আগরতলা, ১৪ নভেম্বর : এআরসি পদ্ধতিতে আলু বিষয়ে একদিনের এক স্বচেতনতা শিবির ও কর্মশালা জিরানিয়া কৃষি মহকুমায় অনুষ্ঠিত হলো শনিবার।
জিরানিয়ার কৃষিক বন্ধু কেন্দ্রে আয়োজিত এই কর্মশালায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জিরানিয়া পঞ্চায়ের সমিতির চেয়ারম্যান প্রীতম দেবনাথ। সেই সঙ্গে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যিক উদ্যান ও বাগিচা ফসল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ড রাজীব ঘোষ। পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন এই গবেষণা কেন্দ্রের এসিস্টেন্ট ডিরেক্টর অভিনাস দাস, জিরানিয়া কৃষি মহকুমায় কৃষি তত্ত্বাবধায়ক সৌমেন দাস। আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্রের ত্রিপুরা সেন্টারের তরফে আধিকারিক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রঙ্গনাথ ও সোম প্রকাশ আচার্য্য। এ দিনের এই কর্মশালায় ৪০ জন কৃষক অংশ নেয়। জিরানিয়া পঞ্চায়ের সমিতির চেয়ারম্যান প্রীতম দেবনাথ বলেন, রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষদের বিশেষ করে কৃষকদের উন্নয়নের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে কৃষকদের আর্থিক অবস্থা উন্নতি হয়েছে।
ত্রিপুরায় কৃষিক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। এর বড় অংশজুড়ে রয়েছে এ আর সি আলু চাষের বিস্তার। উন্নত কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত এই আলুর জাত ত্রিপুরার আবহাওয়ার সঙ্গে এতটাই খাপ খাইয়ে নিয়েছে যে, আজ এটি অঞ্চলের অন্যতম লাভজনক চাষে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র উৎপাদনের জন্যই নয়, বরং এর বহুমুখী সুবিধা কৃষকদের নতুন করে আশা দেখাচ্ছে।
ড. রাজীব ঘোষ বলেন, এ আর সি আলুগুলো কম সময়ের মধ্যে বড় হয়, রোগ কম ধরে এবং পাহাড়ি এলাকা থেকে সমতল মাঠ—সব জায়গাতেই সমানভাবে জন্মাতে পারে। ফলে পুরো রাজ্যজুড়ে এর চাষ বেড়েছে দ্রুতগতিতে। বিশেষ করে শীতের শুরুতে বপন করলে ৭৫ থেকে ৯৫ দিনের মধ্যেই ফসল তোলা যায়, যা কৃষকদের জন্য বড় সুবিধা। একই জমিতে বছরে দুইবার পর্যন্ত আলু চাষের সুযোগ তৈরি হওয়ায় জমির উৎপাদনক্ষমতাও বেড়ে গেছে।
এ আর সি আলুর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সাধারণ আলু চাষে লেট ব্লাইট বা ভাইরাসজনিত রোগের আক্রমণে ফসলের ক্ষতি হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এ আর সি জাতের আলুগুলোর দেহকাঠামো শক্ত হয় এবং রোগপোকার প্রতি সহনশীলতা বেশি। ফলে কীটনাশক বা ছত্রাকনাশকের ব্যবহারে খরচ কমে যায়। কৃষকরা স্বাভাবিকভাবেই কম খরচে বেশি উৎপাদনের সুযোগ পান। পাশাপাশি জমির স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়, কারণ অতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে না।
ত্রিপুরার কৃষকদের বড় অংশ সমতল অঞ্চলের পাশাপাশি পাহাড়ি বা ঢালু জমিতে কৃষিকাজ করেন। এসব জায়গায় মাটির উর্বরতা একরকম নয়। কিন্তু এ আর সি আলু বিভিন্ন ধরনের মাটিতে সমানভাবে জন্মাতে সক্ষম। কম উর্বর জমিতেও এই জাত ভালো ফলন দেয়। তাই সীমিত সম্পদ থাকা কৃষকরাও সহজে এই চাষে নেমে আসছেন। অন্যদিকে, আলুর কন্দ সাধারণত ছোট ও শক্ত হওয়ায় বীজের অপচয় অনেক কম। খুব সামান্য বীজের সাহায্যে বড় পরিমাণ চারা মিলছে, যা বীজ খরচ কমিয়ে কৃষকদের লাভ বাড়াচ্ছে।
এই আলুগুলোর বাহ্যিক গঠন বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আকারে সমান, খোসায় দাগ কম এবং স্টার্চের মান উন্নত হওয়ায় স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বাইরের বাজারেও ত্রিপুরার এ আর সি আলু প্রচুর দামে বিক্রি হয়। আবার পরিবহন ও সংরক্ষণেও সুবিধা হওয়ায় কৃষকরা পুরো মৌসুম পরে উচ্চমূল্যে বিক্রির সুযোগ পান। আলু পচে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকায় ক্ষতির ঝুঁকিও তুলনামূলকভাবে কম।
ত্রিপুরা সরকারের কৃষি দপ্তর এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিতভাবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, উন্নতমানের বীজ ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সহায়তা দিচ্ছে। ফলে নতুন কৃষকরাও দ্রুত এই চাষ শিখে নিচ্ছেন এবং স্বল্পসময়ে বেশি লাভ করতে পারছেন। ধান কাটার পর একই জমিতে আলু এবং আলুর পরে ডাল বা আরও কোনও সবজি চাষের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় বছরে জমির উৎপাদন দ্বিগুণ পর্যন্ত হচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ