Advertisement

Responsive Advertisement

প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষকদের কল্যাণে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার: মুখ্যমন্ত্রী


আগরতলা, ২৯ মে: কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। ২০১৫ - ১৬ অর্থ বছরের তুলনায় কৃষকদের আয় এখন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। 

                              দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সিপাহীজলা জেলার বিশ্রামগঞ্জে আয়োজিত বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযানে অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী রতন লাল নাথ। 
                                  অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকদের উন্নয়ন করার লক্ষ্যে এই অভিযানের সূচনা করা হয়েছে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষকদের কল্যাণ সাধন করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কৃষকদের আর্থিকভাবে শক্তিশালী করতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। সেই দিশায় কাজ করছে আমাদের রাজ্য সরকারও। আধুনিক প্রযুক্তির ধারণা সম্পর্কে কৃষকদের আরো অবগত করাই হচ্ছে বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য। এরফলে আগামীতে কৃষি ক্ষেত্র আরো উন্নত হবে। উন্নত মানের ও গুণগত মানের ফসল ফলানো আরো সহায়ক হবে। 
                          মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি দিল্লিতে রাইজিং নর্থইস্ট ইনভেস্টরস সামিট অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি অর্থাৎ অষ্টলক্ষী অংশগ্রহণ করেছে। আর সেখানে ৩০ হাজার কোটি টাকার মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরমধ্যে ত্রিপুরাতে ১৫,৬০০ কোটি টাকার অধিক মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। কারণ মানুষ এখন ত্রিপুরায় আসতে চাইছেন। কৃষকরা এখন আর আগের অবস্থায় নেই। আমাদের সরকার আসার পর কৃষকদের আয় বেড়েছে। আমরা চাইছি তাদের রোজগার আরো বৃদ্ধি হোক। ভারতবর্ষের গ্রামীণ এলাকায় প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের বাস। কৃষকরা উন্নত হলেই দেশ ও রাজ্য এগিয়ে যাবে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষকদের চাষাবাদে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) ও ড্রোন প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। 
                                      অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ২০২৪ সালে ত্রিপুরায় ডিজিটাল কৃষি মিশনের অধীনে এআই ভিত্তিক ক্রপ এডভাইজারি সিস্টেমকে যাতে আরো ভালো করা যায় সেজন্য নীতি অয়োগ ও কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা ক্রমে কাজ চলছে। এতে অনেক সুবিধা হয়েছে। সবকিছুতে সংস্কার ও রূপান্তরে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পরবর্তী সবুজ বিপ্লব শুধু ট্রাক্টরের উপর নির্ভর না করে প্রযুক্তি নির্ভর ও কৃষকদের অটল চেতনা জাগ্রত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামীতে পুষ্টিগত অর্থনীতিতে উন্নতিকরণ, কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করা ও স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৬টি কৌশল স্থির করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এরমধ্যে রয়েছে - কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা, খরচ হ্রাস করা, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, ক্ষয়ক্ষতি কম করার দিকে নজর রাখা, বৈচিত্র্যকরণ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও মূল্য সংযোজন এবং প্রাকৃতিক ও জৈব চাষে উৎসাহিত করা। 
                                   অনুষ্ঠানে তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে বর্তমানে কৃষকের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৭২ হাজারের উপর রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন কৃষকরা আমাদের অন্নদাতা। তাই তাদের দেখে রাখতে হবে এবং সেরা প্রযুক্তিগুলি দিতে হবে। রাজ্যে কৃষকদের আয় প্রায় ১৩,৫৯০ টাকা হয়েছে। যেখানে ২০১৫ - ১৬তে ছিল ৬,৫৮০ টাকা। প্রধানমন্ত্রী কৃষি সম্মান নিধি ১৯ কিস্তি দেওয়া হয়েছে। তাতে প্রায় ৮৪৩ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকার অধিক অর্থ দেওয়া হয়েছে। কোন মিডলম্যান ছাড়াই সরাসরি কৃষকদের একাউন্টে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় প্রায় ১০ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকার অধিক দেওয়া হয়েছে। আমাদের সরকার আসার পর কৃষকদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। এতে প্রতি কেজিতে ২৩ টাকা মূল্যে প্রায় ৪৪৬ কোটি টাকার অধিক অর্থ দেওয়া হয়েছে। সয়েল হেল্থ কার্ড প্রায় ২ লক্ষ ৬ হাজারের অধিক বিতরণ করা হয়েছে। ৫৮টি ব্লকে একটি করে এফপিও গঠন করা হয়েছে। কৃষকদের উন্নতমানের কৃষি যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন বাজারগুলিতে পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৪৪টি বাজারের পরিকাঠামো উন্নয়নে ৩০৩ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে সহায়তা করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

                                   অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপাহীজলা জেলার সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, কৃষি দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, সিপাহীজলা জেলার জেলাশাসক ড. সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ। উল্লেখ্য, এই বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযান চলবে আগামী ১২ জুন পর্যন্ত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ