Advertisement

Responsive Advertisement

আগামী প্রজন্মের মধ্যে দেশাত্মবোধের ভাবনাকে জাগ্রত করবে বন্দেমাতরম: মুখ্যমন্ত্রী




আগরতলা, ৭ নভেম্বর: আগামী প্রজন্মের মধ্যে দেশাত্মবোধের ভাবনাকে জাগ্রত করবে বন্দেমাতরম। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বন্দেমাতরম এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত ক্রমে আজ থেকে বর্ষ ব্যাপী বন্দেমাতরম এর ১৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হবে। 

                                 আজ মহাকরণ কমপ্লেক্সে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত বন্দেমাতরম গানের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। 
                              এই কার্যক্রমে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ২০২৫ এর ১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বন্দেমাতরম এর ১৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশের আন্দোলনে এই উল্লেখযোগ্য গানটির স্মরণ করে দেশজুড়ে এই কার্যক্রম পরিচালনা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। আনন্দমঠ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত উপন্যাস, যেটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। ১৮৭৫ সালের ৭ নভেম্বর অক্ষয় নবমীতে বঙ্কিমচন্দ্র এই বন্দেমাতরম রচনা করেন। ১৮৯৬ সালে কলকাতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে এই রাষ্ট্রীয় গানটি গেয়ে শোনান। পরবর্তী সময়ে বন্দেমাতরম এর প্রথম দুটি স্তবক জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে নিয়মিত গাওয়া হয়। ধীরে ধীরে এই রাষ্ট্রীয় গানের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তির মন্ত্র হিসেবে পরিগণিত হয়। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময়কালে বন্দেমাতরম রাষ্ট্রীয় সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া হয়। যা বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। ১৯০৭ সালে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় এই বন্দেমাতরম শব্দটি লেখা হয়। 
                                আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আজাদ হিন্দ সরকারের ঘোষণাপত্রের সময়েও বন্দেমাতরম রাষ্ট্রীয় গানটি গাওয়া হয়েছে। ১৯৫০ সালে জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের তৎকালীন প্রথম রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ গণপরিষদে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে বন্দেমাতরম এর যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, তার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় সঙ্গীত বন্দেমাতরম জাতীয় সঙ্গীত জন গণ মন এর সমান মর্যাদা পাবে এবং সমানভাবে সম্মানিত হবে। ব্রিটিশ শাসনকালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি, একতা এবং শাসকের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে জনগণের প্রতিবাদ এই বন্দেমাতরম এর মাধ্যমে উচ্চারিত হয়। আজ ৭ নভেম্বর, ২০২৫ সারা দেশজুড়ে বর্ষ ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বন্দেমাতরম রাষ্ট্রীয় গান রচনার ১৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 


                                মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জানান, বন্দেমাতরম উদযাপন এক বছর ব্যাপী চলবে। আজ থেকে অর্থাৎ ৭ নভেম্বর ২০২৫ থেকে ৭ নভেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত চারটি পর্যায়ে এটি চলবে। এই উদযাপনকে স্মরণীয় করে তোলার জন্য পর্যায়ক্রমে সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে আজ রাজ্যস্তরের কার্যক্রমটি রাজ্য সচিবালয়ে আয়োজন করা হয়েছে। একইদিনে রাজ্যের সব জেলা সদর, মহকুমা, ব্লকের পাশাপাশি আগরতলা পুর নিগম ও অন্যান্য পুর সংস্থা, নগর পঞ্চায়েতেও বন্দেমাতরম এর ১৫০তম বর্ষ পূর্তি উদযাপন করা হবে। রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন ডিরেক্টরেটেও এই কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এডিসি প্রশাসনকেও এই কার্যক্রম করার অনুরোধ করা হয়েছে। বর্ষ ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের বন্দেমাতরম এর তাৎপর্য সম্পর্কে অবগত করা হবে। সম্মিলিত কণ্ঠে বন্দেমাতরম এর তাৎপর্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে স্কুলে স্কুলে বিশেষ সমাবেশ, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পোস্টার তৈরি ইত্যাদি ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ব্যান্ডের মাধ্যমে জনবহুল জায়গায় রাষ্ট্রীয় ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশিত হবে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্দেমাতরম এর উপর ভিত্তি করে কুইজের আয়োজন করা হবে। এছাড়া প্রদর্শনী, বৃক্ষরোপণ অভিযান, যুব ম্যারাথন, এনসিসি ইত্যাদির মাধ্যমে বন্দেমাতরম এর কার্যক্রম করা হবে। সকলকে দায়িত্ব নিয়ে মিলিতভাবে এই কার্যক্রম সফল করতে হবে। এই উদযাপন শুধুমাত্র একটা অনুষ্ঠান নয়, আমাদের আগামী প্রজন্মের মধ্যে দেশাত্মবোধের ভাবনা ও দেশপ্রেম বোধকে জাগ্রত করার একমাত্র অঙ্গিকার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হর ঘর তিরঙ্গা, স্বচ্ছ ভারত অভিযান, এক পেড় মা কি নাম কার্যক্রম রূপায়ণ করেছেন। এবারও বন্দেমাতরম এর ১৫০ বর্ষ পূর্তি উদযাপন করার আহ্বান রেখেছেন তিনি। 

                                 অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিব জিতেন্দ্র কুমার সিনহা, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব পি কে চক্রবর্তী সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি এবং পদস্থ আধিকারিকগণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ