Advertisement

Responsive Advertisement

ভাষা বৈচিত্র্য আমাদের সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং পরম্পরার পরিচায়ক: মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ২১ ফেব্রুয়ারি: ককবরক ভাষা সহ রাজ্যের অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভাষার সংরক্ষণ ও মর্যাদা প্রদানে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর। মাতৃভাষা নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। মাতৃভাষা মানুষকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করে। নিজস্ব সংস্কৃতির সংরক্ষণে মাতৃভাষা হচ্ছে একটি অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম। রাজ্যের অন্যান্য জনজাতি গোষ্ঠীর ভাষাগুলির উন্নয়নে অন্যতম অগ্রাধিকার দিয়েছে রাজ্যের বর্তমান সরকার। আমাদের মাতৃভাষা আমাদের গর্ব। ভাষা বৈচিত্র্য আমাদের সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং পরম্পরার পরিচায়ক।
                 বুধবার আগরতলা টাউন হলে আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রাজ্যস্তরের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এই কার্যক্রমে ভাষা শহীদদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষা দপ্তর, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর এবং বাংলাদেশ এসিস্ট্যান্ট হাইকমিশনের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। 
                      অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে দেশ দুভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান হয়ে যায়। এরমধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষাভাষির লোক ও পশ্চিম পাকিস্তানে উর্দু ভাষাভাষির লোক ছিলেন। কিন্তু তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের উপর জোর করে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে গড়ে উঠেছিল ভাষা আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই ভাষা আন্দোলনে শহিদ হয়েছিলেন সালাম, বরকত, জব্বররা। তাই এই দিনটি ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে পরিচিত। পরবর্তীতে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য হল সকল জাতির মাতৃভাষাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া এবং সকল ভাষার প্রতি সমান মর্যাদা প্রদর্শন করা। এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল ভাবনা হচ্ছে: 'বহুভাষিক শিক্ষা আন্তঃপ্রজন্মীয় শিখনের ভিত্তি'। এই ভাবনাটি ইতিমধ্যেই আমাদের দেশের ২০২০ সালের নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতিতে স্থান করে নিয়েছে। মাতৃভাষা হচ্ছে মাতৃদুগ্ধের সমান। মা থেকে যে ভাষাটা প্রথম শেখা হয় সেটাই আমাদের মাতৃভাষা। মাতৃভাষা মানুষের হৃদয়ের ভাষা। নিজের মাতৃভাষা রক্ষা করার পাশাপাশি অন্যের ভাষাকেও সমান মর্যাদা দেওয়া সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে মর্যাদা পাওয়া শুধু বাংলা ভাষার বিশ্ব জয় নয়, সমস্ত মাতৃভাষারই বিজয়। 
                   মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ত্রিপুরা রাজ্য একটি বহুভাষিক রাজ্য। ককবরক সহ অন্যান্য ৮টি ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়ে নির্বাচিত বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ত্রিপুরায় বর্তমানে ১২৯৬টি বুনিয়াদি, ১১৫ মাধ্যমিক এবং ৬৫টি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ককবরক ভাষাকে অন্যতম ভাষা হিসেবে চালু করা হয়েছে। তাছাড়াও অন্যান্য জনজাতি গোষ্ঠীর বিভিন্ন ভাষাগুলির উন্নতিসাধনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে চাকমা, মনিপুরী, বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী, কুকি-মিজো, হালাম, মগ ও গারো অন্যতম। বর্তমানে ১২৩টি বিদ্যালয়ে চাকমা ভাষা, ২৪টি বিদ্যালয়ে মনিপুরী ভাষা, ৩৯টি বিদ্যালয়ে বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী ভাষা, ৯০টি বিদ্যালয়ে হালাম ভাষা, ১৫টি বিদ্যালয়ে কুকি-মিজো ভাষা, ৩৭টি বিদ্যালয়ে মগ ভাষা এবং ১৩টি বিদ্যালয়ে গারো ভাষা চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, ককবরক সহ মোট ৮টি ভাষাতে প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক নির্দিষ্ট ভাষাগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৮টি জনজাতি গোষ্ঠীর মাতৃভাষার উন্নয়নে রাজ্যস্তরে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। জনজাতি গোষ্ঠীর ভাষার বিকাশে সরকার কাজ করছে।
                    অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা আরো বলেন, রাজ্য সরকার টেট পরীক্ষায় ককবরক ভাষা চালু করেছে। তাছাড়া ত্রিপুরা জুডিশিয়াল সার্ভিসেও ককবরক ভাষায় পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ককবরক সহ অন্যান্য ভাষার বিকাশ ও মর্যাদা প্রদানে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর।
                     এদিন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আগরতলায় নিযুক্ত বাংলাদেশ সরকারের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মহম্মদ, শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, শিক্ষা অধিকর্তা এন সি শর্মা, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য সহ ভাষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের গুণী ব্যাক্তিত্বগণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ