Advertisement

Responsive Advertisement

রাজনগরে অনুষ্ঠিত এআরসি আলু চাষ বিষয়ক কর্মশালা


আগরতলা, ১০ নভেম্বর: দক্ষিণ জেলার রাজনগর কৃষি মহকুমা এবং ভরৎচন্দ্রনগর কৃষি মহকুমার যৌথ উদ্যোগে সোমবার রাজনগর কমিউনিটি হলে অনুষ্ঠিত হলো এক বিশেষ কর্মশালা, যার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল এআরসি পদ্ধতিতে আলু চাষ। রাজ্য জুড়ে আলু উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে এই আধুনিক পদ্ধতিকে সামনে রেখে কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়াতে এই কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের এআরসি প্রকল্পের নোডাল অফিসার এবং কৃষি দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অরিন মজুমদার, আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্রর রাজ্য কেন্দ্রের প্রতিনিধি সোমপ্রকাশ আচার্যসহ বিভিন্ন কৃষি আধিকারিক ও স্থানীয় কৃষকরা।
অরিন মজুমদার তার বক্তব্যে বলেন, “রাজ্যকে আলু বীজ এবং খাবার আলু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্য নিয়েই এআরসি পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, কৃষকরা খুব অল্প সময়ে এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে অনেক বেশি ফলন পাচ্ছেন। ফলে তাদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রাজ্যও ক্রমে বীজ আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারছে।”
তিনি আরও জানান, প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এআরসি পদ্ধতিতে রোগমুক্ত ও উন্নতমানের বীজ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে রাজ্যের মাটিতে আলুর ফলন বেড়ে গিয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার সহায়তায় রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি চালু করেছে এবং কৃষকদের সাড়া পাওয়া গেছে ইতিবাচক।
বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ২৩,৭০০ জন কৃষক আলু চাষের সঙ্গে যুক্ত। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কৃষক ইতিমধ্যেই এআরসি পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন এবং ফলাফলে সন্তুষ্ট। কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই পদ্ধতিতে প্রতি হেক্টরে ১৮ টন থেকে বেড়ে উৎপাদন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ টনের কাছাকাছি। এই বিপুল বৃদ্ধি শুধু উৎপাদনের নয়, কৃষকদের আয়ের ক্ষেত্রেও এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে ৬,০০০ কৃষককে এই প্রকল্পের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই প্রকল্পে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সরকারের লক্ষ্য — ২০২৮-২৯ অর্থবছরের মধ্যে ত্রিপুরাকে আলু বীজ উৎপাদনে স্বনির্ভর করা এবং ২০২৯-৩০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে খাবার আলু উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ করা।
কর্মশালায় অংশ নেওয়া কৃষকরা জানান, এই নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষ করলে খরচ কমছে, ফলন বাড়ছে এবং বাজারে বিক্রির সুযোগও আরও উন্নত হচ্ছে। রাজনগরের এক কৃষক রমেন দত্ত বলেন, “আগে আলু চাষ মানে অনেক খরচ, কিন্তু এখন এআরসি পদ্ধতিতে আমরা কম শ্রমে বেশি ফল পাচ্ছি। দপ্তরের নির্দেশ মতো কাজ করলে ফসল ভালো হচ্ছে।”
এই প্রযুক্তি গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম। ত্রিপুরায় এই উদ্যোগ এখন রাজ্যজুড়ে কৃষিক্ষেত্রে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রশাসনের বিশ্বাস, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এআরসি পদ্ধতি ত্রিপুরাকে আলু উৎপাদনে আত্মনির্ভর করে তুলবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ