ইঞ্জিনিয়ার সুমন পাল
২০২৫ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) তার প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উদযাপন করছে। ১৯২৫ সালে নাগপুরে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন ভারতের অন্যতম বৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে পরিণত হয়েছে, যার প্রভাব সমাজ, সংস্কৃতি এবং জাতীয় জীবনের প্রতিটি স্তরে অনুভূত হয়।
প্রতিষ্ঠাতা: ডঃ কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার
ডঃ কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার, একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও দেশপ্রেমিক, ১৯২৫ সালের বিজয়া দশমীর দিন নাগপুরে RSS প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল, প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য জাতীয় চরিত্র গঠন ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ অপরিহার্য।
এই সংগঠন আজও প্রতিদিন হাজার হাজার শাখার মাধ্যমে মানুষের চরিত্র গঠন এবং জাতি উন্নয়নের কাজ করে চলেছে।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
RSS-এর মূল উদ্দেশ্য কখনোই রাজনৈতিক ছিল না, বরং জাতি গঠনের জন্য চরিত্র গঠন, শৃঙ্খলা, স্ব-সেবার ও সামাজিক ঐক্যের উপর জোর দেওয়া হয়। প্রতিদিনের শাখাগুলির মাধ্যমে শারীরিক অনুশীলন, নৈতিক শিক্ষা ও দেশভক্তির চেতনা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘ মানে শাখা ,শাখা মনে কার্যক্রম। সংঘের শাখা হলো মানুষ তৈরির কারখানা ( Man Making factory) ।
RSS “হিন্দু রাষ্ট্র” ধারণাকে ধর্মীয় নয়, বরং ভারতের হাজার বছরের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের চিন্তাধারা হিসেবে তুলে ধরে।
"এক দৃঢ়, ঐক্যবদ্ধ ও চারিত্রিকভাবে বলিষ্ঠ ভারতীয় সমাজ গঠন, যেখানে জাতি, ধর্ম, ভাষা বা বর্ণের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন থাকবে না।"
RSS-এর আদর্শ মূলত চারটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে
1. চরিত্র গঠন – আত্মনিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা ও দেশভক্তির বিকাশ।
2. সামাজিক ঐক্য – বর্ণ, জাতি বা ভাষা নির্বিশেষে সমাজে সম্প্রীতি।
3. সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ – ভারতের প্রাচীন জ্ঞান, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার।
4. জাতীয় সেবা – দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ বা যেকোনো সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
সংঘের শাখায় বছরে ছয়টি উৎসব পালিত হয় - হিন্দু সাম্রাজ্য দিবস, রাখি পূর্ণিমা , গুরু পূর্ণিমা , বর্ষপ্রতিপদা, বিজয়া দশমী , মকরসংক্রান্তি ।
প্রতিটি যুগে RSS
স্বাধীনতা পূর্ব যুগ (১৯২৫–১৯৪৭):
যুব সমাজের মধ্যে শৃঙ্খলা ও দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলে।
সরাসরি রাজনৈতিক আন্দোলনে না থাকলেও আত্মিক জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করে।
স্বাধীনতার পর (১৯৪৭–১৯৭৫):
রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যে বহুবার নিষিদ্ধ হয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠে।
যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্বেচ্ছাসেবকরা সামনে এসে মানবসেবার কাজ করে।
এমার্জেন্সি সময় (১৯৭৫–১৯৭৭):
গণতন্ত্র রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
বহু স্বয়ংসেবক কারাবরণ করেন।
আধুনিক যুগ (১৯৯০–২০২৫):
BJP-র উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উপজাতি উন্নয়ন, নারীকল্যাণ ও ডিজিটাল সচেতনতায় বিশাল অবদান।
বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যেও সাংস্কৃতিক সংযোগ তৈরি।
বর্তমান সরসংঘচালক: ডঃ মোহন ভাগবত
বর্তমান সরসংঘচালক ডঃ মোহন ভাগবত-এর নেতৃত্বে RSS সমাজের সব স্তরের মানুষের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে, বিশেষ করে দলিত, পিছিয়ে পড়া ও নারী সমাজের মধ্যে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, “RSS একটি রাজনৈতিক সংগঠন নয়, এটি একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন।”
ভবিষ্যতের দিশা: শতবর্ষ ও তার পর
বর্তমানে ৫০,০০০-এরও বেশি শাখা, হাজার হাজার সেবা প্রকল্প এবং সেবা ভারতীর মতো সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে RSS আগামী শতকে আত্মনির্ভর, ঐক্যবদ্ধ ও মূল্যবোধসম্পন্ন ভারত গঠনের দিকে এগিয়ে চলেছে।
“RSS কোনো প্রতিষ্ঠান নয়—এটি এমন একটি ভাবনা, যা কোটি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছে।”
RSS-এর শতবর্ষের যাত্রা শুধুমাত্র একটি সংগঠনের ইতিহাস নয়—এটি একটি আন্দোলনের দলিল, যা জাতি, সংস্কৃতি ও সমাজ গঠনে গভীরভাবে নিবেদিত।
“RSS কোনো সংগঠন নয়, এটি একটি চলমান চেতনা, যা জাতিকে জাগিয়ে তোলে।”
বর্তমানে শতাব্দী বর্ষে সংঘ পাঁচটি বিষয়ের উপর কাজ করে যাচ্ছে , এগুলি হল স্বদেশী বস্তু, কুটুম্ব প্রবোধণ, পর্যাবরণ, নাগরিক কর্তব্য ও সামাজিক সমরসতা।
0 মন্তব্যসমূহ