Advertisement

Responsive Advertisement

সূর্যের পাহাড়: চীনের সোলার মাউন্টেনের গল্প



দূর থেকে তাকালে মনে হয়, পাহাড়ের গায়ে যেন নীলচে কালো এক নতুন চামড়া জড়িয়ে গেছে। কাছাকাছি গেলে বোঝা যায়, এগুলো পাথর নয়—হাজার হাজার সৌর প্যানেল। প্রকৃতি আর প্রযুক্তির এমন মিলনই চীনের “সোলার মাউন্টেন”-এর পরিচয়।
চীন বহু বছর ধরেই নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে অগ্রদূত। সেই যাত্রায় পাহাড়ঘেরা দুর্গম এলাকাগুলোকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছে বিশাল সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, যেগুলোকে অনেকে আদর করে ডাকছে সোলার মাউন্টেন নামে। যেখানে একসময় অনাবাদি ঢাল, পাথুরে জমি আর রুক্ষ প্রাকৃতিক দৃশ্য ছিল, সেখানে এখন সূর্যের আলো থেকে তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ।
এই সোলার মাউন্টেনগুলোর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো—এগুলো শহরের ভিড় থেকে দূরে, পাহাড়ি অঞ্চলে গড়ে ওঠায় কৃষিজমির ওপর চাপ পড়ে না। একই সঙ্গে পাহাড়ের ঢাল সূর্যালোক গ্রহণের জন্য আদর্শ কোণে থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনও হয় বেশি কার্যকরভাবে। প্রকৌশলীরা পাহাড়ের প্রাকৃতিক গঠন বজায় রেখেই প্যানেল বসানোর চেষ্টা করেছেন, যাতে ভূমিধস বা পরিবেশগত ক্ষতি কম হয়।
শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনই নয়, এই প্রকল্পগুলো বদলে দিচ্ছে আশপাশের মানুষের জীবনও। নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, উন্নত হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ, আর অনেক প্রত্যন্ত গ্রাম প্রথমবারের মতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়েছে। রাতে পাহাড়ের পাদদেশে আলো জ্বলা গ্রামগুলো যেন এই সোলার মাউন্টেনের নীরব সাফল্যের সাক্ষ্য দেয়।
পরিবেশের দিক থেকেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। কয়লা নির্ভর বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে সোলার মাউন্টেন কার্বন নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করছে। চীনের জলবায়ু লক্ষ্য পূরণে এই পাহাড়গুলো তাই শুধু ভূগোলের অংশ নয়, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনারও অংশ।
সূর্য প্রতিদিন ওঠে, প্রতিদিন আলো দেয়। সেই আলোকে শক্তিতে বদলে পাহাড়ের গায়ে যে নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে চীন, সোলার মাউন্টেন তারই প্রতীক। এটি প্রমাণ করে—সঠিক পরিকল্পনা আর প্রযুক্তির হাতে প্রকৃতি ধ্বংস হয় না, বরং নতুনভাবে বাঁচে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ