Advertisement

Responsive Advertisement

সারা ভারত কৃষক সভার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির শহীদ দিবস পালন

আগরতলা, ১৯ জানুয়ারি : শহীদের রক্ত ব্যর্থ হয় না।৪৩ বছর ধরে দেশের কৃষকদের যে আন্দোলন চলেছে তা ঐ শহীদদের দেখানো পথ ধরেই। প্যারাডাইস চৌমহনিতে শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি ১৯৮২ তে পুলিশের গুলিতে নিহত দশ জন কৃষকনেতাকে শ্রদ্ধা জানায় সারা ভারত কৃষক সভার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি। রাজ্য সি আই টি ইউ, গণতান্ত্রিক নারী সমিতি, রাজ্য ক্ষেত মজুর ইউনিয়ন ও গণমুক্তি পরিষদ। শহীদদের প্রতিশ্রদ্ধা নিবেদনের পর অরুন সিং এর সভাপতিত্বে হওয়া পথসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সারা ভারত কৃষক সভার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক পবিত্র কর এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন ঐ রক্তাত্ব আন্দোলনের পর কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন ও ধর্মঘট ভারতের মানুষ দেখেছেন একুশবার।আজকে শ্রমজীবী মানুষের ওপর মোদি সরকারের যে অত্যাচার শুরু হয়েছে তার প্রতিরোধের রাস্তা কৃষক শ্রমজীবী মানুষ, ছাত্র যুবক ও মহিলারা তৈরি করেছে।এই সংঘবদ্ধ আন্দোলন ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।আগামী ২৬ জানুয়ারি দেশের ৫০০টি জেলায় ট্রাকটার মিছিলের জেহাদে সারা দেশ জানতে চাইবে ' 'কেন দেশের কৃষক শ্রমজীবী মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে মোদি সরকার'? পবিত্র কর বলেন 'মনের ভাবটা এমন যেন শুধু মন্দির পরিস্কার করে বা মন্দির নির্মাণ করেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে'।তিনি বলেন ন্যুনতম সহায়ক মূল্য দেয়ার কথা, বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহার করা, শস্যের উৎপাদনের সময়ে কৃষকদের যে ক্ষতি তার প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেয়া,মাসিক ১৮০০০ টাকা প্রদান, শ্রম কোড বাতিল করা,২০০দিনের রেগার কাজ বাধ্যতামূলক করার মত দাবিগুলো সরকার মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েও কথা রাখেনি।তিনি বলেন মানুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াই এই জবাব চাইবে এবং জবাব দেবে। রাজ্য সি আই টি ইউর সম্পাদক শঙ্করদত্ত বলেন গত দশ বছর ধরে একটি সরকার দেশে চলছে মানুষের ন্যুনতম সমস্যার সমাধান করতে না পেরে।বিজেপি সরকার সমস্ত বিভাগেই ব্যর্থ।তিনিবলেন ধর্মপ্রাণ মানুষের ওপর আঘাত হেনেছে ধর্মীও বিভেদ সৃষ্টিকরে। বিজেপি আর এস এসের সরকার ধর্মকে রাজনীতির সাথে মিশিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বলে শঙ্কর দত্ত অভিযোগ করেন।তিনি মোদি সরকারের অপকর্মের কথা ঘরে ঘরে পৌঁছানোর সংগ্রাম জারি থাকার কথা ঘোষণা করে বলেন এই সংগ্রাম সফল করেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে শ্রমজীবী মানুষ। উললেখ্য, ১৯৮২ সালের ১৯ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন স্থানে সমস্ত কৃষক শ্রমজীবী সমাজ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দাবি জানাতে গিয়ে পুলিশের গুলির মুখে পড়েন। নিহত হন দশ জন কৃষক নেতৃত্ব ও ছাত্র নেতৃত্ব।।নৃশংসতম ঘটনাটি ঘটেছিল উত্তর প্রদেশের বারানসীর বর্তমান চানদৌলি জেলায়।সেখানে ছাত্র ও কৃষক নেতা ভোলা পাশোয়ান যখন শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বক্তৃতা করছিলেন তখন ঐ জেলার পুলিশ সুপার সত্যনারায়ণ সিং নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী জায়গা ঘিরে ফেলে গুলি চালাতে থাকে।ঘটনা স্থলেই প্রাণ হারান ভোলা পাশোয়ান আহত হন আরও ৩২জন।দাদাকে গুলি খেতে দেখে ছোট ভাই লালচাঁদ পাশোয়ান নেতৃত্ব নিজ কাঁধে তুলে বিক্ষোভ চালাতে থাকেন।পুলিশ তাঁকেও গুলি করে।লালচাঁদ লুটিয়ে পড়েন।পুলিশ ঐ দুটি মৃতদেহ নিয়ে পালিয়ে যায়।চানদৌলি থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে একটি জায়গায় পরিবারের মানুষের অনুপস্থিতিতে ঐ দুই শহীদের মৃতদেহ পুড়িয়ে দেয় পুলিশ।একইভাবে তামিলনাড়ুর নাগাপত্তনম জেলায় তিন কৃষক নেতা অঞ্জন,নাগুরান ও গণশেখরণকে পুলিশ গুলিকরে হত্যা করে। কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষ দাবি জানাতে গিয়ে সেদিন রাষ্ট্রশক্তির বুলেটের শিকার হয়েছিলেন তাঁরা।১৯৮২ সালের ঐ দিনটি কৃষকদের ছিল দাবি দিবস।সারা ভারতব্যাপী চলছিল প্রথম সাধারণ ধর্মঘট।একইসঙ্গে চলছিল কৃষকদের প্রয়োজনীয় দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিল ও সভা।সেখানেই চলে গুলি।সেটাই ছিল অত্যন্ত সফল কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন।কেঁপে উঠেছিল দেশের বিভিন্ন সরকার।সেদিন সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নগুলির একসাথে স্তব্ধ করে দিয়েছিল সমস্ত উৎপাদন সংস্থা।৪৩ বছর আগের ঐ ঘটনা ছিল প্রথম সফল বিভিন্ন শ্রমসংগঠন গুলোর আন্দোলন। সেই শহীদদের শহীদান থেকেই চলছে গত ৪৩ বছরের বিভিন্ন কৃষক আন্দোলন।
    

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ