Advertisement

Responsive Advertisement

কিল্লা কৃষি মহকুমায় এআরসি পদ্ধতিতে অর্গানিক আলু চাষে সাফল্য





আগরতলা:, ২৪ ডিসেম্বর: রাজ্যে কৃষিক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে এআরসি (ARC) পদ্ধতিতে আলু চাষ। চলতি বছরে রাজ্যজুড়ে প্রায় ছয় হাজার চাষি এই আধুনিক পদ্ধতিতে আলু চাষ করছেন, যার একটি বড় অংশ সম্পূর্ণ অর্গানিক বা জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত। রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি কিল্লা কৃষি মহকুমার অন্তর্গত একাধিক এলাকায় এআরসি পদ্ধতিতে আলু চাষে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখা যাচ্ছে, যা কৃষকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
কিল্লা কৃষি মহকুমার পূর্ব কুপিলং ভিসি এলাকার পাঁচজন প্রান্তিক কৃষক জৈব পদ্ধতিতে এআরসি আলু চাষে বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছেন। তাঁদের চাষ করা আলু ক্ষেত বুধবার পরিদর্শন করেন রাজ্যিক উদ্যান ও বাগিচা ফসল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ড. রাজীব ঘোষ। পরিদর্শনকালে তাঁর সঙ্গে ছিলেন গবেষণা কেন্দ্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অভিনাস দাস, কিল্লা কৃষি মহকুমার কৃষি তত্ত্বাবধায়ক শুভেন্দু মজুমদার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বহু সংখ্যক কৃষক।
পরিদর্শন শেষে সংবাদমাধ্যমকে ড. রাজীব ঘোষ জানান, অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করা এআরসি আলু গাছের বৃদ্ধি অত্যন্ত সন্তোষজনক হয়েছে। গাছের স্বাস্থ্য, পাতার গঠন এবং মাটির গুণমান পর্যবেক্ষণ করে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এ বছর আলুর ফলন ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। তাঁর মতে, এই পদ্ধতিতে আলু চাষের ফলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে যাওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
ড. ঘোষ আরও জানান, ২০১০ সালে রাজ্যে প্রথমবার মাত্র ১০০ জন কৃষককে নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এআরসি পদ্ধতিতে আলু চাষ শুরু হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পদ্ধতির সাফল্য প্রমাণিত হওয়ায় বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ছয় হাজারে পৌঁছেছে। তা সত্ত্বেও কৃষকদের মধ্যে এই পদ্ধতিতে আলু চাষের আগ্রহ ক্রমাগত বাড়ছে। কারণ প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এআরসি পদ্ধতিতে তিন থেকে চার গুণ বেশি ফলন পাওয়া যাচ্ছে, যা কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, পূর্ব কুপিলংয়ের মতো প্রত্যন্ত ও পিছিয়ে থাকা এলাকাতেও কুফরি উদয় জাতের আলু অত্যন্ত ভালো ফলন দিয়েছে। এর ফলে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, সঠিক প্রযুক্তি ও দপ্তরের সহযোগিতা পেলে প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকরাও আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার সুফল ভোগ করতে পারেন। কৃষকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরকে আরও বেশি সংখ্যক চাষিকে এআরসি পদ্ধতির আওতায় আনার আহ্বান জানান ড. ঘোষ।
অপরদিকে কিল্লা কৃষি মহকুমার কৃষি তত্ত্বাবধায়ক শুভেন্দু মজুমদার জানান, চলতি বছরে একজন কৃষককে বিশেষভাবে অর্গানিক পদ্ধতিতে এআরসি আলু চাষের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে সকল চাষির ফলন ভালো হবে বলে আশাবাদী দপ্তর। এর ফলে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বহু কৃষক ইতিমধ্যেই এআরসি পদ্ধতিতে আলু চাষের জন্য বীজ, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানের আবেদন জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, কিল্লা কৃষি মহকুমায় অন্তত দেড়শ জন কৃষককে এআরসি আলু চাষের আওতায় আনা প্রয়োজন। পাশাপাশি এই এলাকার কৃষকরা পেঁয়াজ চাষেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সে ক্ষেত্রে সরকারিভাবে উন্নতমানের পেঁয়াজের চারা সরবরাহ করা হলে কৃষকদের আয় আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সার্বিকভাবে বলা যায়, কিল্লা কৃষি মহকুমায় এআরসি পদ্ধতিতে অর্গানিক আলু চাষের এই সাফল্য রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আধুনিক প্রযুক্তি, সরকারি সহায়তা এবং কৃষকদের উদ্যোগ একত্রিত হলে ভবিষ্যতে রাজ্যের কৃষি আরও সমৃদ্ধ হবে—এমনটাই মত কৃষি বিশেষজ্ঞদের।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ