আগরতলা, ১৯ ডিসেম্বর: টিএফটিআইকে সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সেরা ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। চলচ্চিত্র হলো সমাজের দর্পণ। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজ জীবনের ভালো, মন্দ, অতীত, বর্তমান এমনকি ভবিষ্যতের নানা কিছু পর্দায় তুলে ধরা যায় এবং মানুষকে সচেতন করা যায়।
আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ত্রিপুরা ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে 'ত্রিপুরা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভূমি' শীর্ষক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এদিন এই অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের পাশ করা ছাত্রছাত্রী এবং রাজ্য সরকারের গ্রেডেশন প্রাপ্ত বিভিন্ন বিভাগের শিল্পীদের শংসাপত্র প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, টি.এফ.টি.আই-তে পাঠরত কিংবা পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের সৃজনশীলতার উপর গুরুত্ব আরোপ করে সমাজের জন্য ভালো কিছু করার চিন্তা ভাবনা করতে হবে। রাজ্য সরকার রাজ্যের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটকে সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সেরা ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস নিয়েছে। সে লক্ষ্যে টি.এফ.টি.আই-এর নিজস্ব পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য জায়গা অনুসন্ধানেরও কাজ চলছে। তিনি বলেন, এই রাজ্যের ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রতিভার কোনও অভাব নেই। এই প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সচেষ্ট থাকতে হবে। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার তাদের পাশে থাকবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে আসাম, মণিপুর আঞ্চলিক ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। আমাদের রাজ্যের ছেলেমেয়েদেরও সরকারি সহায়তার পাশাপাশি নিজেদের প্রতিভার মাধ্যমে রাজ্যের চলচ্চিত্র জগৎকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর প্রতিভা থাকলে অর্থ কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সব সময় বলে থাকেন যে ছাত্র যুবরা হলো দেশের ভবিষ্যৎ। ছাত্র যুবদের সামনে রেখেই সমস্ত পরিকল্পনা রূপায়িত করা হচ্ছে। এই অংশের ছেলেমেয়েদের সব সময় দেশ তথা সমাজের জন্য নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। টি.এফ.টি.আই-এর থেকে নানা বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করে তারা যাতে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে পারে সে বিষয়েও রাজ্য সরকারের চিন্তাভাবনা রয়েছে। রাজ্য সরকার জাতি, জনজাতি অংশের জনগণের মধ্যে ঐক্যের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে এক নতুন ত্রিপুরা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে টি.এফ.টি.আই-এর বিভিন্ন কোর্সের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী, রাজ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত চক্রবর্তী, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য কলকাতা সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটের উপাচার্য সমীরণ দত্ত, ত্রিপুরা ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটের উপদেষ্টা বিপ্লব গোস্বামী সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।
অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটের ২০২৪-২৫ বর্ষের পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের এবং রাজ্য সরকারের গ্রেডেশন প্রাপ্ত বিভিন্ন বিভাগের শিল্পীদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী, পর্যটনমন্ত্রী এবং অন্যান্য অতিথিগণ। এছাড়াও স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট রাইটিং প্রতিযোগিতার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীদের যথাক্রমে ৫০ হাজার টাকা, ৩০ হাজার টাকা, ২০ হাজার টাকা এবং শংসাপত্র তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিগণ। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বিশিষ্ট চৎপ্রেং বাদক শিল্পী সূর্যকুমার দেববর্মাকে (সদাগর দেববর্মা) সংবর্ধিত করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা তৈরি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিগুলির ক্লিপিংস প্রদর্শন করা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ