Advertisement

Responsive Advertisement

বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে রাগি চাষ

        বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে রাগি চাষ
ভারতে উৎপাদিত দানা শস্যের মধ্যে রাগি অন্যতম। দেশের বিভিন্ন পাহাড়ী অঞ্চলে এটি একটি প্রধান খাদ্যশস্য। খাদ্যশস্য ও গবাদী পশুর খাবার হিসেবেও এটি চাষ করা হয়। রাগির দানায় ৯.২% প্রোটিন, ১.২৯% স্নেহপদার্থ, ৭৬.৩২% শর্করা, ২.২৪% খনিজ পদার্থ, ৩.৯% ছাই ও ০.৩৩% ক্যালসিয়াম থাকে।
এছাড়াও এই দানায় ভিটামিন এ, বি ও অল্প মাত্রায় ফসফরাস ও থাকে। পাহাড়ী অঞ্চলে রাগি দানা দিয়ে চাপাটি ও হালুয়া তৈরী করা হয়। দক্ষিন ভারতে এটি কেক, মিষ্টি প্রভৃতি তৈরিতে ব্যবহৃতহয়। অঙ্কুরিত রাগি দানা শিশুদের খাদ্য হিসাবে খুবই উপযোগী। পাহাড়ী অঞ্চলের কিছু জেলায় অল্প বিস্তর রাগির চাষ (Ragi Cultivation) হয়। রাগি চাষে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।

রাগির পুষ্টির মান
প্রতি ১০০ গ্রামে:

১৯.১ গ্রাম মোট ডায়েটরি ফাইবার
০.৪৭ মিলিগ্রাম তামা
১০২ মিলিগ্রাম মোট ফেনোল
৫.৪৯ মিলিগ্রাম ম্যাঙ্গানিজ
৭২.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
২.৩ মিলিগ্রাম দস্তা
৩৪৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
০.৪২ মিলিগ্রাম থায়ামিন
২৮৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস
০.১৯ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লেভিন
৩.৯ মিলিগ্রাম আয়রন
১.১ মিলিগ্রাম নিয়াসিন
১৩৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম
৪০৮ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম
১১ মিলিগ্রাম সোডিয়াম

রাগির ১০টি আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ-

১. হাড় শক্ত করা
২. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করা
৩. স্থূলত্ব রোধ করে
৪. হৃদযন্ত্রকে ভাল রাখে
৫. শক্তি সরবরাহ করে
৬. দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ করে
৭. রক্তল্পতা দূর করে
৮. দুগ্ধদানকারী মায়েদের পক্ষে ভাল
৯. হজমে উন্নতি করে
১০. বার্ধক্য বিলম্বিত করে

রাগি চাষে উচ্চ ফলনশীল উন্নত জাত:

কে. এম. আর.-৩৪০, ডব্লিও, ডব্লিও, এন-৫১, জি. এন. -৫, জি. এন. -৯, জি. এন.-৭ ইত্যাদি জাত ভাল ফলন দেয়।
জলবায়ুঃ
ক্রান্তীয় ও উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ু রাগি চাষের জন্য উপযোগী। রাগির বীজ অঙ্কুরোদ্ধমের জন্য ২০-৩০ ডিগ্রী সেন্ট্রিগ্রেড তাপমাত্রা, বৃদ্ধি ও উৎপাদনের জন্য গড় ২৬-২৯ ডিগ্রী সেন্ট্রিগ্রেড তাপমাত্রা ও বার্ষিক গড় ৫০০-৯০০ মিমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন হয়। জলনিকাশীর ব্যবস্থা থাকলে ভারী বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে চারা রোপন করে চাষ করা যায়।

মাটি:
রাগি উর্বর-অনুর্বর সব জমিতে চাষ করা যায়। তবে ভাল নিকাশী ব্যবস্থা যুক্ত দোআঁশ বা কাদা দোআঁশ মাটি রাগি চাষের পক্ষে উপযোগী। হালকা লবনাক্ত মাটিতেও রাগি চাষ করা যেতে পারে।

চাষের সময়:
খরিপ মৌসুমে দেশের যে সময় ৯০ শতাংশের বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে তখন এটি চাষ করা হয়।

জমি তৈরী:
গভীর চাষ দিয়ে, ২-৩ বার মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুর এবং সমতল করে নিতে হবে। জমি থেকে আগাছা ও পূর্ববর্তী ফসলের অবশিষ্টাংশ তুলে ফেলা জরুরী। বীজগুলি খুব ছোট হয় এবং অঙ্কুরিত হতে ৫-৭ দিন সময় নেয়। সুতরাং ভাল বীজ, ভালোভাবে জমি প্রস্তুতি, আগাছা সমস্যা হ্রাস এবং কার্যকর মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণ ভালো ভাবে অঙ্কুরোদ্মমের সহায়তা করে।

রোপণ:
লাইন বপন উপকারীতা আন্তঃ চাষ এবং কার্যকরভাবে আগাছা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। প্রতি হেক্টর ৪-৫ লক্ষ গাছের সর্বোত্তম গাছের সংখ্যা বজায় রাখা জরুরী। জমি তৈরির পরে সার প্রয়োগ করতে হবে। রোপন দূরত্ব রাখতে হবে ব্যবধান স্বল্পমেয়াদী জাত ২০ সেমি x ১০ সেমি, মাঝারি মেয়াদী জাতগুলি ২২.৫ সেমি x ১০ সেমি।

সার প্রয়োগ:
মাটি পরীক্ষার পর পরামর্শ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করা ভাল। ৪০:২০১২০ (এই মাত্রায় NPK প্রতি হেক্টরে) স্বল্পকালীন জাতগুলির জন্য সুপারিশ করা হয়। ৬০:৩০:৩০ ( এই মাত্রায় NPK প্রতি হেক্টরে) মাঝারি জাতগুলির জন্য সুপারিশ করা হয়। নাইট্রোজেনকে ২ ভাগে ভাগ করে ৫০% জমি তৈরির সময় এবং বাকি ৫০% Top Dressing হিসাবে ফুল আসার আগে প্রয়োগ করা উচিত।

আগাছা দামনঃ
চাষের জমি সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। রোপনের ১৫-২০ দিন পর থেকে শুরু করতে হবে জমি পরিষ্কারের কাজ।

ফসল সংগ্রাহ:
শস্যটি প্রায় ১২০-১৩৫ দিনের মধ্যে পরিপক্ক হয়। ১৫-২০ কুইন্টাল প্রতি হেক্টর শস্য পাওয়া যায়। ৬০-৮০ কুইন্টাল প্রতি হেক্টর পশুখাদ্য হিসাবে পাওয়া যায়।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ