Advertisement

Responsive Advertisement

যুবরাজ নগর কৃষি মহকুমার অন্তর্গত মধুবনের মধু আজ অন্যান্য SHG-র সামনে অনুপ্রেরণা





আগরতলা, ২৯ নভেম্বর : এক সময় যারা মধু সংগ্রহের জন্য জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সহায়তায় আজ তারা সফল মধু চাষী, তৈরি হয়েছে নিজস্ব ব্র্যান্ড। তাদের উৎপাদিত মধু বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। 
উত্তর জেলার যুবরাজনগর কৃষি মহকুমার অন্তর্গত মধুবন এবং আশেপাশের এলাকার বেশ কয়েকজন যুবক অন্যান্য কাজের পাশাপাশি জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করতেন। যুবরাজনগর কৃষি মহকুমার কৃষি তত্ত্বাবধায়ক বিজন শর্মার নজরে বিষয়টি এলে মধু চাষের মাধ্যমে এই সকল যুবকদেরকে স্থায়ী ভাবে রোজগারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার লক্ষ্যে এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সী তথা আত্মা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও মৌমাছির বাক্স বিতরণ করা হয় এইসব লোকেদের মধ্যে। এই বাক্সগুলো থেকে মধু সংগ্রহ করে তারা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। শুধুমাত্র প্রশিক্ষণই নয় একটি অন্নপূর্ণা নামে স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী গঠন করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মধুবনের মধু নামে ব্র্যান্ড তৈরি করে দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বের করে দেওয়া হয়েছে কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের তরফে। 
এই সহায়ক গোষ্ঠীর অন্যতম এক সদস্য হচ্ছেন কালিকাপুর এলাকার বাসিন্দা পিন্টু দেবনাথ। তিনি জানান গত দুই বাণিজ্যিক ভাবে তিনি মধু চাষ করছেন। বর্তমানে তার কাছে প্রায় ১৭ টি মৌমাছির বাক্স রয়েছে। প্রতিটি বক্স থেকে মাসে দুইবার করে মধু সংগ্রহ করা যায়। একটি বাক্স থেকে বছরে প্রায় আট কেজি মধুর আহরণ করা যায়। এক কেজি মধু তারা ৯০০ থেকে হাজার টাকা দামে বিক্রি করছেন, তাদের উৎপাদিত মধুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, বিভিন্ন বার দোকানে পাইকারি মূল্যে বিক্রি করছেন মধুগুলি। এমনকি সাধন মানুষ তাদের বাড়ি থেকেও মধু সংগ্রহ করছেন। এর ফলে তাদের আর্থিক অবস্থা অনেক ভালো হয়েছে। এই সাফল্যের পেছনে যুবরাজনগর কৃষি মহকুমার বিশেষ অবদান রয়েছে বলে জানান। তাদেরকে প্রশিক্ষণ মৌমাছিসহ বাক্স দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তাদের গ্রুপে ৩২ জন সদস্য রয়েছেন বলেও জানান। 
স্থানীয় সমাজসেবী এবং প্রাক্তন বিধায়কা মলিনা নাথও তাদেরকে নিয়মিত ভাবে উৎসাহ দিয়ে আসছেন মধুর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য। এই বিষয়ে তিনি জানান রাজ্যের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথকে দিয়ে তাদের মধুর ব্র্যান্ডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করানো হয়েছে। ৩২ জন সদস্যদেরকে দিয়ে একটি সহ সহায়ক গোষ্ঠীর মাধ্যমে মধুর উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। আশেপাশের এলাকার অন্যান্য লোকজনও যাতে মধু চাষে এগিয়ে আসেন তার জন্য নিয়মিতভাবে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, সেইসঙ্গে তাদের মধুর কথা যাতে রাজ্য এমন কি অন্যান্য রাজ্যের মানুষও জানতে পারেন এবং সংগ্রহ করেন তার জন্য চেষ্টা চালানো বলেও জানান তিনি। 
মধুবন গোষ্ঠীর বিষয়ে যুবরাজনগর কৃষি মহকুমার কৃষি তত্ত্বাবধায়ক বিজন শর্মা বলেন, কয়েকজন যুবক নিয়মিতভাবে জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন দেখে আত্মা প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি মৌমাছির বাক্স দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তারা আগ্রহের সঙ্গে মধু চাষ করছে দেখে মধুবন নামে একটি ব্র্যান্ড তৈরি করার পাশাপাশি মধু বাজারজাত করার জন্য প্রয়োজনীয় যে সকল সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয় তাও তারা বের করে দেন। এখন তারা খুব দক্ষতার সঙ্গে মধু চাষ করছেন এবং প্রতি মাসে কুড়ি থেকে ২৫ কেজি মধু উৎপাদন করছেন। তাদের এই অন্নপূর্ণা স্ব সহায়ক গোষ্ঠী যাতে আগামী দিনে আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারে এর জন্য নিয়মিত ভাবে পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা করা হচ্ছে বলে জানান। 
এসকল মধু চাষীদের দেখে আশেপাশের এলাকার স্থানীয় মানুষের মধ্যেও মধু চাষের প্রতি আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। যারাই মধু চাষের বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের তরফে তাদেরকে সহায়তা করা হচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ