Advertisement

Responsive Advertisement

নতুন প্রাণের স্পন্দন: কুশান চৌধুরীর জীবন জয়ের গল্প




আগরতলা, ৬ নভেম্বর : ধলাই জেলার গণ্ডাতুইসা ব্লকের এমআর দাস পাড়া। এই প্রত্যন্ত গ্রামটিই ছিল পাঁচ বছর বয়সী কুশান চৌধুরীর বাসস্থান। কিন্তু ছোট গ্রাম আর বাবার অভাবকে (প্রয়াত হরকৃষ্ণ চৌধুরী) ছাপিয়েও এক কঠিন সত্য কুশানের জীবনকে ঢেকে রেখেছিল—সে ছিল কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ (CHD) বা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত।  
পাঁচ বছরের এক শিশুর চোখে যে উজ্জ্বলতা, চঞ্চলতা থাকার কথা, তা কুশানের মধ্যে দেখা যেত না। দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট—এই ছিল তার দৈনন্দিন সঙ্গী। কিন্তু তার মা ও পরিবারের সদস্যরা হাল ছাড়েননি।   
সঠিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ছিল সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়। গণ্ডাতুইসা মহকুমা হাসপাতালের রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম’র সদস্যরা (RBSK MHT) প্রথম স্ক্রিনিং করেন। এই প্রাথমিক পরীক্ষাটিই নিশ্চিত করে যে তার হৃদপিণ্ডে গুরুতর সমস্যা রয়েছে।এরপর ১১/০৬/২০২৫ তারিখে ধলাই-এর ডিইআইসি (DEIC) কেন্দ্রে তার ইকোকার্ডিওগ্রাফি (ECHO) পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এই পরীক্ষাটি শিশুর হৃদপিণ্ডের ত্রুটি এবং অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তার মাত্রা স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলে। 
সময় দ্রুত চলছিল। পরিবারটির আর্থিক অবস্থা দুর্বল হলেও রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম-এর উদ্যোগের সাহায্যে কুশানকে দেশের সেরা চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো।
সুদূর চেন্নাইয়ের এপোলো চিলড্রেন হসপিটালে কুশানের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলো। এই উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রই ছিল তার নতুন জীবনের প্রবেশদ্বার। অবশেষে সেই ঐতিহাসিক দিনটি এলো—১২ই অক্টোবর, ২০২৫। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি অভিজ্ঞ দল কুশান চৌধুরীর জটিল হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করলেন। এটি ছিল এক দীর্ঘ, চ্যালেঞ্জিং প্রক্রিয়া, কিন্তু চিকিৎসকদের দক্ষতা এবং পরিবারের অদম্য জেদ জয়ী হলো।
অস্ত্রোপচারের পর, কুশানকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। ধীরে ধীরে তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে থাকে। যে শিশুটি সামান্য হাঁটাচলাতেও ক্লান্ত হয়ে যেত, আজ তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক, ঠোঁটে লেগে আছে অনাবিল হাসি। সে এখন সম্পূর্ণভাবে সুস্থ এবং গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসেছে।
কুশান চৌধুরীর এই সাফল্যের গল্পটি কেবল একটি শিশুর সুস্থ হয়ে ওঠার কাহিনি নয়, এটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেয় যে, সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়, সরকারী স্বাস্থ্য কর্মসূচির সহায়তা এবং উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার সমন্বয়ে জটিল রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রয়াত বাবার স্বপ্নকে সত্যি করে, পাঁচ বছরের কুশান আজ এক নতুন, সুস্থ ও প্রাণবন্ত জীবন ফিরে পেল। তার এই জীবন-যুদ্ধ জয়, বহু পিছিয়ে পড়া শিশুর পরিবারের কাছে এক নতুন আশার আলো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ