Advertisement

Responsive Advertisement

৫ বছরে কতটা এগুলো ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’?

                            মোঃ সালাউদ্দিন মিয়াঁ 
(প্রতিবেদক বাংলাদেশের অত্যন্ত সুপরিচিত ব্রডকাস্ট এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি স্পেশালি )


আজ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ৫ বছর পূর্ণ হলো, ২০১৯ সালের ১৯ মে মাসে শুরু হয়েছিল এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম, যদিও একই বছরের অক্টোবর পর্যন্ত কোন গ্রাহক ছিলো না তাদের এবং ২ অক্টোবর ২০১৯ থেকে সকল টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার শুরু করে।  
কিন্তু এই ৫ বছরে কতটুকু এগুলো এই স্যাটেলাইটটি? অর্জনই বা কতটুকু? 
এই স্যাটেলাইটের একজন গ্রাহক ও প্রযুক্তির মানুষ হিসেবে বলবো অনেক দূর এগিয়েছে! হয়তো হেটার্সরা বলবে আমি তেল দিচ্ছি, তবে যাদের স্যাটেলাইট সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে তারা আমার সাথে একমত হবেন। এবং এই স্যাটেলাইটটির সফলতা, প্রত্যাশার চেয়ে এতটাই বেশি হয়েছে যেটা হয়তো ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ কর্তৃপক্ষ নিজেরাও বুঝতে পারছে না, নইলে তারা এটা নিয়ে অনেক বেশি ঢাকডোল পেটাতে পারতো। 

সফলতার প্রসঙ্গে আসি-
বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ব্যবহারকারী বাংলাদেশ সহ মোট ৮টি দেশ । এবং সবমিলিয়ে প্রায় ৭৩টি টিভি চ্যানেল সম্প্রচার হচ্ছে (আলাদা আলাদা চ্যানেলের স্লট হিসেবে)। এরমধ্যে আবার বাংলাদেশ বেতার প্রায় ৯টি স্লট ব্যবহার করছে যা আরও কয়েকটি টিভি চ্যানেলের স্লটের সমান। অন্যদিকে প্রতিটি স্যাটেলাইটের রয়েছে একটি নির্দিষ্ট ক্যাপাসিটি যা সাধারণত ‘ট্রান্সপোন্ডার’এর সংখ্যা দিয়ে হিসেব করা হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ক্যাপাসিটি হলো- ১৪টি সি-ব্যান্ড ট্রান্সপোন্ডার ও ২৬টি কে.ইউ ব্যান্ড ট্রান্সপোন্ডার, মোট ৪০টি ট্রান্সপোন্ডার। এর মধ্যে টিভি চ্যানেলগুলো ব্যবহার করে সি-ব্যান্ড এবং আকাশ ডিটিএইচ ব্যবহার করছে কেইউ ব্যান্ড। টিভি চ্যানেল ও রেডিও মিলে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সি-ব্যান্ডের ক্যাপাসিটি প্রায় শেষ দিকে। অন্যদিকে আকাশ ডিটিএইচ কেইউ ব্যান্ডের অনেক জায়গা ব্যবহার করছে। স্যাটেলাইটের সিংহভাগ ক্যাপাসিটি ব্যবহারের উদাহরণ বিশ্বে হাতে গোনা কয়েকটি স্যাটেলাইটের রয়েছে যার মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ একটি। 
সবমিলিয়ে গ্রাহক ও ক্যাপাসিটির ব্যবহার হিসেবে এই স্যাটেলাইটটির লোকসান হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকার কথা নয়। এবং এর আয় ব্যয় এর হিসেব নিকাশ একটু মাথা খাটালেই বের করা যায় এবং এখানে সরকারি অন্যান্য খাতের মতো পুকুরচুরি হওয়ার সম্ভাবনাও নাই বললেই চলে। 

ব্যর্থতার প্রসঙ্গে বলি-
স্যাটেলাইট মানেই সম্প্রচার ব্যবস্থা চলবে বিনা তারে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চলে তার সংযোগের মাধ্যমে। প্রতিটি টিভি চ্যানেল থেকে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে অডিও-ভিডিও যায় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে’র গ্রাউন্ডস্টেশনে এবং সেখান থেকে এটি আবার রিলে হয়। কোন কারণে যদি টিভি চ্যানেল ও গ্রাউন্ডস্টেশনের মাঝে ফাইবার অপটিক সংযোগে সমস্যা হয় তাহলে সেই চ্যানেল ব্ল্যাক। একাধিকবার এরকম ঘটেছে, প্রতিদিনই ছোটখাটো কিছু অদৃশ্য বা দৃশ্যমান সমস্যা থাকেই। এবং কিছুদিন আগে ফাইবার অপটিক সংযোগ ব্যবস্থায় সমস্যার কারণে দেশের প্রায় সবগুলো টিভি চ্যানেলই প্রায় ২০ মিনিটের উপরে সম্প্রচার বন্ধ ছিল। এরকম দুর্ঘটনার উদাহারণ সারা বিশ্বে হয়তো নেই বললেই চলে। 
যদিও এই ব্যর্থতার দায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নয়, এর দায় আমাদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। তারবিহীন সম্প্রচারের জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত থাকলেও না বুঝেই এক অদৃশ্য গ্যাড়াকলে আমলাদের অতি বুদ্ধিতে তারের বন্ধনে আটকে আছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সম্প্রচার প্রক্রিয়া। 
সবশেষে শুভ কামনা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর জন্য। 
উল্লেখ্য, আমি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানীর কেউ না।

( লেখাটি মোঃ সালাউদ্দিন মিয়াঁ'র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে, তার অনুমতিক্রমে প্রকাশ করা হয়েছে। লেখাতে সংবাদ মাধ্যমের তরফে কোন ধরনের পরিবর্তন পরিবর্ধন ও সংযোজন করা হয়নি)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ