আগরতলা, ২৩ ডিসেম্বর: পরিকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে বর্তমান সরকার। এজন্য রাজ্য বাজেটে আর্থিক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামীদিনে নিউ ত্রিপুরা তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। ত্রিপুরায় এখন অধিক পরিমাণে ইউপিআই ভিত্তিক লেনদেন হচ্ছে।
আজ খোয়াইয়ের ধলাবিল এলাকায় খোয়াই জেলা হাসপাতাল ও ড্রাগস ডি অ্যাডিকশন সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, কিছুদিন আগে আমি ঘোষণা করেছিলাম যে জনপ্রতিনিধি যিনি যে পার্টিরই হোক না কেন উনাকে সরকারি প্রোগ্রামে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। গতকালও কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সঙ্গে কথা হয়। উচ্চ পর্যায়ের টাস্ক ফোর্স আমাকে চেয়ারপার্সন হিসেবে গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চল তথা অষ্টলক্ষীর উন্নয়নের জন্য ভার দিয়েছে। সমস্ত উত্তর পূর্বাঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীদের এক একজনকে চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের দায়িত্বে ছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তিনি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আমাকে সেই দায়িত্ব সপে দেওয়া হয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শিখিয়েছেন যে কাজের কোন বিকল্প নেই। মানুষের জন্য ঘরের বন্দোবস্ত করা, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা, রাস্তাঘাট বানিয়ে দেওয়া - এরমধ্যে কিসের রাজনীতি করা? রাজনীতি না করেও রাজনীতি করা যায়। উন্নয়নের জন্য কোন রাজনীতির দরকার হয় না।
আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গতবারের বাজেট প্রায় ২৭,০০০ কোটি টাকা ছিল। আর ২০২৫ - ২৬ অর্থবর্ষে ২৭,০০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩২,০০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। যেখানে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রচুর পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। যেটা খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলছেন পরিকাঠামো উন্নয়ন না হলে প্রকৃত উন্নয়ন হবে না। কিছুদিন আগে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে ইনভেস্টর সামিটে আমি অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে উদ্বোধনের পর ৩০,০০০ কোটি টাকার মৌ হয়েছে। এরমধ্যে শুধু ত্রিপুরার জন্য প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকার মৌ হয়েছে। কারণ ত্রিপুরায় এখন শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আজ এখানে প্রায় ১১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ২টি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। যার আনুমানিক ব্যয় মূল্য প্রায় ১১৩ কোটি টাকা। খোয়াই জেলার এসব প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য রাজ্য বাজেট থেকে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার অধিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর যন্ত্রপাতি কেনার জন্য আরও ১০ কোটি টাকা আলাদাভাবে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক রাজ্যের সবগুলি জেলায় একটা করে ড্রাগস ডি অ্যাডিকশন সেন্টার খোলা হচ্ছে। এই সরকার সমর্পণের ভাবনা নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিউ ইন্ডিয়া গড়ে তোলার কথা বলছেন। আমরা বলছি এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলার কথা। আর আগামীদিনে আমরা নিউ ত্রিপুরা তৈরি করবো। তবেই নিউ ইন্ডিয়া গড়ে তোলা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশকে ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলছেন। এরআগে ১২ জুন, ২০২৫ এ খোয়াই জেলার বাইজাল বাড়িতে ৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছিল। এজন্য ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১০ কোটি টাকা। বর্তমান সরকার একের পর এক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে।
তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জানান, জিএসডিপি এবং মাথাপিছু আয়ের নিরিখে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। উন্নয়নমূলক কাজের নিরিখে নীতি আয়োগ ত্রিপুরাকে ফ্রন্ট রানার স্টেট হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিছুদিন আগে দেশের তৃতীয় পূর্ণ সাক্ষর রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইউনেস্কোর গাইডলাইন অনুসারে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কাজের নিরিখে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় পুরস্কার ও সম্মান লাভ করছে ত্রিপুরা। প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান দুই পর্যায়ে করা হয় রাজ্যে। ই অফিস করা হয়েছে রাজ্যে। এতে কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ত্রিপুরায় এখন অধিক পরিমাণে ইউপিআই ভিত্তিক লেনদেন হচ্ছে। রাজ্যে আমার সরকার পোর্টাল চালু করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে রাজ্য। এখন আমাদের রাজ্যের মেডিকেল কলেজগুলিতে এমবিবিএস এর আসন সংখ্যা রয়েছে ৪০০টি। আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজে ৬৩টি আসন হয়েছে। জিবি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ব্লক এবং কমিউনিকেবল ডিজিস সেন্টার ও দুটি স্পেশাল ওয়ার্ডের জন্য কিছুদিন আগে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা বিধানসভার মুখ্য সচেতক কল্যানী সাহা রায়, বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী, বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস, খোয়াই জেলা পরিষদের সভাধিপতি অপর্ণা সিংহ রায়, খোয়াই পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন দেবাশিস নাথ শর্মা, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, খোয়াই জেলার জেলাশাসক রজত পন্থ, জেলা পুলিশ সুপার রাণাদিত্য দাস সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও আধিকারিকগণ।
0 মন্তব্যসমূহ