Advertisement

Responsive Advertisement

শিক্ষা ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার: মুখ্যমন্ত্রী


আগরতলা, ১১ নভেম্বর: কমিউনিস্ট সরকারের জমানায় চাকরির নামে প্রহসন হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার চাকরি প্রদান সহ সবক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করছে। রাজ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের গুণগত মানের শিক্ষা প্রদানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 
আজ গোমতী জেলার কাকড়াবন সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে কাকড়াবন সরকারি ডিগ্রি কলেজের উদ্বোধন ও ডিস্ট্রিক্ট ইন্সটিটিউট অফ এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং (ডায়েট) এর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট গার্লস হোস্টেলের ভার্চুয়াল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। 
                                  অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজ কাকড়াবন এলাকার মানুষের জন্য অত্যন্ত আনন্দের দিন। শিক্ষা ক্ষেত্রে আজ এখানে একটা ইতিহাস ও মাইল ফলক তৈরি হলো। অথচ আগে কি অবস্থা ছিল এখানে? শিক্ষার নামে প্রহসন, যারা কমিউনিস্টদের আদর্শে দীক্ষিত হয়ে তৎকালীন সময়ে নকশালী নাম দিয়ে সমস্ত স্কুল কলেজে নৈরাজ্য কায়েম করে রেখেছিল। কখন স্কুল কলেজে বোমা পড়বে, কখন কে আহত হবে কেউ জানতো না। এমন অবস্থা ছিল সেসময়। 
                                    মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গ দর্শনে এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের তৎপরতায় মাওবাদীদের নির্মূল করার চেষ্টা হচ্ছে। গতকালও সিট্যু নাম দিয়ে আগরতলায় একটা সভা করেছে কমিউনিস্টরা। সেখানে বলা হয়েছে আন্দোলন করতে হবে, রাস্তায় নামতে হবে। কিন্তু ক্ষেপিয়ে তোলার রাজনীতি মানুষ আর পছন্দ করে না। কারণ তাদের মানুষ জেনে গেছে, বুঝে গেছে। অতীতে রাজনীতির নামে খুন, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি ঘটনা মানুষ দেখেছে। নিজেদের দলের না হলে চাকরি ওরা দেবে না। কিন্তু আমাদের বর্তমান সরকার এখন স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে চাকরি প্রদান করছে। এই সরকার সমস্ত জায়গায় স্বচ্ছতা বজায় রেখেই কাজ করছে। সবকিছুতে নিজেদের দলের লোক খুঁজে বেড়াত তারা। অর্থাৎ লালিকরণের রাজনীতি করেছে তারা। মানুষ এখন বুঝতে পারছে যে তাদের সময়ে চাকরির নামে প্রহসন হয়েছে। ১০,৩২৩ নিয়ে কি অবস্থা করেছিল তারা? এখন পর্যন্ত আমাদের সরকার আসার পর প্রায় ২০,০০০ চাকরি প্রদান করেছে। কোন জায়গায় চ্যালেঞ্জ হয়নি। আমরা চাইছি একটা সুন্দর পরিবেশের মাধ্যমে এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলার। প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনে কাজ করছে আমাদের সরকার।
                                   অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, কোন কাজ করলে দেখা যায় যে বিরোধিতা করতে হবে। কারণ তাদের পায়ের তলায় জমি সরে যাচ্ছে। সেজন্য মানুষকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আর আমাদের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হচ্ছে শিক্ষা। আমরা সেভাবেই কাজ করছি। ত্রিপুরা সমস্ত ক্ষেত্রে ঠিকভাবে কাজ করছে। তাই জিএসডিপি ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। নীতি আয়োগ ত্রিপুরাকে ফ্রন্ট রানার স্টেট হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। বিভিন্ন প্যারামিটারে সাফল্যের নিরিখে জাতীয় স্তরে ত্রিপুরাকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। 
                                  মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, শিক্ষাই হচ্ছে জাতির মেরুদন্ড। যেকোন জাতির উন্নয়নে শিক্ষাই হচ্ছে অন্যতম মূল শক্তি। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত হবে, সেই জাতি তত বেশি উন্নত হবে। শিক্ষিত সমাজ গঠনের মাধ্যমে আত্মনির্ভর হওয়া সম্ভব। আমরা জানি যে শিক্ষা হচ্ছে একটা সেতু। আমাদের সরকার ছেলেমেয়েদের গুণগত শিক্ষা প্রদানের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। আমি ছাত্রছাত্রীদের এটাই বলবো যে ছাত্র জীবনে সামাজিক কাজেও নিজেদের নিয়োজিত করতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। শৈশব থেকে সেবামূলক মানসিকতা নিয়ে কাজ করলে নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন শিক্ষা শুধু পাঠ্যভিত্তিক জ্ঞান নয়, বরং এটি মূল্যবোধ, বিকাশ এবং জাতি গঠনের একটা হাতিয়ার। আর একে মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। 
                                   অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জানান, মানুষের চাহিদাকে মাথায় রেখে এবছর কাকড়াবন, আমবাসা ও করবুকে তিনটি ডিগ্রি কলেজ চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে উপকৃত হবে ছাত্রছাত্রীরা। ২০২৫ - ২৬ অর্থ বছরে সেন্টার অফ অ্যাক্সিলেন্স স্কিমে কাকড়াবন ডায়েট সারা ভারতবর্ষের মধ্যে মডেল ডায়েট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক এরজন্য প্রায় ১৩ কোটি টাকার অধিক বরাদ্দ দিয়েছে। আমাদের ত্রিপুরার ছেলেমেয়েদের জ্ঞান ও মেধা কোন অংশে কম নয়। ত্রিপুরায় এখন বেসরকারি স্তরেও ইউনিভার্সিটি গড়ে উঠছে। আগামীতে ত্রিপুরায় শিক্ষা ক্ষেত্রে একটা হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ হচ্ছে। 

                                    অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায়, উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী কিশোর বর্মন, বিধায়ক জিতেন্দ্র মজুমদার, বিধায়ক রঞ্জিত দাস, গোমতী জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবল দেবরায়, কাকড়াবন পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন সুপ্রিয়া সাহা, শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, এসসিইআরটির অধিকর্তা এল ডার্লং, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা অনিমেষ দেববর্মা, গোমতী জেলার জেলাশাসক রিংকু লাথার, পুলিশ সুপার কিরণ কুমার কে সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি এবং পদস্থ আধিকারিকগণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ