজা হাসপাতালকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় করবে তারা। লিভার ও হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার জন্য মোহন ফাউন্ডেশনের সঙ্গে মৌ করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সরকার খুবই মানবিক ভাবনা নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করছে। মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে রোগীর পরিজনদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভারত মাতা ক্যান্টিন ও শেল্টার হাউজের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বর্তমানে রোগীদের বাইরে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমেছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা ড. সাজু ওয়াহিদ, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ দেবাশ্রি দেববর্মা, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ অঞ্জন দাস, মেডিকেল এডুকেশনের অধিকর্তা প্রফেসর ডাঃ এইচ পি শর্মা, আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডাঃ শালু রাই, ইন্ডিয়ান ডেন্টাল এসোসিয়েশনের, ত্রিপুরা রাজ্য শাখার সভাপতি ডাঃ পার্থ রায় চৌধুরী সহ অন্যান্য বিশিষ্ট চিকিৎসকগণ।
0 মন্তব্যসমূহ