ঝাল শুধু স্বাদের বিষয় নয়—এটি অভ্যাস ও সংস্কৃতির প্রতীক। পৃথিবীর নানা দেশে এমন কিছু লঙ্কা জন্মায়, যেগুলোর ঝাল মানুষের সহ্যক্ষমতার চরম সীমা ছুঁয়ে যায়। ঝালের তীব্রতা মাপা হয় স্কোভিল তাপমাত্রা একক অনুযায়ী। যত বেশি একক, তত বেশি ঝাল। চলুন জেনে নেওয়া যাক পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল পাঁচটি লঙ্কা সম্পর্কে।
বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল লঙ্কা হিসেবে স্বীকৃত পেপার এক্স, যুক্তরাষ্ট্রতে পাওয়া যায়। এই লঙ্কার ঝাল এতটাই তীব্র যে একে খাওয়ার পর শরীরে আগুন জ্বলার মতো অনুভূতি হয়। ঘাম, চোখে পানি, শ্বাস নিতে কষ্ট—সবই একসঙ্গে দেখা দিতে পারে। এটি মূলত গবেষণাগারে তৈরি একটি বিশেষ জাতের লঙ্কা এবং সাধারণ বাজারে সহজে পাওয়া যায় না।
যুক্তরাষ্ট্র'র দীর্ঘ সময় ধরে ক্যারোলাইনা রিপার ছিল বিশ্বের ঝালতম লঙ্কা। এর নামের মধ্যেই আছে ভয়—রিপার অর্থ ধ্বংসকারী। লাল রঙের এই লঙ্কার নিচের অংশে কাঁটার মতো লেজ থাকে, যা এর পরিচিত বৈশিষ্ট্য। ঝালের পাশাপাশি এর স্বাদেও হালকা মিষ্টি ভাব রয়েছে। ঝাল সস, মাংসের মেরিনেশন ও বিশেষ চাটনিতে ব্যবহার হয়।
ত্রিনিদাদ ও টোবাগো দেশের "ত্রিনিদাদ মোরুগা স্করপিয়ন" এই লঙ্কার নাম শুনলেই বোঝা যায় এর ভয়ংকর রূপ। বিচ্ছুর দংশনের মতো এর ঝাল ধীরে ধীরে আঘাত হানে, কিন্তু আঘাতটা হয় প্রচণ্ড। একসময় এটিকেই পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল লঙ্কা বলা হতো। ক্যারিবীয় অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ঝাল রান্নায় এটি বহুল ব্যবহৃত।
ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সেভেন পট ডুগলাহ লঙ্কার নামের অর্থ—একটি লঙ্কা দিয়ে সাতটি হাঁড়ি রান্না করা যায়। কারণ এর ঝাল এত বেশি যে সামান্য ব্যবহারই যথেষ্ট। কালচে বাদামি রঙের এই লঙ্কার স্বাদ গভীর এবং মাটির গন্ধের মতো আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ঝাল সস ও বিশেষ ক্যারিবীয় খাবারে ব্যবহার হয়।
ভূত জলকিয়া, ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের গর্ব ভূত জলকিয়া। অসম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও ত্রিপুরা, রাজ্য বেধে এর নাম আলাদা আলাদা। একসময় এটি পৃথিবীর ঝালতম লঙ্কা হিসেবে বিশ্বস্বীকৃতি পেয়েছিল। স্থানীয় মানুষ একে শুধু খাবার নয়, অনেক সময় প্রাকৃতিক প্রতিরোধক হিসেবেও ব্যবহার করে ভর্তা, আচার, চাটনি ও ঝাল তরকারিতে বহুল প্রচলিত।
লঙ্কার ঝাল আসে ক্যাপসাইসিন নামের একটি প্রাকৃতিক উপাদান থেকে। এই উপাদান জিহ্বার স্নায়ুকে উত্তেজিত করে, ফলে আগুনে পোড়ার মতো অনুভূতি হয়। স্কোভিল তাপমাত্রা একক দিয়ে এই ক্যাপসাইসিনের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ