Advertisement

Responsive Advertisement

অভয়নগরে ছাত্রদের জন্য ১০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি বয়েজ হোস্টেল নির্মাণ করা হবে: মুখ্যমন্ত্রী



আগরতলা, ১৫ নভেম্বর: রাজ্য সরকার জনজাতি জনগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষভাবে অঙ্গিকারবদ্ধ। জনজাতি অংশের মানুষের উন্নয়ন ছাড়া রাজ্যের অগ্রগতি সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশিত পথে জনজাতি কল্যাণে কাজ করছে ত্রিপুরা সরকার। 

                                    আজ এডিসির সদর কার্যালয় খুমুলুঙের খুমপুই একাডেমিতে জনজাতীয় গৌরব দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। ভগবান বীরসা মুন্ডার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজকের দিনটি জনজাতীয় গৌরব দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। 
                                    অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কারণে আজ আমরা ভগবান বীরসা মুন্ডা সম্পর্কে জানতে পারছি। আমরা সবাই জানি প্রতি বছর ১৫ নভেম্বর ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে জনজাতি সম্প্রদায়ের ভূমিকাকে সম্মান জানিয়ে জনজাতীয় গৌরব দিবস পালন করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। ভগবান বীরসা মুন্ডাকে একজন কিংবদন্তী নেতা বলা হয়। তাঁর শৌর্য ও বীরত্বকে তুলে ধরার প্রয়োজন সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ১৫ নভেম্বর, ১৮৭৫ সালে বীরসা মুন্ডা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ভগবান হিসেবে পরিচিত বীরসা মুন্ডার জন্মদিনকে আজ আমরা জনজাতীয় গৌরব দিবস হিসেবে পালন করছি। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জনজাতি সম্প্রদায়ের ভূমিকাকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার আর্থ সামাজিক মানোন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আজকের এই দিনটি জনজাতি সম্প্রদায়ের জন্য এক গৌরবময় ইতিহাস এবং তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে উদযাপন করে। আর সমগ্র দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। ভগবান বীরসা মুন্ডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং জাতির উন্নয়নে জনজাতি সম্প্রদায়ের যে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ১৫ নভেম্বর ২০২৪ থেকে ১৫ নভেম্বর ২০২৫ - এই এক বছর জনজাতি গৌরব বর্ষ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। 
                                      বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী জানান, গত বছরের মতো এবছরও জনজাতীয় গৌরব দিবস বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপন করা হচ্ছে। জাতীয় স্তরে এই কার্যক্রম গুজরাটের নর্মদা জেলায় পালিত হচ্ছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্বোধন করবেন। ত্রিপুরা রাজ্যের মূল অনুষ্ঠান খুমুলুঙের খুমপুই একাডেমিতে আয়োজন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সারা রাজ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই দিনটি উদযাপন করার ব্যবস্থা হয়েছে। রাজ্য সরকার জনজাতি জনগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষভাবে সচেষ্ট। এই অবিরাম প্রচেষ্টায় দরুন সম্প্রতি ত্রিপুরা তিনটি জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছে। পিএম জনমন, ধরতি আভা জন ভাগীদারী অভিযান বাস্তবায়নে সেরা পারফর্মিং রাজ্য হিসেবে দুটি পুরস্কার লাভ করেছে। পিএম জনমন বাস্তবায়নে দেশের মধ্যে সেরা পারফর্মিং জেলা হিসেবে উত্তর ত্রিপুরা জেলা পুরস্কৃত হয়েছে। কেন্দ্রীয় আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রক পিএম জনমন প্রকল্পে প্রায় ৫০টি মাল্টিপারপাস সেন্টার স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। এরমধ্যে ত্রিপুরাতে ১১টি মাল্টিপারপাস সেন্টার দেওয়া হয়েছে। এই ১১টি সেন্টারের মধ্যে ধলাই জেলায় ৬টি, উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ৪টি এবং দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ১টি রয়েছে। 
                                    অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, রাজ্য সরকার কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজকের এই অনুষ্ঠান থেকে জনজাতি স্বার্থে সরকারের গৃহীত কয়েকটি উদ্যোগের ঘোষণা করছি। বর্তমানে ৩৪,০০০ ছাত্রছাত্রীকে ছাত্রাবাস বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। চলতি আর্থিক বছরে বিভিন্ন ছাত্রছাত্রী নিবাসে আরো ২,৭০০ আসন বৃদ্ধি করা হবে। ছাত্রাবাস বৃত্তির হার বর্তমানে ৮০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ থেকে প্রতি ছাত্রছাত্রী পিছু দৈনিক ১০০ টাকা করা হবে। এজন্য ২০২৫ - ২৬ আর্থিক বছরে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা, পরবর্তী আর্থিক বছরে ২০২৬ - ২৭ এ ২৩ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হবে। আগরতলার অভয়নগরে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের জন্য ১০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি বয়েজ হোস্টেল নির্মাণ করা হবে এবং এরজন্য ব্যয় হবে ৫ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা। ক্রীড়া দক্ষতা ও খেলোয়াড়ী মনোভাব বিকাশের জন্য আগে শুধু সরকারি হোস্টেলগুলিতে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করা হতো। এবছর এনজিও দ্বারা পরিচালিত হোস্টেলগুলিকেও ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করা হবে। এরজন্য প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হবে। ইতিমধ্যে ১০০টি সরকারি এসটি হোস্টেলে স্মার্ট ক্লাশ স্থাপন করা হয়েছে। আরো ৭০টি সরকারি এসটি হোস্টেলে স্মার্ট ক্লাশ সুবিধা সম্প্রসারন করা হবে। এরজন্য ব্যয় হবে প্রায় ২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। মুখ্যমন্ত্রী ট্রাইব্যাল ডেভেলপমেন্ট মিশনের অধীনে ১৯ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তায় ৫০টি জনজাতি সরকারি হোস্টেলে সৌর শক্তি ভিত্তিক জল পরিশোধন সহ কম্পোজিট সৌর ইউনিট স্থাপন করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী ট্রাইব্যাল ডেভেলপমেন্ট মিশনের অধীনে ৫০০টি বৈদ্যুতিক অটো বেকার জনজাতি যুবক যুবতীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এজন্য আর্থিক ব্যয় হবে ২০ কোটি টাকা। এছাড়া রেজিস্ট্রেশন, ইন্সুরেন্স ইত্যাদির জন্য সরকার থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়াও এই মিশনের অধীনে মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জনজাতি উন্নয়ন মিশনের অধীনে ৩০,০০০ জনজাতি মহিলা তাতিকে সুতো বিতরণ করার ব্যবস্থা হয়েছে। যার আর্থিক ব্যয় হবে ৩ কোটি টাকা। 
                                     আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার বলছেন জনজাতিদের উন্নয়ন ছাড়া কোন অবস্থায় দেশ উন্নত হবে না। ত্রিপুরা সরকারও প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনে বারবার এই কথা বলছে যে জনজাতিদের উন্নয়ন ছাড়া ত্রিপুরার অগ্রগতি হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত পথে জনজাতি অংশের মানুষের কল্যাণে কাজ করছে রাজ্য সরকার। 
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা, সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য , সাংসদ কৃতি দেবী দেববর্মণ সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও পদস্থ আধিকারিকগণ। 
জনজাতীয় গৌরব দিবস উপলক্ষে এদিন মামিতা নৃত্য সহ জনজাতি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক কার্যক্রম প্রদর্শন করা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ