Advertisement

Responsive Advertisement

আরাবল্লী পর্বত: প্রাচীন ভূতত্ত্বের সাক্ষী, আধুনিক সংকটে বিপন্ন





ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন পর্বতমালা হলো আরাবল্লী পর্বতশ্রেণি। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, এই পর্বতশ্রেণির বয়স প্রায় ৩০০ কোটি বছর, যা একে পৃথিবীর প্রাচীনতম পর্বতমালাগুলির একটি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। হিমালয়ের অনেক আগেই জন্ম নেওয়া এই পর্বত একসময় ছিল সুউচ্চ ও শক্তিশালী, কিন্তু কোটি কোটি বছরের প্রাকৃতিক ক্ষয়প্রক্রিয়ায় আজ তা অপেক্ষাকৃত নিচু ও বিচ্ছিন্ন পাহাড়শ্রেণিতে পরিণত হয়েছে।

আরাবল্লী পর্বতশ্রেণি মূলত গুজরাটের পালানপুর অঞ্চল থেকে শুরু করে রাজস্থান হয়ে দিল্লি পর্যন্ত বিস্তৃত। রাজস্থানের মাউন্ট আবু অঞ্চলের গুরু শিখর এই পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, যার উচ্চতা প্রায় ১,৭২২ মিটার। ইতিহাসে আরাবল্লী শুধু একটি ভূপ্রাকৃতিক কাঠামো নয়, বরং এটি ছিল উত্তর-পশ্চিম ভারতের জলবায়ু ও সভ্যতা বিকাশের অন্যতম নিয়ামক।

প্রাচীন ভারতে আরাবল্লী অঞ্চল ছিল তামা, দস্তা ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের জন্য পরিচিত। সিন্ধু সভ্যতার কিছু অংশে ব্যবহৃত তামা এই অঞ্চল থেকেই আহরণ করা হয়েছিল বলে গবেষকদের একাংশ মনে করেন। রাজপুত যুগে এই পর্বতশ্রেণি ছিল প্রাকৃতিক দুর্গের মতো, যা বহু রাজ্যকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিয়েছে। একই সঙ্গে এটি থর মরুভূমির বিস্তার রোধে একটি প্রাকৃতিক প্রাচীরের ভূমিকা পালন করেছে।

কিন্তু বর্তমান সময়ে আরাবল্লী পর্বতশ্রেণির অবস্থা গভীর উদ্বেগের বিষয়। অনিয়ন্ত্রিত খনন, বন উজাড়, নগরায়ণ এবং অবৈধ পাথর উত্তোলন এই প্রাচীন পর্বতমালাকে ক্রমশ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষ করে রাজস্থান ও হরিয়ানার বিভিন্ন অংশে খননের ফলে পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে, যা শুধু ভূপ্রাকৃতিক ভারসাম্যই নয়, ভূগর্ভস্থ জলস্তরকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

আরাবল্লী পর্বতশ্রেণি উত্তর ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাধার ও পরিবেশগত রক্ষাকবচ। এই অঞ্চলের বনভূমি বৃষ্টি ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং দিল্লি-এনসিআর এলাকায় মরুকরণ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু বনভূমি সংকুচিত হওয়ায় ধুলিঝড়, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলসংকট ক্রমশ বাড়ছে।

পরিবেশবিদদের মতে, আরাবল্লীকে রক্ষা করা মানে শুধু একটি পর্বতমালাকে বাঁচানো নয়, বরং উত্তর ভারতের পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনযাত্রাকে সুরক্ষিত করা। সরকারিভাবে বিভিন্ন সুরক্ষা আইন ও প্রকল্প থাকলেও বাস্তব প্রয়োগে ঘাটতি রয়ে গেছে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এই পর্বতশ্রেণি ভবিষ্যতে শুধুই ইতিহাসের পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়তে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ