Advertisement

Responsive Advertisement

জনজাতি সম্প্রদায়ের কৃষ্টি-সংস্কৃতির সার্বিক বিকাশে সরকার কাজ করছে : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ১৮ আগস্ট : রাজ্যে বিগত দিনে জনজাতিদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার রাজ্যের জনজাতিদের সার্বিক কল্যাণে পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। জনজাতি অংশের জনগণের প্রতি রাজ্য সরকারের এই ভাবনা-চিন্তাকে তৃনমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জনজাতি সম্প্রদায়ের প্রধান সমাজপতিদের গুরু দায়িত্ব পালন করতে হবে। আজ প্রজ্ঞাভবনে বিভিন্ন জনজাতি সম্প্রদায়ের প্রধান সমাজপতিদের নিয়ে আয়োজিত একদিনের কর্মশালার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। জনজাতি কল্যাণ দপ্তর আয়োজিত এই কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের প্রত্যেকটি জনজাতি সম্প্রদায়ের কৃষ্টি, সংস্কৃতি সহ সার্বিক উন্নয়নে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জনজাতি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদেরও যথার্থ মর্যাদা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। ত্রিপুরার উন্নয়নে রাজা- মহারাজারা যে অবদান রেখে গেছেন তারও যথার্থ সন্মান প্রদান করা হচ্ছে। আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের নামে আগরতলা বিমানবন্দরের নামাকরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের আন্তরিক উদ্যোগের ফলেই রাজ্যের জনজাতিদের তৈরী রিসা আজ দেশ-বিদেশে সুপরিচিতি লাভ করেছে। এটা রাজ্যের জন্য নিশ্চয়ই একটা গর্বের বিষয়।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশের জনজাতি অংশের জনগনের কল্যাণে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক উদ্যোগের ফলেই একজন জনজাতি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দ্রৌপদী মুর্মু দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রীর অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির কারণেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজাগুলির সঙ্গে সঙ্গে ত্রিপুরারও প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলেই রাজ্যে ৬টি জাতীয় সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে এবং আরোও ৪টি জাতীয় সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলেই বর্তমানে রাজ্য থেকে ১২টি এক্সপ্রেস ট্রেন দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে চলাচল করছে। ৪টি রোপওয়ে নির্মাণের মঞ্জুরীও পাওয়া গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই প্রভুত উন্নয়নের ফলেই ত্রিপুরা আগামী দিনে দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বারে পরিণত হতে চলছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার সকল জাতিকেই একসাথে নিয়ে চলার মানসিকতা নিয়ে কাজ করছে। কোন জাতির প্রতি যাতে কোনও ধরনের বৈষম্য না হয় সে বিষয়ে সরকারের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। বিশেষ করে জনজাতিদের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোন ধরনের রাজনীতিকে সরকার প্রশ্রয় দেবেনা। রাজ্যের জনজাতিদের ঐতিহ্যগত কৃষ্টি সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও সরকার আন্তরিক। জনজাতিদের বাঁশ, বেত শিল্পকে কিভাবে আরোও সমৃদ্ধ করা যায় সে বিষয়ে সরকার পরিকল্পনা গ্রহন করে কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের এডিসি এলাকার উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারও রাজ্য সরকারকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করে চলছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এডিসি এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ১,৩০০ কোটি টাকা মঞ্জুরী দিয়েছেন। এজন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা বলেন, রাজ্যের বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রীর সবকা সাথ সবকা বিকাশ মন্ত্রকে পাথেয় করে কাজ করে যাচ্ছে। যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ত্রিপুরাকে একটি উন্নত রাজ্যে পরিণত করতে বিভিন্ন জনজাতি সম্প্রদায়ের সমাজপতিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া বলেন, জনজাতি কল্যাণে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পগুলো সরকার গুরুত্ব দিয়ে রূপায়ণ করছে। এই প্রকল্পগুলোর সুফল যাতে জনজাতি অংশের জনগণের মধ্যে আরও বেশী করে পৌঁছানো যেতে পারে তারজন্য প্রধান সমাজপতিদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান রাজ্য সরকার জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এরফলে জনজাতি অংশের ছেলেমেয়েরাও এখন লেটার মার্কস পেয়ে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করছে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী বিকাশ দেদর্ম ও সচিব এল. টি, ডালং। অনুষ্ঠানে শুরুতে জনজাতি গোষ্ঠীর প্রধান সমাজপতিদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাদের হাতে মুখ্যমন্ত্রী চাদর ও পুষ্পস্তবক তুলে দেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ