Advertisement

Responsive Advertisement

মাশরুম চাষ করে রাজ্যবাসীের সামনের নজির গড়লেন গ্রামের গৃহবধূ মন্টি

আগরতলা, ২৪ফেব্রুয়ারী : নিজের সন্তানদের মুখে দুইবেলা খাবার তোলে দিতে পারতেন না বলে অনাথ আশ্রমে পাঠাতে বাধ্য হয়ে ছিলেন যে মহিলা, এখন তিনি নিজে প্রতি মাসে ৩০থেকে ৪০হাজার টাকা রোজগার করছেন। কথা গুলি শুনতে সিনেমার চিত্রনাট্য মনে হলেও ১০০শতাংশ সত্য। আগরতলার পার্শবর্তী রাণীখামার এলাকার গৃহবধূ মন্টি দেবনাথ এই সাফল্য দেখিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন।
রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ১২কিমি দূরে রাণীখামার এলাকার ঝরঝরিয়া গ্রাম। এই গ্রামের অন্য দশ জন গৃহবধূর মত এক অতি সাধারণ গৃহবধূ মন্টি দেবনাথ। স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে অভাবের সংসার। মন্টি বলেন, তার স্বামীর বিশেষ কোন রোজগার না থাকায় পরিবারের সদস্যদের মুখে ভাত তোলে দেওয়ার জন্য মন্টিরও চিন্তার অন্ত ছিল না। পরিবারের হাল ধরার জন্য মন্টি প্রতিদিন রাবার বাগানের ট্যাপিং এর কাজ করতো। এই কাজে মজুরি তুলনা মূলক ভাবে কম। সারা মাস কাজ করে মজুরী ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা । তাও আবার বছরের সর্বোচ্চ ১০মাস কাজ করার সুযোগ থাকে। শুখা মরশুমে যখন রাবার গাছের পাতা ঝরে যায় তখন বাগানে কাজ বন্ধ থাকে। ফলে রোজগারও বন্ধ তাকে। ফলে তখন অন্য কাজের সন্ধ্যানে বের হতে হয়। এই সব কারণে মন্টির ঘরে অভাব ছিল নিত্য সঙ্গী। অভাবের তাড়নায় নিজের সন্তানদের অনাথ আশ্রমে পাঠিয়ে দেন। এই আর্থিক কঠিন অবস্থার মাঝেই ২০২০ সালের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে মাশরুম চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষন নেন ও তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। সেখানে তারা মোট ৬০জন প্রশিক্ষন নিয়ে ছিলেন। প্রশিক্ষণ শেষে নিজ হাতে বাড়িতে মাশরুম চাষ শুরু করেন। কিছুদিন পর নতুন মাশরুম গজিয়ে উঠে। কিন্তু এর পরও চিন্তার শেষ নেই, এই গুলি বিক্রি করবেন কোথায়, এই ভেবে। পরে নিজেই এগুলি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন আশেপাশের এলাকায়। এভাবে ঘুরে ঘুরে তিন দিনে প্রায় ৩হাজার ৫০০টাকার মাশরুম বিক্রি করেন। এর পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি আর রাবার বাগানে কাজ করবেন না, আরো বড় আকারে মাশরুম চাষ করবেন। এর পর মাইক্রো ফিনান্স কোম্পানি থেকে ঋণ ২লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে ঘর এবং প্রয়োজনিয় সামগ্রী কিনে চাষ শুরু করেছেন।
এখন তার ঘরে প্রায় ২হাজার প্যাকেট রয়েছে। এগুলি থেকে প্রতিদিন ৭কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১২কেজি পর্যন্ত মাশরুম সংগৃহ হয়। তার এখানে মূলত দুই ধরণের মাশরুম চাষ হয়। এগুলি হলো ওয়েস্টার এবং মিল্কি মাশরুম। ওয়েস্টার প্রতি কেজি ২০০টাকা ও মিল্কি মাশরুম প্রতি কেজি ৪০০টাকা দামে বিক্রি করেন। বাজারের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম দামে বিক্রি করায় মানুষের মধ্যে তার মাশরুমের চাহিদা অনেক বেশি রয়েছে। মূলত বিভিন্ন অফিস সহ বাড়ি ঘরে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন তাই বিক্রি নিয়ে কোন সমস্যা হয় না। প্রতিদিন যে পরিমাণ উৎপাদিত হয় তার সবটাই বিক্রি হয়ে যায়। সব মিলিয়ে মাসে এখন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করছেন বলেও জানান।
ইতিমধ্যে তিনি মাইক্রো ফিনান্স থেকে নেওয়া ঋণের বেশিরভাগ অংশ মিটিয়ে নিয়েছেন এবং ছেলে মেয়েদের অনাথ আশ্রম থেকে বাড়ি নিয়ে এসেছেন। এখন মাশরুম চাষের জন্য প্রায় প্রতিদিনই প্রচুর পরিমান খড় কাটতে হয়। তাই খড় কাটার যন্ত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনেছেন। আগামী দিনে তিনি মাশরুম চাষের পরিমান আরো বৃদ্ধি করতে চান। রাজ্যে মূলত তিনি ধরণের মাশরুম চাষ হয়, এগুলি হলো এগুলি হলো ওয়েস্টার, মিল্কি এবং বটম মাশরুম। এর মধ্যে দুই ধরণের মাশরুম তিনি এখন চাষ করছেন। বাকি বটম মাশরুমও চাষ করতে চান। এই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছেন বলে জানান।
মাশরুম চাষ বৃদ্ধি করলে তিনি নিজে অন্যদের জন্য কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হবে, একাধিক মানুষের প্রয়োজন হবে। ইতি মধ্যে তিনি মাস্টার ট্রেনার হিসেবে অন্যদের মাশরুম চাষের কলা কৌশল শেখাচ্ছেন। ঐশী বাণী সোসাইটির পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষদের স্বনির্ভর করে তোলার জন্য মাশরুম চাষের যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তাতে মাস্টার ট্রেনার হিসেবে কাজ করছেন মন্টি দেবনাথ । তার মত রাজ্যের অন্যান্য মহিলারাও মাশরুম চাষের মধ্য দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন বলেও জানান মন্টি দেবনাথ। তার এই সাফল্যের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে একাধিক সম্মান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এখন তার স্বামী গণেশ দেবনাথও আগরতলা পুরনিগমে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ পেয়েছেন। নিজের কাজের পাশাপাশি তার স্ত্রীর এই মাশরুম চাষের কাজে তিনি সহায়তা করছেন। তিনি নিজে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মাশরুমগুলি বিক্রি করে থাকেন বলে জানিয়েছেন গণেশ। 
 কাজে লাগিয়ে চাইলেই মানুষ যে অনেক কিছুই করতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ মন্টি দেবনাথ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ