আগরতলা, ৫ অগাস্ট : আজকের শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের সুস্থ রাখা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। তাদের স্বাস্থ্য যদি ঠিক না থাকে তবে দেশে সুস্থ মানবসম্পদও তৈরি হবে না। সুস্থ মানবসম্পদ তৈরি করতে সরকার শৈশব থেকেই যাতে শিশুদের সঠিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা হয়। সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। ঊনকোটি কলাক্ষেত্রে আজ রাজ্যভিত্তিক ইনটেনসিফায়েড মিশন ইন্দ্রধনুষ ৫.০ কর্মসূচির উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। এই কর্মসূচিতে ০-৫ বছরের শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় টিকাকরণ করা হবে। এই কর্মসূচিতে প্রথম পর্যায়ে ৭ থেকে ১২ আগস্ট, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর ও তৃতীয় পর্যায়ে ৯ থেকে ১৪ অক্টোবর টিকাকরণ করা হবে। টিকাকরণের জন্য যে কেউ ঘরে বসেই মোবাইলে ইউ-উইন পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করে নিজের সুবিধাজনক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে টিকাকরণ করতে পারবেন।
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা বলেন, দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় টিকাকরণে ত্রিপুরা অনেক এগিয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, টিকাকরণের হার ত্রিপুরায় প্রায় ৯৮ শতাংশ। কিন্তু আমাদের ১০০ শতাংশে পৌঁছাতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে রাজ্য সরকার সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী জনআরোগ্য যোজনায় ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই প্রকল্পে রাজ্যের ৪.৭৫ লক্ষ পরিবারকে আওতাভুক্ত করা হবে। এতে প্রতি পরিবার ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। তিনি বলেন, মানুষের কাছে উন্নত পরিষেবা পৌঁছে দিতে জেলা হাসপাতালগুলিকেও শক্তিশালী করা হচ্ছে। আমবাসায় আরেকটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। ৩টি ট্রমা সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া রাজ্যে আরও ১০০টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা হবে। এজন্য এবছর বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, রাজ্যে নবগঠিত ডেন্টাল কলেজের পঠন পাঠন আগামী মাসেই শুরু হবে। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, বহিরাজ্যে চিকিৎসা করানোর যে প্রবণতা তা কমাতেও সরকার কাজ করছে। এখন হার্ট, নিওরোর মতো জটিল চিকিৎসা রাজ্যেই হচ্ছে। এর সুযোগ নিতেও তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামীদিনে ত্রিপুরা যাতে একটি মেডিক্যাল হাব হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করছে সরকার।
অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষামন্ত্রী টিংকু রায় বলেন, মা ও শিশুকে সুস্থ রাখার জন্য ইনটেনসিফায়েড মিশন ইন্দ্ৰধনুষ ৫.০ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের পর থেকে রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামো উন্নয়নে অনেক কাজ হয়েছে।
তপশিলি জাতি কল্যাণমন্ত্রী সুধাংশু দাস বলেন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডার নেতৃত্বে ইনটেনসিফায়েড মিশন ইন্দ্রধনুষ কর্মসূচির শুরু হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল টিকাকরণের মাধ্যমে শিশুদের সুস্থ রাখা। এর সুফল সারা দেশের সাথে ত্রিপুরা রাজ্যও পেয়েছে।
রাজ্যভিত্তিক ইনটেনসিফায়েড মিশন ইন্দ্ৰধনুষ ৫.০ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা মঞ্চে ৩টি শিশুকে টিকাকরণে উৎসাহিত করেন। পরে শিশুদের মায়েদের হাতে টিকাকরণের ইউ-উইন সার্টিফিকেট তুলে দেন। এছাড়া আয়ুমান ভারত কার্ডের সুবিধা নিয়ে হার্টের অপারেশন ও ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা করিয়েছে এমন দু'জন শিশুর মায়ের সাথে মঞ্চে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে এছাড়া বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য সচিব ড. দেবাশিস বসু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধিকর্তা শুভাশিস দাস। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডা. সুপ্রিয় মল্লিক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঊনকোটি জিলা পরিষদের সভাধিপতি অমলেন্দু দাস ও জেলাশাসক টি কে চাকমা।
রাজ্যভিত্তিক ইনটেনসিফায়েড ইন্দ্রধনুষ ৫.০ অনুষ্ঠানের পর মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা কৈলাসহরের শ্রীরামপুর ও চন্ডিপুর পঞ্চায়েতে ইন্দো-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং গ্রামবাসী ও সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানদের সাথে মতবিনিময় করেন। মুখ্যমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষামন্ত্রী টিংকু রায়, তপশিলি জাতি কল্যাণমন্ত্রী সুধাংশু দাস, জেলাশাসক টি কে চাকমা, পুলিশ সুপার কান্তা জাহাঙ্গির প্রমুখ।
0 মন্তব্যসমূহ