Advertisement

Responsive Advertisement

জন্মগত শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন প্রদানই সরকারের লক্ষ্য: মুখ্যমন্ত্রী

জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের।
জন্মগত শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন প্রদানই সরকারের লক্ষ্য: মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ৪ জুলাই: জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত সকল অংশের শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এজন্য অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যতটা সম্ভব রাজ্যে এসে জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে। যেসকল শিশু এধরণের জন্মগত শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত, ভবিষ্যতে তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন উপহার দেওয়াই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। 
                           বৃহস্পতিবার আইজিএমের আগরতলা সরকারি নার্সিং কলেজে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক শিশুদের জন্মগত হৃদরোগ সনাক্তকরণ ও তার চিকিৎসার লক্ষ্যে রাজ্যভিত্তিক প্রথম সনাক্তকরণ শিবিরের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের উদ্যোগে এবং চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো চিলড্রেন্স হাসপাতালের সহায়তায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 
                             অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষের জন্য কাজ করতে পারার মতো সন্তুষ্টি আর কোথাও হয় না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মানুষের জন্য কাজ করাকে অন্যতম অগ্রাধিকার দেন। ত্রিপুরা সরকার ও স্বাস্থ্য দপ্তরও সেই দিশায় কাজ করে চলছে। জন্মগত শারীরিক অসঙ্গতি আজকাল প্রায়শই প্রত্যক্ষ হয়। এখন বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে শিশুর জন্মের আগে শারীরিক কোন ত্রুটি আছে কিনা সেটা বোঝা যায়। তবুও ডেলিভারির পর যদি অসঙ্গতি ধরা পড়ে যেমন ঠোঁট কাটা, বাঁকা পা, শারীরিক অভ্যন্তরীণ অপরিপূর্ণতা বা বিকাশগত ত্রুটি ধরা পড়লে যথাযথ চিকিৎসার প্রয়োজন। এনিয়ে সবাই সমস্যায় ছিলেন। তাই ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম শুরু হয়। যেখানে শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত যারা এধরণের ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার ব্যবস্থা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে চিকিৎসার জন্য কাউকে পয়সা দিতে হবে না। সেটা পুরোপুরি সরকারই বহন করে। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার মিলিতভাবে পুরো বিষয়টি দেখে থাকে। 
                            মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ত্রিপুরাতে ৪৪টি ডেডিকেটেড মোবাইল হেল্থ টিম রয়েছে। এই টিমগুলো বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারে গিয়ে শূন্য থেকে ৬ বছরের ছেলেমেয়েদের স্ক্রিনিং করছে। প্রতিদিনই এই কাজ করছে তারা। এছাড়া সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুল ও বেসরকারি (সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত) স্কুলগুলিতেও ৬ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের স্ক্রিনিং করা হয়। রাজ্যের তিনটি জেলা উনকোটি, গোমতী ও ধলাই জেলাতে স্ক্রিনিং সেন্টার রয়েছে। আগামীতে পশ্চিম জেলাতেও একটি এধরণের সেন্টার খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রমে বাঁকা পা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা, নিউরেল টিউব ডিফেক্ট এধরণের জন্মগত সমস্যা নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। রয়েছে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থাও। রাজ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ২১টি এধরণের চিকিৎসা হয়েছে। ২ হাজার ২১টি ঠোঁট কাটা, তালু কাটার চিকিৎসা হয়েছে। ৬৩০টি জন্মগত হৃদরোগের চিকিৎসা হয়েছে। ৪০টি বাঁকা পা এবং ১৫টি নিউরেল টিউব ডিফেক্ট সমস্যায় থাকা ছেলেমেয়েদের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার হয়েছে। ৮৩৫টি শ্রবণ যন্ত্র বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ - ২৪ অর্থ বছরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে প্রায় ৪ লক্ষ ৫ হাজার ৫২১ জন শিশুকে চিহ্নিত করে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। জন্মগত ত্রুটি ও শারীরিক বিকাশজনিত সমস্যার সনাক্তকরণে ৪ লক্ষ ৬ হাজার ১৬১ জন স্কুল পড়ুয়াকে স্ক্রিনিং করা হয়। ২০২৩ - ২৪ অর্থ বছরে রাজ্যে ও রাজ্যের বাইরেও একাধিক হাসপাতালে প্রায় ৯১ জন জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্তকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার করা হয়। এছাড়া ১৪১টি ঠোঁট কাটা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করা হয়। ১০৫টি ক্ষেত্রে পায়ে অস্ত্রোপচার করে ঠিক করা হয়েছে। ৭৩টি শ্রবণ যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। নিউরেল টিউব ডিফেক্ট শিশুদের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। ৬৭ জন অটিজম রোগীকে সুষ্ঠু করা হয়েছে। অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ৩২ হাজার ৭৮৭ শিশুকে চিকিৎসা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগকে আরো উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সকল অংশের জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করার। মুখ্যমন্ত্রী আরো জানান, অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে যতটা সম্ভব তারা রাজ্যে এসে জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা প্রদান করবেন। আমরা চাই যেসকল শিশু এধরণের জন্মগত সমস্যায় আক্রান্ত রয়েছে তারা যাতে ভবিষ্যতে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। 
                         অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব ড. ব্রম্মিত কৌর, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ সঞ্জীব রঞ্জন দেববর্মা, মেডিকেল এডুকেশনের অধিকর্তা ডাঃ এইচ পি শর্মা, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ অঞ্জন দাস, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা রাজীব দত্ত, যুগ্ম মিশন অধিকর্তা বিনয় ভূষণ দাস সহ অন্যান্য অতিথিগণ। অনুষ্ঠানে বেনিফিসিয়ারি শিশুদের পক্ষ থেকে তাদের মা বাবা ও অভিভাবকগণ নিজেদের অভিজ্ঞতা ও রাজ্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ