আগরতলা, ২৪ ডিসেম্বর : সংকল্প, পরিশ্রম ও সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে যে কোনও সাধারণ মানুষই অসাধারণ সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন—তারই জীবন্ত উদাহরণ পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার বেলবাড়ি আরডি ব্লকের অন্তর্গত জিরানিয়াখলা ভিলেজ কমিটির বাসিন্দা সন্ধ্যা রানী দেববর্মা। আজ তিনি একজন সফল উদ্যোগপতি এবং পরিচিত মুখ ‘লাখপতি দিদি’ হিসেবে।
সন্ধ্যা রানী দেববর্মা সানমা স্ব-সহায়ক দলের একজন সদস্যা। স্ব-সহায়ক দলে যুক্ত হওয়ার পর ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন (টিআরএলএম)-এর উদ্যোগে তিনি প্লাস্টিকের বেত দিয়ে ঝুড়ি, ব্যাগসহ বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি নিজ উদ্যোগে প্লাস্টিকের বেতের ব্যাগ ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরি শুরু করেন।
তার তৈরি ব্যাগ ও ঝুড়ির গুণমান, নকশা এবং স্থায়িত্ব ক্রেতাদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। স্থানীয় বাজার ছাড়াও বিভিন্ন মেলা ও দোকানে তার তৈরি পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে স্বীকৃতি দিয়ে ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন তাকে মাস্টার ট্রেনার হিসেবে নিযুক্ত করে।
বর্তমানে সন্ধ্যা রানী দেববর্মা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে স্ব-সহায়ক দলের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য দিদিদের প্লাস্টিকের বেত দিয়ে ব্যাগ ও ঝুড়ি তৈরির প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। এর ফলে একদিকে যেমন বহু নারী স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন, অন্যদিকে তার নিজের আয়ের পথও আরও প্রসারিত হয়েছে।
শুধু ব্যাগ তৈরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি তিনি। গ্রামীণ জীবিকা মিশনের সহায়তায় একাধিকবার ঋণ গ্রহণ করে তিনি ব্যাগ তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহের পাশাপাশি শূকরের খামারও গড়ে তুলেছেন। বিভিন্ন আয়মূলক কর্মকাণ্ডের সমন্বয়ে বর্তমানে তার বার্ষিক আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তিনি এখন গর্বের সঙ্গে একজন লাখপতি দিদি।
স্থানীয় এলাকার স্ব-সহায়ক দলের দিদিদের কাছে সন্ধ্যা রানী দেববর্মা আজ অনুপ্রেরণার নাম। তার সাফল্যের গল্প নতুন উদ্যোক্তাদের সাহস জোগাচ্ছে এবং গ্রামীণ মহিলাদের আর্থিক স্বাবলম্বিতার পথে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করছে।
নিজের সাফল্যের প্রসঙ্গে সন্ধ্যা রানী দেববর্মা জানান, ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সহযোগিতা না পেলে এই পথচলা সম্ভব হতো না। গ্রামীণ জীবিকা মিশনই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেন।
0 মন্তব্যসমূহ