Advertisement

Responsive Advertisement

প্রয়াত বিধায়ক সুরজিত দত্তকে সচিবালয়ে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন মুখ্যমন্ত্রীর

আগরতলা, ২৮ ডিসেম্বর: রাজ্য রাজনীতিতে নক্ষত্র পতন। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবনাবসান হলো রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের ৭ বারের বিধায়ক সুরজিত দত্তের। বুধবার গভীর রাতে প্রয়াত হন সকলের প্রিয় জননেতা সুরজিত দত্ত। তিনি সকলের কাছেই ছিলেন সুনু দা। এই নামেই রাজ্য রাজনীতিতে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন তিনি। তাঁর প্রয়াণের খবর পেয়ে শোক জ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। শোক বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও ভারতীয় জনতা পার্টির বর্তমান বিধায়ক সুরজিত দত্তের (সুনু দা) মৃত্যু রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমি এই মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত বোধ করছি। এই কঠিন সময়ে শোকাহত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আমি পরমকরুণাময় ঈশ্বরের নিকট বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বৃহস্পতিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করছে রাজ্য সরকার।
                    বৃহস্পতিবার প্রয়াত বিধায়ক সুরজিত দত্তের মরদেহ বিমান যোগে কলকাতা থেকে আগরতলায় নিয়ে আসা হয়। সকাল থেকেই আগরতলা এমবিবি বিমানবন্দরে প্রয়াত বিধায়ককে অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে ভারতীয় জনতা পার্টির কার্যকর্তাগণ ভিড় জমান। ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার সহ অন্যান্যরা। যথারীতি বিমানবন্দর চত্বরে প্রয়াত জননেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান দলের নেতা, কর্মী, সমর্থক ও অনুগামীরা। 
                   পরবর্তী সময়ে জননেতা সুরজিত দত্তের মরদেহ আনা হয় রাজ্য সচিবালয়ে। সচিবালয় চত্বরে প্রয়াত বিধায়ককে প্রথমে শেষ শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। প্রয়াত সহকর্মীকে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী রতন লাল নাথ, অর্থমন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায়, প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী সুধাংশু দাস, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিংকু রায় সহ রাজ্য প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিক ও কর্মীগণ। সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, গতকাল রাত ১১টা নাগাদ প্রবীণ নেতা সুরজিত দত্তের প্রয়াণের খবর আসে। সেই খবর আসতেই সারা রাজ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর প্রয়াণে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে সেটা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। তিনি রামনগরের ৭ বারের বিধায়ক ছিলেন। সুনু দা মানে সুনু দাই। তিনি ছিলেন সবার খুব আপনজন। প্রায় পাঁচ দশকের রাজনৈতিক পথচলায় তাঁর গুণমুগ্ধদের সংখ্যা অগনিত। উনার পরিবারের সকলের সাথে আমার পারিবারিক সুসম্পর্ক ছিল। একজন ব্যতিক্রমী বিধায়ক ছিলেন তিনি। শুধু রামনগরের বিধায়ক হিসেবে নয়, গোটা রাজ্যেই তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল। উনি যেখানে থাকুন শান্তিতে থাকুন। তাঁর পরিবার পরিজনদের আন্তরিক সমবেদনা জানাই। 
                  সচিবালয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর প্রয়াত জননেতার নশ্বর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় ত্রিপুরা বিধানসভায়। সেখানে প্রয়াত বিধায়ককে শেষ শ্রদ্ধা অর্পণ করেন রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লু, বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন, মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায়, বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা, অন্যান্য বিধায়কগণ সহ বিধানসভা সচিবালয়ের আধিকারিক ও কর্মীগণ।       
                   ১৯৫৪ সালের ৯ জুলাই জন্ম সুরজিত দত্তের। ১৯৮৮ সালে রামনগর কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে প্রথমবারের মতো বিধায়ক হন এবং কংগ্রেস টিইউজেএস জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হন। পূর্ত দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব সামলান। এরপর ২০০৮ বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত একটানা ৫ বারের বিধায়ক হিসেবে তাঁকে নির্বাচিত করেন রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের আপামর জনতা। কিন্তু ২০১৩ বিধানসভা নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। এরপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আদর্শকে পাথেয় করে সবকা সাথ, সবকা বিকাশের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ভারতীয় জনতা পার্টিতে সামিল হন সুরজিত দত্ত। ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে পুনরায় বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনেও রামনগর আসন থেকেই বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরেই শারীরিক অসুস্থতা নিত্য সঙ্গী হয়ে পড়েছিল তাঁর। কিডনি জনিত সমস্যা ছাড়াও একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন রামনগরের বিধায়ক সুরজিত দত্ত। যে কারণে রাজনৈতিক কাজকর্মেও কিছুটা ভাটা পড়েছিল তাঁর। দলীয় কর্মসূচিতেও বেশিরভাগ সময় উপস্থিত থাকতে পারতেন না।
                 সম্প্রতি শারীরিক অসুস্থতা আরো বেড়ে যায় তাঁর। এরপরই তাঁকে আগরতলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত মঙ্গলবার জননেতা সুরজিত দত্তের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে যান মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে প্রবীণ নেতার চিকিৎসা সম্পর্কে অবহিত হন মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজনে বাইরে নেওয়ার জন্যও পরামর্শ দেন।পরবর্তী সময়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার বিকেলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে অসুস্থ বিধায়ককে কোলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই গভীর রাতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যু সংবাদ রাজ্যে এসে পৌঁছতেই প্রয়াত জননেতার রামনগরের বাসভবনে জড়ো হন এলাকার অগনিত মানুষ। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রয়াত নেতার মরদেহ আগরতলার কৃষ্ণনগরস্থিত দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান প্রদেশ নেতৃত্ব। পরবর্তীতে রামনগরের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিনই বটতলা মহাশ্মশানে পূর্ন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় জননেতা সুরজিত দত্তের। সচিবালয় থেকে শ্মশান পর্যন্ত আগাগোড়া প্রয়াত নেতার পাশে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা ও আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার সহ পরিবারের সদস্যগণ। সেই সঙ্গে জননেতার বিদায় বেলার সাক্ষী হয়ে থাকে হাজার হাজার জনতা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ