Advertisement

Responsive Advertisement

অর্গানিক কৃষিতে বিশ্ববাজারে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলছে ত্রিপুরা: কৃষি মন্ত্রী





আগরতলা, ১৮ নভেম্বর : অর্গানিক কৃষি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ সহযোগিতার ক্ষেত্রে ত্রিপুরা ও আরব বিশ্বের মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে ত্রিপুরা সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ত্রিপুরা অর্গানিক মিশনের অনুপ্রেরণামূলক সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন।
তিনি ১৭–১৯ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অনুষ্ঠিত মিডল ইস্ট ন্যাচারাল অ্যান্ড অর্গানিক প্রোডাক্টস এক্সপো (MENOPE) ২০২৫ পরিদর্শন করেন। 
বিশ্বজুড়ে শীর্ষ অর্গানিক উৎপাদক, ক্রেতা, বিনিয়োগকারী, প্রযুক্তি উদ্ভাবক ও সরকারি প্রতিনিধিদের মিলনমেলায় ত্রিপুরার অর্গানিক সম্ভাবনা প্রদর্শনের এ উদ্যোগ ব্যাপক সাড়াও ফেলে।
MENOPE ২০২৫–এ ত্রিপুরার অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক দর্শকদের নজর কাড়ে। 
রাজ্যের জি আই-স্বীকৃত কুইন আনারস, কাঁঠাল , সুগন্ধি কালিখাসা ও হরিনারায়ণ ধান, বার্ডস আই চিলি, সুগন্ধি গন্ধরাজ লেবু, সাদা তিল ও কাউন (ফক্সটেইল মিলেট) তাদের উচ্চগুণমান, স্বাদ ও রপ্তানিযোগ্যতার জন্য প্রশংসা কুড়ায়।
GCC অঞ্চল, ইউরোপ, জাপান, কোরিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আমদানিকারক ও বৈশ্বিক রিটেইলাররা এসব পণ্য সংগ্রহে আগ্রহ দেখিয়ে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করে।
বিশ্ববাণিজ্য, উদ্ভাবন ও অংশীদারিত্বের এই মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক আসরে নিজের বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বে ত্রিপুরা আজ দেশের অন্যতম অগ্রসর অর্গানিক কৃষি রাজ্য হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে আমাদের ২৬,৪০০ হেক্টর ভূমি সার্টিফায়েড অর্গানিক চাষের আওতায়, যেখানে ২৬,৮০০–এরও বেশি কৃষক প্রচলিত চাষ থেকে টেকসই পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হয়েছেন। কৃষকদের ক্ষমতায়ন ও মূল্য শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করতে আমরা কাজ করছি।
তিনি জানান, রাজ্যজুড়ে ৫৩টি অর্গানিক কৃষক উৎপাদক কোম্পানি (FPC) গঠিত হয়েছে। এই FPC-গুলোই আমাদের কৃষিখেত ও বৈশ্বিক বাজারের মধ্যে সংযোগ তৈরি করছে, যেখানে সংগঠন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, ব্র্যান্ডিং ও সরাসরি বিপণনের মতো কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। আমাদের জি আই-ট্যাগযুক্ত কুইন আনারস বিশ্ববিখ্যাত ১৬ থেকে ২০ ব্রিক্স প্রাকৃতিক মিষ্টত্বের কারণে এটি টেবল ফ্রুট ও ডেজার্টের জন্য আদর্শ। আর কিউ জাতের আনারস (১০–১৩ ব্রিক্স) প্রক্রিয়াজাত শিল্পের জন্য উপযুক্ত।
ভাষণে, কৃষি মন্ত্রী গন্ধরাজ লেবু, সুগন্ধি কালিখাসা ধান, স্টিকি রাইস (স্থানীয় ব্রাউন ভ্যারাইটি) এবং হ্যাঙ্গার প্রজাতির কালো চালের কথা উল্লেখ করেন। 
তিনি জানান কালো চাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম—যা স্বাস্থ্যসচেতন বৈশ্বিক বাজারে এর চাহিদা বাড়াচ্ছে। আমাদের অর্গানিক চাষের আওতায় আদা, হলুদ, বার্ডস আই চিলি, তিল ও কাউনও রয়েছে যা ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপক রপ্তানি সম্ভাবনা রাখে।
তিনি বলেন,ভারতের অর্গানিক খাদ্য বাজার প্রতিবছর ১৫–২০% হারে বাড়ছে। জৈববৈচিত্র্য, প্রাচীন কৃষিজ্ঞান ও সরকারি সহায়তার সমন্বয়ে ভারত বিশ্ব জৈব রপ্তানি বাজারে নেতৃত্ব নেওয়ার পথে।
মন্ত্রী ত্রিপুরার বিখ্যাত আগর উড, আগর অয়েল, আগর পারফিউম ও বাঁশ করুল কথাও তুলে ধরেন এবং বলেন এগুলো প্রকৃতির সম্পদ। আমরা বিশ্ব বিনিয়োগকারী, আমদানিকারক ও অংশীদারদের আহ্বান জানাই ত্রিপুরায় আসুন, সহযোগিতা করুন, বিনিয়োগ করুন এবং ত্রিপুরা অর্গানিক এর সঙ্গে উন্নতির পথে হাঁটুন।
সবশেষে মন্ত্রী আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের ত্রিপুরায় আগামী জানুয়ারি ২০২৬-এ অনুষ্ঠিতব্য অর্গানিক বায়ার–সেলার মিট-এ অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান এবং রাজ্যের দ্রুত বর্ধনশীল জৈব খাতে বিনিয়োগের সুযোগগুলো অন্বেষণ করতে উৎসাহিত করেন।
ত্রিপুরা অর্গানিক মিশনের মিশন ডিরেক্টর রাজীব দেব বর্মা এ সফরে মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ