Advertisement

Responsive Advertisement

পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের উপর আগরতলায় তিনদিন ব্যাপী আঞ্চলিক আলোচনাসভা

আগরতলা, ১৫ মার্চ : কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের উদ্যোগে উত্তর পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য সহ উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড়কে নিয়ে ত্রিপুরায় ১৪ মার্চ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী আঞ্চলিক পর্যালোচনামূলক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। ১৪ মার্চ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব তথা জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা শ্রীমতি এল এস চ্যাঙসাং মহাশয়া। এই ৩ দিনের পর্যালোচনামূলক আলোচনাসভায় ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জাপানিজ এনকেফেলাইটিস প্রভৃতি পতঙ্গবাহিত রোগ এবং তার প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে। তাছাড়া এই কর্মসূচীর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় পর্যলোচনা করা হচ্ছে। জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প মূলত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জাপানিজ এনকেফেলাইটিস, কালাজ্বর এবং লিমফেটিক ফাইলেরিয়াসিসের মতো ৬ টি পতঙ্গ বাহিত রোগের সাথে মোকাবিলা করছে। তাদের মধ্যে ত্রিপুরায় ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ছাড়াও চিকুনগুনিয়া এবং জাপানিজ এনকেফেলাইটিসের রোগী পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত ত্রিপুরায় কালাজ্বর এবং লিমফেটিক ফাইলেরিয়াসিস জনিত কোনও রোগের সংক্রমণ নেই।
উত্তর পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য আসাম, মেঘালয়, মনিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, অরুনাচলপ্রদেশ, ত্রিপুরা সহ উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড, ছত্রিশগড় থেকে আগত প্রতিনিধিরাও এই আলোচনাসভায় অংশ নিয়েছেন। তাছাড়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন জাতীয় পতঙ্গ বাহিত রোগ বিভাগের যুগ্ম সচীব শ্রী রাজীব মাঁঝি মহাশয়, রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের সচীব শ্রী কিরণ গীত্তে মহাশয়, রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের অতিরিক্ত সচীব শ্রীমতি ব্রাহ্মীৎ কৌর মহাশয়া, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন জাতীয় পতঙ্গ বাহিত রোগ নির্মলীকরণ প্রকল্পের অধিকর্তা ডা: তনু জৈন মহাশয়া, রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকারের অধিকর্তা ডা: সঞ্জীব দেববর্মা মহাশয়, রাজ্য পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধক অধিকারের অধিকর্তা ডা: অঞ্জন দাস, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন, ত্রিপুরার যুগ্ম মিশন অধিকর্তা শ্রী বি বি দাস মহাশয় প্রমুখ।
জনসাধারণের কাছে যেন আরও উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা সঠিক সময়ে পৌঁছে দেওয়া যায় তার উপর আলোকপাত করেন শ্রীমতি এল এস চ্যাঙসাং মহাশয়া। তিনি কমিউনিটি হেলথ অফিসার, আশা কর্মী এবং আশা ফেসিলিটেটরদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন জাতীয় পতঙ্গ বাহিত রোগ বিভাগের যুগ্ম সচীব শ্রী রাজীব মাঁঝি ১৫ মার্চ আগরতলা গর্ভনমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ এবং জি বি হাসপাতালের জেরিয়াট্রিক বিভাগ এবং অটল বিহারী বাজপেয়ী রিজিওন্যাল ক্যান্সার হাসপাতাল ভিজিট করেন এবং রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
১৩ মার্চ আগরতলা মহাকরণে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব তথা জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা শ্রীমতি এল এস চ্যাঙসাং মহাশয়ার পৌরহিত্যে রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক আয়োজিত হয়। এই বৈঠকে জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২৭ সালের মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যকে ম্যালেরিয়া মুক্ত রাজ্য হিসাবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোচনা হয়।
১৫ মার্চ আঞ্চলিক পর্যালোচনামূলক আলোচনাসভার উপর প্রজ্ঞাভবনে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন জাতীয় পতঙ্গ বাহিত রোগ বিভাগের যুগ। সচীব শ্রী রাজীব মাঁঝি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন জাতীয় পতঙ্গ বাহিত রোগ বিভাগের যুগ্ম অধিকর্তা ডাঃ প্রনব জ্যোতি ভূঁইয়া, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন, ত্রিপুরার দায়িত্বপ্রাপ্ত মিশন অধিকর্তা শ্রী বিনয় ভূষন দাস, রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সমিতির সদস্য সচিব ডা: নূপুর দেববর্মা, জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের স্টেট প্রোগ্রাম অফিসার, ডাঃ অভিজিৎ দাস প্রমুখ।
ত্রিপুরা রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের আওতাধীন জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রচেষ্টায় ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গ্রাম পাহাড়ে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই বছর ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত ত্রিপুরা রাজ্যে ম্যালেরিয়া সনাক্তকরণের জন্য মোট ১ লক্ষ্য ৫৩ হাজার ৬৫৪ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়, যার মধ্যে ৭৭৫ জনের রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু সনাক্ত হয়েছে। প্রত্যেককেই বিনামূল্যে সম্পূর্ণ চিকিৎসা পরিসেবার মাধ্যমে সুস্থ করা হয়েছে। ফলে এই বছর এখনও পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ