Advertisement

Responsive Advertisement

২০৪৭ সালের মধ্যে রাজ্যে মাথা পিছু আয় ২৩০০০ মার্কিন ডলারে বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে: মুখ্যমন্ত্রী



আগরতলা, ২৪ মে: উন্নত এবং শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গঠন করার লক্ষ্যে ত্রিপুরা সরকার একটি কৌশলগত রোডম্যাপ তৈরী করেছে। গত ১ বছর ধরে নীতিআয়োগ, উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতা, শিল্প এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ, প্রতিথযশা নাগরিক ও আধিকারিকদের সঙ্গে নিবিড় আলোচনার পর এই রোডম্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। 
আজ নয়াদিল্লির ভারত মন্ডপমে নীতিআয়োগের গভর্নিং কাউন্সিলের ১০ম বৈঠকে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় ৯টি বিশেষ ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে যেগুলির মাধ্যমে আগামী দুই দশকে প্রতি বছর ১২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। এগুলি হচ্ছে শক্তিশালী কৃষিক্ষেত্র, উচ্চ স্বাক্ষরতার হার, সমৃদ্ধ পর্যটন ক্ষেত্র, প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য, বনভিত্তিক অর্থনীতি, উন্নত পরিকাঠামো, কৌশলগত অবস্থান, প্রসারিত কর ভিত্তি এবং বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত রাজ্য। তিনি বলেন, এই সহায়ক উপাদানগুলিকে সহায়তা করছে শাসন ব্যবস্থার পাঁচটি স্তম্ভ। এগুলি হচ্ছে নীতিগত সংস্কার, প্রতিষ্ঠান গঠন, দক্ষতা বৃদ্ধি, ব্যবসা সংস্কার এবং নিয়ম মানার বোঝা হ্রাস ও ডিজিট্যাল শাসন ব্যবস্থা। ত্রিপুরায় রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে শুরু করে গ্রামপঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত ই-অফিস চালু করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রগতিশীল নীতি, স্বচ্ছ প্রশাসন এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ কার্যকর করতে গিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও এগুলি সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

                                মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসা কল্যাণ, ইকো ট্যুরিজম, তথ্য প্রযুক্তি, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি, স্থিতিশীল কৃষি, সমৃদ্ধি ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং খেলাধুলার উপর জোর দিয়ে ২০৪৭ সালের মধ্যে মাথা পিছু আয় ২৩০০ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি করে ২৩০০০ মার্কিন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, মুখ্যসচিবদের চতুর্থ জাতীয় কনফারেন্সের আলোচনার নিরিখে ৩টি প্রধান স্তম্ভ এবং ৬টি উপবিষয়ের উপর জেলাভিত্তিক সচেতনতা সভা করা হয়েছে।

                             মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার মতো ত্রিস্তরীয় শহরে উৎপাদন ও পরিষেবা খাতকে ত্বরান্বিত করার জন্য ২০টি শিল্পাঞ্চলে শিল্প পরিকাঠামো তৈরী করা হচ্ছে। উৎপাদন এবং পরিষেবা খাতকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনভেস্টমেন্ট পলিসি ২০২৪ চালু করা হয়েছে। বিজনেস রিফর্মস অ্যাকশন প্ল্যান ২০২৪ অনুযায়ী ৩৮৭টি ব্যবসা সংস্কারের সবকয়টি বাস্তবায়ণ করা হয়েছে। ত্রিপুরা জনবিশ্বাস অ্যাক্ট ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সচিবালয়ের অধীনে গঠিত ডিরেগুলেশান টাক্সফোর্সের দিক নির্দেশনায় রাজ্য আইন, স্থানীয় সংস্কার, শিল্পনিগম এবং ইউটিলিটি প্রদানকারী সংস্থাগুলির মধ্যে নিয়ম মানার বোঝা হ্রাস করা হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে রাবার, বাঁশ প্রক্রিয়াকরণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ডেটা সেন্টার, আতিথেয়তা, ব্যবসা ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যহারে বিনিয়োগ হচ্ছে।

                        সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় ৮৬,১১৭টি মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই) রয়েছে। রাজ্যে ৬০,৩১৮টি শক্তিশালী স্বসহায়ক গোষ্ঠী রয়েছে, যেগুলির সঙ্গে ৫,৪৯,৫৫৯ জন সদস্য এবং ৯৪,৭২৩ জন লাখপতি দিদি রয়েছেন। স্বসহায়ক গোষ্ঠীর সদস্যদের উদ্যোগপতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাঁশ, আগর কাঠ, রাবার, মশলা, ডেয়ারি, অ্যাকোয়া কালচার এবং ইকো ট্যুরিজম খাতে সম্ভাবনা উন্মোচনের মাধ্যমে গ্রামীণ অ-কৃষি কর্মসংস্থানের দৃশ্যপট পরিবর্তনের জন্য কাজ করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সমস্ত উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করতে আমরা নীতি আয়োগ ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সহায়তা চাইছি। তিনি বলেন, পিএম বিশ্বকর্মা, পিএম স্বনিধি এবং প্রধানমন্ত্রী মাইক্রো ফুড প্রসেসিং এন্টারপ্রাইজ ফর্মালাইজেশন স্কিমের (পিএমএফএমই) সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে শহুরে দক্ষতা উন্নয়ন ও এমএসএমই বিকাশে রাজ্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

                          মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একটি শক্তিশালী কৌশলের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার লক্ষ্য ২০৪৭ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি অর্জন। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী হল সহজ জমি বরাদ্দ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৌর শক্তি প্রকল্পের প্রচার করা, ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং এবং আবাসিক সরকারি ও বাণিজ্যিক খাতে রুফটপ সোলারের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বায়োএনার্জির জন্য আমরা বাঁশ ও বনজ বায়োমাসের মতো স্থানীয় শক্তিকে কাজে লাগাতে চাই। নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্যে পৌঁছাতে ৮০০ মেগাওয়াট পাম্পড স্টোরেজ প্রকল্প তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

                                     মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যুব সমাজ এবং মহিলাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সার্বজনীন সরকারের ও সমাজের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি রাজ্য নির্দিষ্ট সবুজ অর্থনীতি নীতিমালা গঠন করতে চাই। একটি শক্তিশালী গ্রীণ স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমও তৈরি করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নে যথেষ্ট বিনিয়োগ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার এবং বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে ইঞ্জিনীয়ারিং, মেডিক্যাল, ফার্মেসি, নার্সিং ও ভোকেশনাল শিক্ষার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার সাধারণ এবং কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলিতে ইনকিউবেশান সেন্টার স্থাপন করেছে যাতে যুব সমাজ তাদের ভাবনাকে স্টার্টআপ এবং উদ্যোগে রূপান্তর করতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা চাকুরি প্রার্থী নয় বরং চাকুরি সৃষ্টিকারী তৈরি করতে মনযোগ দিচ্ছি। পর্যটন, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, চলচ্চিত্র নির্মাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে যুবসমাজকে সুযোগ ও পথপ্রদর্শন করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত ৩ বছরে রাজ্যের ১৫ শতাংশের বেশি জিডিপি'র বৃদ্ধির হার আমাদের যাত্রা যে ইতিবাচক ভাবেই শুরু হয়েছে তা প্রমাণ করে।

                         মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা তাঁর বক্তব্যে অপারেশন সিন্দুরের সফল বাস্তবায়ণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং সশস্ত্রবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অপারেশন সিন্দুর আমাদের শক্তি, ঐক্য এবং দেশ রক্ষার সম্মিলিত ঐক্যের প্রতীক। এই অভিযানের সাফল্য জাতীয় নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদের প্রতি শূন্য সহনশীলতা প্রদর্শনে একটি দৃঢ় বার্তা প্রদান করছে।

                       বৈঠকে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীগণ, বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সমূহের উপরাজ্যপাল, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীগণ, নীতিআয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান এবং সদস্যগণ অংশ নেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ