আগরতলা, ১৮ নভেম্বর: রাজ্য সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে নাগরিকদের উন্নত জীবন মান নিশ্চিত করা। মানুষের মৌলিক সমস্যাগুলি নিরসনের জন্য কাজ করতে হবে। সেই সঙ্গে বৃষ্টির জলকে যথাযথ উপায়ে সংরক্ষনের জন্য গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।
আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আম্রুত ২.০ এর অধীনে আগরতলা পুর নিগম এলাকায় বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১ অক্টোবর, ২০২১ এ অটল মিশন ফর রিজুভেনেশন এন্ড আরবান ট্রান্সফরমেশন অর্থাৎ আম্রুত প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন। এর মূল উদ্দেশ্য শহরগুলিকে আত্মনির্ভর করে তোলা। বিশেষ করে পানীয় জলের উৎস সুনিশ্চিতকরণ, সবুজায়ন, পার্ক সৌন্দর্যায়ান ইত্যাদি ব্যবস্থা সহ নাগরিক জীবনকে উন্নয়ন করা এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য হচ্ছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা, ড্রেইন নিষ্কাশনী ব্যবস্থা, পয়:প্রণালীর যথাযথ ব্যবস্থাকরণ ইত্যাদির সুবন্দোবস্ত করা। আম্রুত ২.০ এবং স্বচ্ছ ভারত অভিযান - এই দুটো প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত সুন্দর মিশন। আজ সারা ভারতবর্ষ সহ আমাদের রাজ্যেও এই দুটো মিশনের সফল বাস্তবায়ন হচ্ছে। এখন বাইরে থেকেও মানুষ আসলে আগরতলা শহরের সৌন্দর্য দেখে প্রশংসা করেন।
আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে মার্গ দর্শন করছেন সেভাবেই আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি। যদিও উন্নয়ন নিয়ে নিন্দুকেরা অনেক কিছু বলে থাকেন। মানুষ এখন বুঝতে পারছেন যে নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দ্যতার জন্য যা যা দরকার এই সরকার করে চলছে। আজ পুর নিগম এলাকায় আম্রুত ২.০ স্কিমে নগরোন্নয়ন দপ্তরের অধীনে ত্রিপুরা জল বোর্ডের বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন একটা উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। রাজ্য সরকার প্রতিনিয়ত একের পর এক উন্নয়নমূলক কাজ করে চলছে। ১১১.৯২ কোটি অর্থাৎ প্রায় ১১২ কোটি টাকার প্রকল্প রূপায়ণ করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো বলেন, জল মানুষের অন্যতম একটা মৌলিক চাহিদা। জল ছাড়া কোন অবস্থায় মানুষ বাঁচতে পারে না। আর আজকের এই উদ্বোধনের মাধ্যমে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে সমস্ত অংশের মানুষের কাছে একটা বার্তা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। মানুষ এখন আমাদের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখছেন। জল বোর্ড হওয়ার সুবাদে নাগরিকদের যথাযথ স্বাচ্ছন্দ্য রক্ষায় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই দপ্তর কাজ করছে। মানুষের সমস্যাগুলি যাতে ১০০% নিরসন করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। সারা ভারতবর্ষের মধ্যে ত্রিপুরায় মাটিতে জলের স্তর অনেক বেশি (উপরে) রয়েছে। যা অন্যান্য মূল ভূখণ্ডে এই সুবিধা নেই। এর পাশাপাশি বৃষ্টির জলকে যথাযথ উপায়ে সংরক্ষনের জন্যও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা চাই আগরতলা শহরকে একটা পরিবেশ বান্ধব ও নাগরিক বান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তোলার। সেই সঙ্গে রাজ্যের অন্যান্য আরো ১৯টি নগর পঞ্চায়েত ও পুর এলাকাতেও এধরণের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আজ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডিপ টিউবওয়েল, মোডিফাইড আয়রন রিমুভ্যাল প্ল্যান্ট, প্যাকেজ টাইপ আয়রন রিমুভ্যাল প্ল্যান্ট এবং প্রায় ২০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপ লাইন সম্প্রসারনের মাধ্যমে ১৬,২২৪টি বাড়িতে নতুনভাবে পানীয় জলের সংযোগ আজকে উদ্বোধন হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে নাগরিকদের উন্নত জীবন মান নিশ্চিত করা। ২০১৯ সাল থেকে আগরতলা শহর এলাকায় অনেক পুকুর, লেইক, জলাশয় সংস্কার ও উন্নয়ন করা হয়েছে। যদিও সেটা অনেকের চোখে ধরা পড়ছে না। ডাঃ সাহা জানান, টুডা'র মাধ্যমে একাধিক টাউনশিপ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। গত ২৯ আগস্ট একটি প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে। প্রায় ৪৮টি ফ্ল্যাট উদ্বোধনের আগে বুকিং হয়ে যায়। ভগৎ সিং যুব আবাস এলাকাতেও প্রায় ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৭২টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। যা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুব সুলভ মূল্যে সেই ফ্ল্যাট গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। টুডা'র মাধ্যমে আগরতলায় একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে চাইছে সরকার। টুডা'র মাধ্যমে লাইট হাউজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। খুব সম্ভব কিছুদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের লাইট হাউজ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। জনসাধারণের মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরবর্তী উড়ালপুল তৈরির চিন্তাভাবনা করছে সরকার। গায়ের জোরে কিছু করা হবে না। পুরাতন মোটরস্ট্যান্ডে নির্মীয়মান মাল্টি লেভেল কার পার্কিং এ একটি স্টার হোটেল খোলার প্রক্রিয়া চলছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, ডেপুটি মেয়র মনিকা দাস দত্ত, পুর নিগমের সেন্ট্রাল জোনের চেয়ারম্যান রত্না দত্ত, নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং, ত্রিপুরা জল বোর্ডের সিইও মিহির কান্তি গোপ সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও পদস্থ আধিকারিকগণ।
0 মন্তব্যসমূহ