আগরতলা, ১৫ নভেম্বর: স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় ও সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তুলতে মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহা যখন দায়িত্ব নেন, তখনই তিনি স্পষ্ট করে দেন—স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নই হবে তাঁর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে আধুনিকায়ন, চিকিৎসকদের উৎসাহ দেওয়া এবং প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মানবিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য একের পর এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তিনি। বড় হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে উন্নত সরঞ্জাম, বাড়তি জনবল ও আরও সুসংহত পরিষেবা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তায় অনুপ্রাণিত হয়ে চিকিৎসক সমাজ এবং স্বাস্থ্যকর্মীরাও নতুন উদ্যমে কাজে নেমেছেন। সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি মানুষের যে আস্থা একসময় কমে গিয়েছিল, তা পুনরুদ্ধারের জন্য তারা শুধু নিয়মমাফিক দায়িত্বই পালন করছেন না, বরং রোগীদের মানবিক দৃষ্টিতে দেখাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এই উদ্যোগের বাস্তব প্রতিফলন ধরা পড়ছে রাজ্যের নানা প্রান্তের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
আগরতলা পুর নিগমের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রমপাড়া আরবান প্রাইমারি হেলথ সেন্টারও সেই পরিবর্তনের উজ্জ্বল উদাহরণ। কিছুদিন আগেও যেখানে রোগীদের নানান অসুবিধার মুখোমুখি হতে হতো, সেখানে এখন মিলছে সুসংগঠিত, সময়নিষ্ঠ এবং পরিমিত চিকিৎসা পরিষেবা। স্থানীয় বাসিন্দা এবং রোগীদের পরিবারদের মতে, এই কেন্দ্রটি এখন সত্যিকারের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা, চিকিৎসার স্বচ্ছতা—সব ক্ষেত্রেই এসেছে দৃশ্যমান উন্নতি।
এই বদলের পিছনে অন্যতম ভূমিকা রয়েছে মেডিকেল অফিসার ইন-চার্জ ডা. রণিতা ঘোষের। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি সেন্টারটিকে আরও রোগীবান্ধব করে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে সেন্টারের পরিবেশ যেমন বদলে গেছে, তেমনই বদলে গেছে সেবার মানও। রোগীদের বক্তব্য—ডা. রণিতা ঘোষের আচরণ, যত্ন এবং রোগীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ এই কেন্দ্রটিকে আলাদা মর্যাদা এনে দিয়েছে। আগের তুলনায় বেশি মানুষ এখন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসছেন, এবং পাচ্ছেন প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পরিষেবা।
ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য সহায়ক, টিকাদান কর্মী—সকলের সমন্বয়ে সেন্টারটি আজ একটি সুসংগঠিত টিম হিসেবে কাজ করছে। প্রতিদিন সকাল থেকেই শুরু হয় নিয়মিত চেকআপ, মাতৃসেবা, শিশুস্বাস্থ্য নজরদারি, ভ্যাকসিনেশন এবং সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা। রোগীরা জানিয়েছেন, আগে যেখানে চিকিৎসার জন্য অকারণে দেরি হতো বা ব্যস্ততার কারণে কথা বলার সময় পাওয়া যেত না, এখন সেখানে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা সময় দিচ্ছেন মনোযোগ দিয়ে। ফলে রোগীদের মনেও তৈরি হচ্ছে এক ধরনের আশ্বাস—সরকারি স্বাস্থ্যসেবাও হতে পারে মানবিক, আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য।
এত উন্নতির পর স্থানীয় বাসিন্দা এবং রোগীদের পরিবারের সদস্যরা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহাকে। তাদের মতে, সরকারের সদিচ্ছা, সঠিক পরিকল্পনা ও তদারকির ফলেই এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সেন্টারের সমস্ত কর্মীদের, যাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা আশ্রমপাড়ার মানুষকে দৈনন্দিন চিকিৎসার জন্য নতুন ভরসার আলো দেখিয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবায় এই ইতিবাচক পরিবর্তন শুধু একটি কেন্দ্রের সাফল্য নয়; এটি রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নমুখী পদক্ষেপের প্রতীক। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে গড়ে উঠছে এক নতুন স্বাস্থ্যব্যবস্থা—যেখানে মানুষের প্রয়োজনই প্রধান, আর সেবাই মূল লক্ষ্য। আর আশ্রমপাড়া আরবান প্রাইমারি হেলথ সেন্টারের এই নতুন রূপ সেই বৃহত্তর পরিবর্তনেরই জীবন্ত প্রমাণ।
0 মন্তব্যসমূহ