আগরতলা, ২৭ আগস্ট: রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। চিকিৎসা পরিষেবার আরো অধিক উন্নয়নে বিভিন্ন প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে রাজ্য সরকার। বর্তমানে চিকিৎসার জন্য বাইরের রাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা অনেক ক্ষেত্রে কমে গিয়েছে। কারণ রাজ্যেই এখন চিকিৎসার উন্নত পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে।
রবিবার আগরতলা সংলগ্ন হাপানিয়াস্থিত ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ ও ড. বি আর আম্বেদকর মেমোরিয়াল টিচিং হাসপাতালের ১৮তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। উল্লেখ্য, এদিন কলেজের নবনির্মিত বিবেকানন্দ অডিটোরিয়ামের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এই অডিটোরিয়ামে প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উদ্বোধকের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ ও ড. বি আর আম্বেদকর মেমোরিয়াল টিচিং হাসপাতালের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। কোভিডের সময়ে অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানো থেকে শুরু করে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজের মান বজায় রাখা প্রয়োজন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে ছাত্রছাত্রীদের। পাশাপাশি কলেজের ফ্যাকাল্টি ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকাও আবশ্যক। এই মেডিকেল কলেজের ইতিহাসের পাশাপাশি যে সমস্ত শিক্ষকরা এই কলেজের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন তাদের সম্পর্কেও জানা প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের। রাজ্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় অতি কম সময়ে রাজ্যে আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে ডেন্টাল কলেজে পঠনপাঠন শুরু হবে। ছাত্রছাত্রী ভর্তি সহ ফ্যাকাল্টি নিয়োগের প্রক্রিয়াও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডা: সাহা জানান, ধলাই জেলার আমবাসায় পিপিপি মডেলে আরও একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং কলেজ ইত্যাদি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সবদিক থেকেই রাজ্যে একটি স্বাস্থ্য হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এছাড়া রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য আরো ১০০টি নতুন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। রাজ্যের প্রত্যেক জেলায় ১টি করে নেশামুক্তি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। তাছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকে কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে রূপান্তর করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার ত্রিপুরা হেলথ সার্ভিসকে জেনারেল ডিউটি এবং স্পেশালিস্ট দুটি বিভাগে ভাগ করায় স্পেশালিস্ট চিকিৎসকরা রাজ্যে আসছেন। এজিএমসি ও জিবি হাসপাতালে ৯টি সুপার স্পেশালিস্ট বিভাগ খোলা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় রাজ্যে প্রায় ১৩ লক্ষ আয়ুষ্মান কার্ড সুবিধাভোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত জন আরোগ্য যোজনায় রাজ্যের যেসব পরিবার আওতাভুক্ত হতে পারেনি তাদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য চলতি অর্থবর্ষের বাজেটে ৫৯ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল, আগরতলা বিবেকনগরস্থিত রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী শুভাকারানন্দ মহারাজ, ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: অরিন্দম দত্ত সহ অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিগণ। অনুষ্ঠানে এমবিবিএস পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য ফলাফলের জন্য পুরস্কৃত করেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিগণ।
0 মন্তব্যসমূহ