Advertisement

Responsive Advertisement

আমাজন জঙ্গল : পৃথিবীর ফুসফুসের নীরব আর্তনাদ




আমাজন জঙ্গলকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। কারণ এ জঙ্গল পৃথিবীর মোট অক্সিজেনের প্রায় ২০ শতাংশ সরবরাহ করে। দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, পেরু, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া সহ প্রায় নয়টি দেশ জুড়ে বিস্তৃত এ বনভূমি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রান্তীয় অরণ্য। এর আয়তন প্রায় ৫৫ লক্ষ বর্গকিলোমিটার, যা প্রায় সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের চেয়েও বড়।

জীববৈচিত্র্যের ভান্ডার
আমাজনকে জীববৈচিত্র্যের স্বর্গ বলা হয়। এখানে প্রায় ৩৯০ বিলিয়ন গাছপালা, ৪০ হাজারেরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রায় ২২০০ প্রজাতির মাছ, ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১৩০০ পাখি এবং অসংখ্য কীটপতঙ্গের বসবাস। এমনকি এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের সন্ধান পাচ্ছেন। এই জঙ্গল পৃথিবীর জিন ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করছে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় অমূল্য ভূমিকা রাখছে।

স্থানীয় আদিবাসীদের জীবন
আমাজন কেবল প্রাণী ও উদ্ভিদের আশ্রয়স্থল নয়, প্রায় ৪০০টিরও বেশি আদিবাসী গোষ্ঠীর জীবনের কেন্দ্র। এর মধ্যে অনেক গোষ্ঠী এখনো বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপন করেনি। তারা জঙ্গলের ফল, মাছ, পশু শিকার এবং ঔষধি গাছপালা ব্যবহার করে বেঁচে থাকে। এই আদিবাসীরা প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের এক বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে।

জলবায়ু ও পরিবেশে প্রভাব
আমাজন নদী ও তার অসংখ্য শাখা-প্রশাখা দক্ষিণ আমেরিকার জলচক্রের মূল নিয়ন্ত্রক। এখানকার গাছপালা প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টন পানি বাষ্পীভূত করে, যা মেঘ তৈরি করে এবং দক্ষিণ আমেরিকার বৃষ্টিপাতের প্রধান উৎস হয়। শুধু তাই নয়, এই বনভূমি বিশ্ব উষ্ণতা কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পৃথিবীতে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণের অন্যতম প্রধান ভাণ্ডার এটি।

ধ্বংসের হুমকি
কিন্তু আজ এই অরণ্য তীব্র সংকটের মুখে। প্রতিবছর বনভূমির বিশাল অংশ কেটে ফেলা হচ্ছে চাষের জমি তৈরির জন্য, পশুপালনের জন্য কিংবা কাঠ রপ্তানির উদ্দেশ্যে। আগুন লাগানো হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে, যাতে দ্রুত জমি খালি করা যায়। এর ফলে কোটি কোটি প্রাণী আশ্রয় হারাচ্ছে, পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে এবং গোটা পৃথিবী জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, যদি ধ্বংসযজ্ঞ এইভাবে চলতে থাকে, তবে আমাজন জঙ্গল একসময় নিজেই অক্সিজেন সরবরাহকারী থেকে উল্টো কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হবে।

আমাদের করণীয়
আমাজন জঙ্গল বাঁচানো মানে শুধু দক্ষিণ আমেরিকা নয়, গোটা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ বাঁচানো। আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, পরিবেশবান্ধব নীতি, বন রক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার মাধ্যমে এ অরণ্য সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে—কাগজ, কাঠ, পশমজাত দ্রব্য, কিংবা কৃষিজ পণ্য ব্যবহার করার সময় এ বনভূমির ওপর প্রভাব পড়ছে কিনা তা ভাবতে হবে।
আমাজন জঙ্গল এক অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ, যার জীবনদায়ী শক্তি গোটা পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এটি কেবল একটি অরণ্য নয়, বরং মানবসভ্যতার অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য একটি স্তম্ভ। তাই আমাজন রক্ষা করা মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক নিরাপদ ও টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ