Advertisement

Responsive Advertisement

ডিগবয় থেকে জামনগর, ভারতের তেল শোধনাগারের ইতিহাস



ভারতের শোধনাগার শিল্পের বিস্ময়কর যাত্রা
বিশ্বের দ্বিতীয় এবং এশিয়ার প্রথম জ্বালানি তেল শোধনাগার—এই গৌরবময় পরিচয় বহন করে আসামের ডিগবয় অয়েল রিফাইনারি। ভারতীয় তেল শিল্পের ইতিহাসে ডিগবয় শুধু একটি শোধনাগারের নাম নয়, বরং এটি আধুনিক ভারতের শিল্পায়নের এক জীবন্ত দলিল।

ডিগবয়
যেখানে শুরু হয়েছিল তেলের গল্প
১৮৮৯ সালে আসামের তিনসুকিয়া জেলার ডিগবয়ে স্থাপিত হয় এই ঐতিহাসিক শোধনাগার। তখন ব্রিটিশ শাসনামল। বলা হয়, একটি হাতির পায়ের নিচে জমি থেকে প্রাকৃতিকভাবে বেরিয়ে আসা তেলের চিহ্ন থেকেই ডিগবয়ে তেল অনুসন্ধানের সূত্রপাত। “ডিগ বয়” অর্থাৎ “খোঁড়া জায়গা”—এই নাম থেকেই পরবর্তীতে ডিগবয়ের জন্ম।
১৮৯৯ সালে এখানে বাণিজ্যিকভাবে তেল শোধন শুরু হয়। এটি শুধু এশিয়ার প্রথম নয়, বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীন তেল শোধনাগার হিসেবে আজও কার্যকর অবস্থায় রয়েছে—যা এক বিরল দৃষ্টান্ত। ডিগবয় রিফাইনারি ভারতীয় তেল শিল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এবং পরবর্তীকালে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন ও অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের মতো সংস্থার বিকাশের পথ প্রশস্ত করে।
ডিগবয়ের পর ভারতের শোধনাগার বিস্তার
স্বাধীনতার পর ভারতের শিল্পোন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে তেল শোধনাগার ক্ষেত্রেও ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটে।

নুমালীগড় রিফাইনারি (আসাম)
আসামের আরেক গর্ব নুমালীগড় রিফাইনারি। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বারাউনি রিফাইনারি (বিহার)
১৯৬৪ সালে স্থাপিত বারাউনি রিফাইনারি পূর্ব ভারতের শিল্প বিকাশে বিশেষ ভূমিকা নেয়। এটি বিহার ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির জ্বালানি সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র।

হালদিয়া রিফাইনারি (পশ্চিমবঙ্গ)
হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত হালদিয়া রিফাইনারি পূর্ব ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শোধনাগার। এটি কলকাতা বন্দরকেন্দ্রিক শিল্পাঞ্চলকে শক্তি জোগায়।

জামনগর: বিশ্বের বৃহত্তম শোধনাগার
ডিগবয়ে যেখানে ভারতের তেল শিল্পের সূচনা, সেখানে গুজরাটের জামনগর রিফাইনারি সেই শিল্পের আধুনিক শিখর। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ পরিচালিত এই শোধনাগারটি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম তেল শোধনাগার কমপ্লেক্স। এখানে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল শোধন করা হয় এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চমানের পেট্রোলিয়াম পণ্য রপ্তানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

অতীত থেকে ভবিষ্যতের পথে
ডিগবয়ের পুরনো যন্ত্রপাতি আর ঔপনিবেশিক স্থাপত্য যেমন ইতিহাসের সাক্ষী, তেমনি জামনগরের আধুনিক অবকাঠামো ভারতের ভবিষ্যৎ শক্তির প্রতীক। এই দুই প্রান্তের মাঝে ভারতের শোধনাগার শিল্প আজ আত্মনির্ভরতা, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ এবং বৈশ্বিক বাজারে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে।
ডিগবয় আমাদের শিকড়ের কথা মনে করায়, আর জামনগর দেখায় ভারতের সামর্থ্য। এই দুইয়ের মিলনেই গড়ে উঠেছে ভারতের শক্তিশালী জ্বালানি ভুবন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ