মানবসভ্যতার যাত্রাপথে আকাশ জয়ের গল্প একদিকে যেমন রোমাঞ্চে ভরা, অন্যদিকে তেমনই প্রযুক্তিগত অগ্রগতির অবিচ্ছেদ্য দৃষ্টান্ত। আজ যে আন্তর্জাতিক আকাশপথে প্রতিদিন হাজার হাজার উড়োজাহাজ ছুটে চলে, তার শেকড় লুকিয়ে আছে এক শতাব্দীরও বেশি পুরনো এক ঐতিহাসিক উদ্যোগে। সেই উদ্যোগের নাম কে-এল-এম—পৃথিবীর সর্বাধিক প্রাচীন এবং এখনও কার্যরত বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ সংস্থা।
কে-এল-এম প্রতিষ্ঠিত হয় সাত অক্টোবর উনিশ শত উনিশ সালে। উড়োজাহাজ চলাচলের ইতিহাসে এটি ছিল এমন এক সংস্থা, যা প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত একই নামে টিকে আছে। এ কারণেই এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো সক্রিয় বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ সংস্থা হিসাবে স্বীকৃত।
প্রথম দিকে এই সংস্থার উড়ান সীমাবদ্ধ ছিল ইউরোপের মধ্যে। নিয়মিত যাত্রীবাহী উড়ান শুরু হয় নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য—এই দুই দেশের মধ্যে। আমস্টারডাম ও লন্ডনের মধ্যে ডাক ও যাত্রী বহন করে শুরু হয়েছিল সেই প্রথম আন্তর্জাতিক আকাশযাত্রা।
পরবর্তীতে সংস্থাটি তার উড়ানপথ বাড়িয়ে দেয় জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ডসহ বহু দেশে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই কে-এল-এম ছিল বিশ্বের অন্যতম বিস্তৃত আন্তর্জাতিক আকাশপথের অধিকারী প্রতিষ্ঠান।
আজ আমরা যাকে আধুনিক আকাশযান ব্যবস্থা বলে জানি, তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিল এই সংস্থা। সে সময়ে আকাশযাত্রা ছিল বিপজ্জনক ও অত্যন্ত চ্যালেঞ্জপূর্ণ। আবহাওয়া অনির্ভরশীল, যন্ত্রপাতি পরীক্ষামূলক, নিরাপত্তা অনিশ্চিত—সব মিলিয়ে উড়োজাহাজ চালনা তখনও ছিল পরীক্ষার পর্যায়ে। এমন সময়কে অতিক্রম করে কে-এল-এম যাত্রী ও পণ্য পরিবহণকে নিয়মিত, নির্ভরযোগ্য এবং বাণিজ্যিকভাবে সফল করতে সক্ষম হয়।
শতবর্ষ অতিক্রম করেও সংস্থাটি আজো বিশ্বের অন্যতম সুনামধন্য উড়োজাহাজ পরিষেবা। প্রযুক্তির উন্নতি, নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ, যাত্রীসেবা ও আকাশপথে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সংস্থাটি তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
পৃথিবীর আকাশপথে আধুনিক যাত্রা শুরু হয়েছিল নেদারল্যান্ডসের সেই প্রথম দুঃসাহসী উড়ান থেকে। কে-এল-এম শুধু একটি সংস্থার নাম নয়; এটি মানুষের অদম্য প্রচেষ্টার ইতিহাস, আকাশজয়ের স্বপ্নের বাস্তব রূপ। আজও সেই ঐতিহাসিক যাত্রা চলমান, আর ভবিষ্যতেও থাকবে মানব অগ্রগতির এক উজ্জ্বল প্রতীক হিসেবে।
0 মন্তব্যসমূহ