Advertisement

Responsive Advertisement

যারা ভেবেছিলেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী, কিন্তু তাদেরও অস্তাচলে যেতে হয় : ইতিহাসের সেই স্বৈরশাসকরা







ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে—ক্ষমতা কখনোই চিরস্থায়ী নয়। তবুও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন কিছু শাসক ছিলেন, যারা মনে করতেন যতদিন তারা বেঁচে থাকবেন, ততদিনই রাষ্ট্রক্ষমতা তাদের হাতেই থাকবে। ভয়, দমন-পীড়ন, সেনাশক্তি ও ব্যক্তিপূজার মাধ্যমে তারা নিজেদের অপরাজেয় ভাবতে শুরু করেছিলেন। সাধারণ মানুষ ভয়ে মুখ বন্ধ করে থাকলেও সময়ের নিয়মে শেষ পর্যন্ত এসব স্বৈরশাসকের পতন ঘটেছে। নিচে এমনই কয়েকজন আলোচিত স্বৈরশাসকের কথা তুলে ধরা হলো।

আডলফ হিটলার (জার্মানি)
আডলফ হিটলার নিজেকে জার্মান জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নাৎসি মতাদর্শের মাধ্যমে তিনি একদলীয় শাসন কায়েম করেন এবং ভিন্নমত দমন করেন কঠোরভাবে। তার বিশ্বাস ছিল “থার্ড রাইখ” হাজার বছর স্থায়ী হবে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় এবং চারদিক থেকে চাপে পড়ে তার শাসনের পতন ঘটে। ইতিহাস তাকে চরম ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতীক হিসেবে মনে রাখে।

বেনিতো মুসোলিনি (ইতালি)
ইতালির ফ্যাসিবাদী নেতা মুসোলিনি নিজেকে আধুনিক রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ভাবতেন। তিনি গণমাধ্যম, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। কিন্তু যুদ্ধের ব্যর্থতা ও জনগণের ক্ষোভ তার শাসনের ভিত নড়বড়ে করে দেয়। শেষ পর্যন্ত জনগণই তার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।

সাদ্দাম হোসেন (ইরাক)
সাদ্দাম হোসেন লৌহহস্তে ইরাক শাসন করেছেন। রাজনৈতিক বিরোধিতা তার শাসনে সহ্য করা হতো না। নিজের ছবি ও মূর্তি দিয়ে দেশ ভরিয়ে তিনি নিজেকে অপরিহার্য করে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিনের দমননীতি, যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে তার শাসনের অবসান ঘটে।

মুয়াম্মার গাদ্দাফি (লিবিয়া)
গাদ্দাফি প্রায় চার দশক ধরে লিবিয়া শাসন করেন। তিনি নিজেকে “জনতার নেতা” দাবি করলেও বাস্তবে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল তার হাতে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল সীমিত। আরব বসন্তের ঢেউ লিবিয়ায় পৌঁছালে সাধারণ মানুষ ভয় কাটিয়ে রাস্তায় নামে এবং তার দীর্ঘ শাসনের ইতি ঘটে।

হোসনি মুবারক (মিসর)
প্রায় ৩০ বছর ধরে মিসরের ক্ষমতায় থাকা মুবারক মনে করতেন সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের সমর্থন থাকলে ক্ষমতা অটুট থাকবে। কিন্তু আরব বসন্তের সময় তরুণ সমাজ ও সাধারণ জনগণের আন্দোলনে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ভয়ের রাজনীতি একদিন যে ভেঙে পড়ে, তার বড় উদাহরণ এটি।

নিকোলাই চাউশেস্কু (রোমানিয়া)
চাউশেস্কু নিজেকে জাতির মহান নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ব্যক্তিপূজা ছিল তার শাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার অবনতি এবং দমন-পীড়নের ফলে জনগণের ক্ষোভ চরমে ওঠে। শেষ পর্যন্ত তার শাসনের আকস্মিক পতন ঘটে।

এই স্বৈরশাসকদের গল্প আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়—ভয় দিয়ে মানুষকে চুপ করিয়ে রাখা যায়, কিন্তু চিরদিন নয়। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ