Advertisement

Responsive Advertisement

এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘতম হাইওয়ে: এশিয়ান হাইওয়ে–১



এশিয়া মহাদেশের ভৌগোলিক বিস্তৃতি যেমন বিশাল, তেমনি এই মহাদেশকে এক সুতোয় গেঁথে রাখার যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিস্ময়কর। সেই যোগাযোগ ব্যবস্থার সবচেয়ে দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ হলো এশিয়ান হাইওয়ে–১ (Asian Highway 1 বা AH1)। এটি শুধু এশিয়ার নয়, বিশ্বের দীর্ঘতম আন্তর্জাতিক হাইওয়ে রুটগুলোর একটি। পূর্ব এশিয়া থেকে পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এই সড়কপথ এশিয়ার অর্থনীতি, বাণিজ্য, পর্যটন ও মানবিক যোগাযোগে এক অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে।
এশিয়ান হাইওয়ে–১ এর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ হাজার ৫৫৭ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ সড়কটি জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান অতিক্রম করে তুরস্কের সীমান্তের কাছে গিয়ে শেষ হয়েছে। অর্থাৎ পূর্ব এশিয়া থেকে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া পেরিয়ে পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত এই হাইওয়ে বিস্তৃত। এশিয়ার একাধিক ভৌগোলিক অঞ্চল, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক বলয়কে যুক্ত করেছে এই একটিমাত্র সড়কপথ।
এশিয়ান হাইওয়ে–১ কোনো একক সময়ে বা এক দেশ দ্বারা নির্মিত নয়। মূলত বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্থলভিত্তিক যোগাযোগ জোরদার করার চিন্তা থেকে এই নেটওয়ার্কের ধারণা আসে। জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (UNESCAP) এর তত্ত্বাবধানে ধাপে ধাপে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। বিভিন্ন দেশ তাদের নিজ নিজ অংশে বিদ্যমান জাতীয় মহাসড়ককে উন্নত ও সংযুক্ত করে AH1-এর অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে কোথাও এটি আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে, আবার কোথাও সাধারণ জাতীয় মহাসড়কের আদলে গড়ে উঠেছে।
এই হাইওয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। এশিয়ান হাইওয়ে–১ আজ এশিয়ার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক করিডোর। এই সড়কপথ ব্যবহার করে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পণ্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে পরিবাহিত হয়। শিল্পপণ্য, কৃষিপণ্য, জ্বালানি ও ভোগ্যপণ্য পরিবহনে এই রুট এশিয়ার অনেক দেশের জন্য জীবনরেখার মতো কাজ করছে। পাশাপাশি এটি পর্যটন খাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দীর্ঘ এই পথ ধরে এশিয়ার বিভিন্ন ঐতিহাসিক শহর, বন্দর ও পর্যটন কেন্দ্র সহজেই যুক্ত হয়েছে।
যান চলাচলের দিক থেকেও AH1 অত্যন্ত ব্যস্ত। যদিও পুরো রুট জুড়ে প্রতিদিন মোট কত যানবাহন বা মানুষ চলাচল করে তার নির্দিষ্ট কোনো একক পরিসংখ্যান নেই, তবে বিভিন্ন দেশের ব্যস্ত অংশগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশে দৈনিক যানবাহনের সংখ্যা কয়েক দশ হাজারেও পৌঁছায়। বাস, ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি ও পণ্যবাহী যান—সব মিলিয়ে এই সড়ক এশিয়ার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রেও এশিয়ান হাইওয়ে–১ একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ। যেহেতু এটি আন্তর্জাতিক রুট, তাই এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কোনো একক সংস্থার নয়। প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব অংশের সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। জাতীয় সড়ক ও মহাসড়ক কর্তৃপক্ষগুলো নিয়মিতভাবে রাস্তার পৃষ্ঠ সংস্কার, সেতু ও কালভার্টের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং সড়ক চিহ্ন ও সাইনেজ হালনাগাদ করে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ও দাতা সংস্থাগুলো কারিগরি সহায়তা ও অর্থায়নের মাধ্যমে এই হাইওয়ের মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।
সব মিলিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে–১ শুধু একটি দীর্ঘ রাস্তা নয়; এটি এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবাহ, মানুষের চলাচল ও পারস্পরিক সংযোগের এক শক্তিশালী প্রতীক। এই হাইওয়ে প্রমাণ করে, ভৌগোলিক দূরত্ব যত বড়ই হোক, সঠিক পরিকল্পনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে একটি মহাদেশকে একই সড়কে যুক্ত করা সম্ভব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ