আগরতলা, ৪ নভেম্বর: রাজ্যের উৎপাদিত অর্গানিক কৃষিপণ্যকে দেশের অন্যান্য প্রান্ত এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রসারিত করতে এবং রাজ্যের কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ মূল্য নিশ্চিত করতে আগরতলায় অনুষ্ঠিত হলো এক বিশেষ আলোচনা চক্র। রাজধানীর অরুন্ধতীনগর এলাকার স্টেট এগ্রিকালচার রিসার্চ স্টেশনে আয়োজিত এই দিনব্যাপী কর্মশালায় মূলত রাজ্যে উৎপাদিত জৈব আনারস, লেবু, কাঁঠাল এবং কালিখাসা চালের জন্য আকর্ষণীয় ও উদ্ভাবনী প্যাকেজিং পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এই কর্মশালার লক্ষ্য ছিল ত্রিপুরার অর্গানিক পণ্যকে আরও ব্র্যান্ডভিত্তিক ও বাজারমুখী করে তোলা, যাতে কৃষকরা তাদের পরিশ্রমের যথাযথ মূল্য পান এবং আর্থিকভাবে আরও লাভবান হন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ প্যাকেজিং (মুম্বাই)-এর প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ড. এন. সি. সাহা, অর্গানিক ফার্মিং ডেভলপমেন্ট এজেন্সির মিশন ডিরেক্টর রাজীব দেববর্মা, রাজ্যিক উদ্যান ও বাগিচা ফসল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ড. রাজীব ঘোষ, স্টেট এগ্রিকালচার রিসার্চ স্টেশনের জয়েন্ট ডিরেক্টর ড. উত্তম সাহা, এবং নিরামেক-এর প্রতিনিধি সুভাষ ভট্টাচার্য। এছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন ফার্মার প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন (এফ পি ও)-এর প্রতিনিধিরাও সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
আলোচনায় বক্তারা উল্লেখ করেন, অর্গানিক পণ্যের মান কেবল তার উৎপাদন প্রক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়; পণ্যটি কীভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। প্যাকেজিং শুধু পণ্য সংরক্ষণের মাধ্যম নয়, এটি এখন এক গুরুত্বপূর্ণ বিপণন কৌশল। সঠিক ও দৃষ্টিনন্দন প্যাকেজিং করলে দেশ-বিদেশের বাজারে অর্গানিক পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা অনেকগুণ বাড়তে পারে। অধ্যাপক ড. এন. সি. সাহা বলেন, “অর্গানিক পণ্যের গুণমান ও আকর্ষণকে যদি প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারেও ত্রিপুরার পণ্যের পরিচিতি ও চাহিদা উভয়ই বৃদ্ধি পাবে।”
কৃষি সচিব অপূর্ব রায় জানান, রাজ্য সরকার শীঘ্রই অর্গানিক পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য একটি বিশেষ ভ্যালু চেইন তৈরির পরিকল্পনা করছে। তাঁর ভাষায়, “আমাদের উদ্দেশ্য শুধু উৎপাদন বাড়ানো নয়, বরং কৃষক ও ভোক্তার মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করা। উন্নত মানের প্যাকেজিং সেই সেতুবন্ধনের প্রথম ধাপ।”
বক্তব্য রাখতে গিয়ে ড. রাজীব ঘোষ বলেন, কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে অন্যের সেলফ লাইফ যাতে দীর্ঘ হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রপ্তানি করা পণ্যগুলোর সেলফল লাইফ দীর্ঘ হলে তাও তবেই কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন বলে জানান। তাই এদিকে গুরুত্ব দেওয়ার আহবান রাখেন তিনি।
অর্গানিক ফার্মিং ডেভলপমেন্ট এজেন্সির মিশন ডিরেক্টর রাজীব দেববর্মা বলেন, কৃষকদের উৎপাদিত অর্গানিক পণ্যগুলো যাতে দেশ-বিদেশের ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং কৃষকরা যাতে আর্থিক ভাবে আরো বেশি লাভবান হন এর জন্য তারা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এরই অংশ হিসেবে তারা সারা বছর ধরে নানা কর্মসূচির আয়োজন করে থাকেন কৃষকদের নিয়ে।
দিনব্যাপী আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং উপকরণ ব্যবহার, টেকসই সংরক্ষণ ব্যবস্থা, পণ্যের ব্র্যান্ডিং এবং আন্তর্জাতিক মানের লেবেলিং পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় করেন। নিরামেকের প্রতিনিধি সুভাষ ভট্টাচার্য বলেন, “বর্তমান যুগে প্যাকেজিং পণ্য বিক্রির অন্যতম শক্তি। ভোক্তা এখন সচেতন; সে প্যাকেট দেখেই পণ্যের গুণমান বিচার করে।”
আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়, রাজ্যের বিভিন্ন ফার্মার প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে একটি ‘অর্গানিক ব্র্যান্ডিং ও প্যাকেজিং ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট সেল’ গঠন করবে, যা কৃষকদের সহায়তা করবে প্যাকেট ডিজাইন, ব্র্যান্ডিং এবং বিপণন কৌশল নির্ধারণে।
ত্রিপুরার কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যের উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়া জৈব আনারস, লেবু, কাঁঠাল এবং কালিখাসা চাল উৎপাদনের জন্য আদর্শ। সঠিক দিকনির্দেশনা, আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী প্যাকেজিং ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ত্রিপুরা খুব দ্রুতই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অর্গানিক পণ্যের মানচিত্রে বিশেষ স্থান করে নিতে সক্ষম হবে।
0 মন্তব্যসমূহ