Advertisement

Responsive Advertisement

অটল বিহারী বাজপেয়ী: রাষ্ট্রনায়ক, কবি ও ভারতীয় গণতন্ত্রের অমর মুখ


             
-প্রকৌশলী সুমন পাল 
স্টেট কোঅর্ডিনেটর অটল ফাউন্ডেশন ( ত্রিপুরা প্রদেশ)

আগরতলা, ২৪ ডিসেম্বর : ২৫ ডিসেম্বর—একজন মানুষের জন্মদিন নয়, এটি ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের স্মরণ।
এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভারতরত্ন শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী—যিনি শুধু একজন প্রধানমন্ত্রী নন, বরং ভারতীয় গণতন্ত্রের নৈতিক কণ্ঠস্বর, মানবিক রাজনীতির প্রতীক এবং শব্দের মাধ্যমে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়া এক বিরল রাষ্ট্রনায়ক।
১৯২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র জন্মগ্রহণ করেন অটলজি। শৈশব থেকেই সাহিত্য, দর্শন ও জাতীয়তাবাদের প্রতি তাঁর গভীর আকর্ষণ ছিল। গোয়ালিয়র সরস্বতী শিশু মন্দিরে প্রাথমিক শিক্ষা, ভিক্টোরিয়া কলেজ (বর্তমান লক্ষ্মীবাই কলেজ) থেকে স্নাতক এবং কানপুরের ডিএভি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর—শিক্ষাজীবনেই তাঁর চিন্তাশক্তি ও ভাষার গভীরতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সংসদীয় রাজনীতিতে এক অনন্য কণ্ঠ অটল বিহারী বাজপেয়ী ছিলেন এমন এক সংসদ সদস্য, যাঁর বক্তৃতা রাজনৈতিক বিরোধীরাও মুগ্ধ হয়ে শুনতেন। তিনি বিরোধী দলনেতা হিসেবেও যেমন দৃঢ় ছিলেন, তেমনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও ছিলেন সংযত ও দায়িত্বশীল। লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে দীর্ঘ সংসদীয় জীবনে তিনি প্রমাণ করেছেন—রাজনীতি মানে শুধু ক্ষমতা নয়, এটি দায়িত্ব ও নৈতিকতার প্রশ্ন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত অটলজি তিন দফায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন—১৯৯৬ সালে স্বল্প সময়ের জন্য, এবং ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত পূর্ণ মেয়াদে। তাঁর শাসনামলে ভারত পায় এক নতুন আত্মবিশ্বাস।
১৯৯৮ সালের পোখরান পারমাণবিক পরীক্ষা ভারতের কৌশলগত শক্তিকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করে লাহোর বাসযাত্রা ও পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তির উদ্যোগ তাঁর উদার ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় কারগিল সংকট মোকাবিলায় দৃঢ় নেতৃত্ব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বর্ণ চতুর্ভুজ প্রকল্প, জাতীয় সড়ক উন্নয়ন, টেলিকম বিপ্লব ভারতের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত করে কবি হৃদয়ের রাষ্ট্রনায়ক
রাজনীতির কঠোরতার মাঝেও অটল বিহারী বাজপেয়ী ছিলেন এক সংবেদনশীল কবি।
‘আমি যুদ্ধের ঘোষণা নই, পরাজয়ের বিরুদ্ধে প্রত্যয়’—এই লাইনই তাঁর দর্শনের পরিচয় দেয়।
তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে সংগ্রাম, আশাবাদ ও মানবিকতার কথা—যা আজও প্রাসঙ্গিক।
সহজ জীবন, মহান আদর্শ ব্যক্তিগত জীবনে অটলজি ছিলেন অত্যন্ত সহজ-সরল। অবিবাহিত থেকেও তিনি সমাজ ও জাতির প্রতি দায়িত্বকে সর্বোচ্চ স্থানে রেখেছিলেন। তাঁর গ্বালিয়রের বাড়ি আজ শিশুদের পাঠাগার—যা তাঁর শিক্ষানুরাগের এক জীবন্ত নিদর্শন।
চিরস্মরণীয় উত্তরাধিকার ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট, ৯৩ বছর বয়সে অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রয়াণ ঘটে। কিন্তু তাঁর আদর্শ, ভাষা ও নেতৃত্ব আজও ভারতকে পথ দেখায়।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ—সকলেই তাঁকে স্মরণ করে একজন “ভারতীয় রাজনীতির রেনেসাঁ পুরুষ” হিসেবে।
অটল বিহারী বাজপেয়ী ছিলেন এমন এক নেতা, যিনি সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন।তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি সেই মানুষটিকে—যাঁর কণ্ঠে রাজনীতি মানবিক হয়েছে, আর যাঁর নেতৃত্বে ভারত নিজেকে চিনেছে আরও দৃঢ়ভাবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ