Advertisement

Responsive Advertisement

এআরসি পদ্ধতির সহায়তায় ২০৩০ সালের মধ্যে রাজ্য আলু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে: রতন নাথ


সুদীপ নাথ, আগরতলা, ২২ আগস্ট: শুক্রবার একই দিনে রাজ্য সরকারের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ রাজ্যিক উদ্যান ও বাগিচা ফসল গবেষণা কেন্দ্রে একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নিলেন। এদিন দুপুরে মন্ত্রী প্রথমে রাজ্যিক উদ্যান এবং বাগিচা ফসল গবেষণা কেন্দ্রের ফ্রুট ব্লকে যান। মন্ত্রী পৌছার সঙ্গে সঙ্গে গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ড. রাজীব ঘোষ তাকে ফুলের তোড়া এবং উত্তরীয় দিয়ে বরণ করে নেন। সেখানে তিনি ফলের রানী হিসেবে পরিচিত ম্যাংগোস্টোন গাছের চারা রোপন করেন। এই সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন দপ্তরের অধিকর্তা ড. ফনি ভূষণ জমাতিয়া, জয়েন্ট ডিরেক্টর রাজীব দেববর্মাসহ বিভিন্ন কৃষি মহকুমার সুপার এন্টেন এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরসহ অন্যান্য আধিকারিকরা। সকল আধিকারিকরা মিলে আরো একটি ম্যাংগোস্টোন গাছের চারা রোপন করেন। রাজ্যে প্রথম এই ফল গাছের চারা নিয়ে আসা হলো, মূল্যবান এই ফল বাণিজ্যিক ভাবে রাজ্যে কতটুকু উৎপাদন করা সম্ভব এই বিষয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করা হবে।
পাশাপাশি মন্ত্রী এ দিন আরো একটি ফলের আহরণ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এই ফলটি হল রামবুটান, যা হেয়ারিলিচি নামেও অপরিচিত। বিদেশি এই ফল গাছের চারা গত কয়েক বছর আগে গবেষণা কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। গত বছর থেকে এই গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। প্রথম বছর খুব সামান্য পরিমাণে ফল ধরলেও এ বছর সঠিক পরিচর্যার ফলে গাছে বিপুল পরিমাণে ফলন এসেছে। মন্ত্রী এদিন নিজ হাতে গাছ থেকে রামবুটান ফল পেড়ে এর স্বাদ গ্রহণ করেন। মন্ত্রীর পাশাপাশি উপস্থিত দপ্তরের আধিকারিক এবং সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা এই ফলটি খান। ফলের সাধের জন্য সকলেই প্রশংসা করেন।
এই বিষয়ে নিজের অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিককালে রাজ্যে বহু নতুন ধরনের ফলের গাছ নিয়ে আসা হয়েছে দেশের অন্যান্য প্রান্ত এমনকি বিদেশ থেকে। নতুন জাতের ফল গুলো ত্রিপুরা রাজ্যের মাটিতে বাণিজ্যিক ভাবে চাষের উপযোগী কিনা তা রাজ্যিক উদ্যান এবং বাগিচা ফসল গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষা মূলক ভাবে প্রথমে চাষ করে দেখা হয়। যখন দেখা যায় এই ফলগুলো বাণিজ্যিকভাবে চাষের উপযুক্ত তখন কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরীক্ষামূলক যা সে দেখা যাচ্ছে রামবুটান, অ্যাবাকার্ডো সহ আরো বেশ কিছু জাতের ফোন রাজ্যের মাটিতে চাষের উপযোগী। তাই এই ফলগুলো চাষের জন্য কৃষকদেরকে উৎসাহিত এবং সহযোগিতা করা হবে। অরুণাচল প্রদেশ থেকে কিউ গাছের চারা ও রাজ্যে নিয়ে আসা হবে চাষের জন্য বলেও জানান তিনি। ইতিমধ্যে রাজ্যের ২৬ হেক্টর জমিতে অ্যাবাকাডো চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান। ব্লুবেরি ব্ল্যাকবেরি মত ফল চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এর পরবর্তী পর্যায়ে গবেষণা কেন্দ্রের কনফারেন্স হলে এআরসি পদ্ধতিতে আলু চাষ এবং এআরসি পদ্ধতির আলুকে অর্গানিক উপায়ে চাষ করার বিষয়ে এক পর্যালোচনা বৈঠক করেন। এই বইটাকে অন্যান্য আধিকারিকদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা অপূর্ব রায়ও।
পর্যালোচনা বৈঠকের পাশাপাশি এআরসি পদ্ধতিতে আলু চাষ এবং সহজে মাশরুম চাষ বিষয়ক দুটি পুস্তিকার আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করেন মন্ত্রীসহ উপস্থিত আধিকারিকরা।  মন্ত্রী জানার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজ্যে মাত্র ৩৬ বিঘা জমিতে এআরসি পদ্ধতিতে আলু চাষ করা হয়েছিল। এরপরের অর্থ বছরে ১২৮ বিঘা জমিতে ৪১০ জন কৃষক চাষ করেছেন এ আরসি আলু। এ বছর শীতের মরশুমে রাজ্যের আটটি জেলায় ২,০৮৭এ আরসি পদ্ধতিতে আলু চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২৫০ বিঘা জমিতে এ আর সি পদ্ধতিতে অর্গানিক আলু চাষ করা হবে। মন্ত্রী আরো জানান কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের পরিকল্পনা রয়েছে ২০২৮-২৯ অর্থবছরে রাজ্যকে আলুবীজ উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে। বহি রাজ্য থেকে তখন যেন আলু বীজ আনতে না হয় এই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে কাজ করা হচ্ছে।

এই কাজে রাজ্যিক উদ্যান এবং বাগিচা ফসল গবেষণা কেন্দ্রের পাশাপাশি মাইক্রো ওয়াটার শেড ম্যানেজমেন্ট এবং এমওবিসিডিকে যুক্ত করা হয়েছে। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০২৯-৩০ খাবার আলু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাবে রাজ্য।
সেই সঙ্গে মন্ত্রী এদিন জম্পুই পাহাড়ের সুপারি গাছে যে রোগের প্রকৃত দেখা দিয়েছে এই বিষয়ে দপ্তর সচেতন রয়েছে বলেও জানান। তিনি বলেন যে রোগের বিষয়ে জানতে পেরে ডক্টর রাজীব ঘোষের নেতৃত্বে একটি টিমকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল, তারা রোগাক্রান্ত বাগান গুলো পরিদর্শনের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরবর্তী সময়ে একটি রিপোর্ট জমা করেছেন। এই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে দপ্তর কৃষকদের জন্য ব্যাটারি চালিত চল্লিশটি স্প্রে মেশিন বরাদ্দ করা হয়েছে। পাঁচটি ফুট স্প্রে মেশিন কীটনাশক রোগের প্রয়োজনীয় ঔষধ ইত্যাদি বিনামূল্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে জম্পুই এলাকার চাষীরা কোকো, বড় এলাচি, তুঙ্গ এবং অ্যাবাকার্ডো চাষের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ সকল চাষের জন্য দপ্তর একটি টিমকে জোরহাটে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। এই টিমে আধিকারিকদের পাশাপাশি জম্পুই এলাকার দুইজন কৃষক রয়েছেন। সবমিলিয়ার সরকার কৃষকদের যার জন্য একের পর এক কাজ করতে বলে জানান মন্ত্রী। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ