আগরতলা, ২২ জুন: রাজ্যে রূপায়িত সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির কাজ গুনমান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। প্রকল্প রূপায়নকারী দপ্তরগুলিকে এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করতে হবে। বর্তমান রাজ্য সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকার পরিচালনায় বিশ্বাসী। রাজ্য সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করে রাজ্যকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। আজ ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের প্রথম রাজ্যস্তরীয় দিশা কমিটির সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা একথা বলেন। সচিবালয়ের ২নং সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এই সভায় কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, বিধায়ক অভিষেক দেবরায়, বিধায়ক দীপঙ্কর সেন, বিধায়ক স্বপ্না মজুমদার, বিধায়ক মাইলাফু মগ, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা উপস্থিত থেকে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। সভায় রাজ্যে রূপায়িত কেন্দ্রীয় সহায়ক প্রকল্পগুলির বর্তমান অবস্থা, অগ্রগতি, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও নতুন উদ্যোগসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধান সচিব ও সচিবগণ রাজ্যে চলমান কেন্দ্রীয় সহায়ক প্রকল্প সমূহের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণে সচেষ্ট রয়েছে। জনজাতি এলাকার উন্নয়ন সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের সার্বিক উন্নয়নে আরও বেশী করে প্রকল্প সমূহের সুফল পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলিকে বলিষ্ঠ ভুমিকা নিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে রূপায়িত কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি দপ্তরের আধিকারিকদের সরেজমিনে পরিদর্শন করে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মতামত জানানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, প্রকল্পসমূহ রূপায়ণে কোন ধরণের সমস্যা হলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতি ১০০ দিন অন্তর সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান জনসমক্ষে তুলে ধরার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
সভায় এমজিএন রেগা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব ড. সন্দীপ আর রাঠোর বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের চলতি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত রাজ্যে এমজিএন রেগায় ৭৫.৩৯ লক্ষ শ্রমদিবস সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) রাজ্যে ২ লক্ষ ১২ হাজার ৯৯টি ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় গ্রমোন্নয়ন মন্ত্রক চলতি বছরের ২৯ মে অতিরিক্ত আরও ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৬৯৫টি ঘর রাজ্যের জন্য বরাদ্দ করেছে। এরমধ্যে চলতি মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত ১ লক্ষ ১২ হাজার ৮০০টি ঘর মঞ্জুর করা হয়েছে। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী রুরবান মিশনে রাজ্যের ৭টি রুরবান ক্লাস্টারে মোট ৪০০টি কাজের মধ্যে ২৩০টির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকীগুলির কাজ চলছে। সাংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনার অন্তর্গত রাজ্যের চিহ্নিত ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ভিলেজ কমিটিতে ৭৪২টি কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩১১টি কাজ শেষ হয়েছে। দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা - জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গিয়ে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব জানান, রাজ্যে বর্তমানে ৪৮,৩৯৪টি স্বসহায়ক গোষ্ঠীতে মোট ৪,৪৪,৮৪১ গ্রামীণ মহিলা সদস্য রয়েছেন। দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল যোজনায় ৪ হাজার ৯৭০ জন প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন পেশায় নিযুক্তি পেয়েছেন।
স্বচ্ছ ভারত মিশন - আরবান নিয়ে আলোচনায় নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং বলেন, রাজ্যের ২০টি নগর সংস্থাকে “ওডিএফ’-এর স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই ২০টি নগর সংস্থার মধ্যে ৭টিকে ওডিএফ প্লাসেরও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, রাজ্যে ৮৫টি সেকেন্ডারি বর্জ্য পৃথকীকরণ কেন্দ্র ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছে। তাছাড়া তিনি আমরুত ২.০, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা-১, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা-২ প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা- ৩ রূপায়ণে রাজ্যের বর্তমান অবস্থা ও অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন। সচিব আরও জানান, রাজ্যে ৬টি জাতীয় সড়কের কাজ চলছে। এপ্রসঙ্গে সভায় এনএইচআইডিসিএল এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজ্যে জাতীয় সড়কের উন্নয়নে এনএইচআইডিসিএল-এর ২৩টি প্রধান প্রকল্পের কাজের মধ্যে ৫টির কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। বাকীগুলির কাজ চলছে। সচিব জানান, জল জীবন মিশন রূপায়নে রাজ্যের ৬০.৪০ শতাংশ গ্রামীণ পরিবারকে টেপের মাধ্যমে পানীয়জলের সংযোগের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
সভায় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় কৃষকদের কল্যাণে রাজ্যে রূপায়িত কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, রাজ্যে ২০ হাজার হেক্টর এলাকাকে জৈব চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি জানান, জৈব ফল হিসেবে রাজ্যে আনারস চাষের এলাকা আরও সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৯১৩টি সয়েল হেলথ কার্ড কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ২০ হাজার সয়েল হেলথ কার্ড কৃষকদের দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
কৃষি দপ্তরের সচিব আরও জানান, রাজ্যে বর্তমানে ৪টি সয়েল টেস্টিং ল্যাব রয়েছে। চলতি অর্থবছরে আরও ৫টি স্ট্যাটিক সয়েল টেস্টিং ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা হিসেবে রূপায়িত হচ্ছে। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রাজ্যের ১০,০৮,০৬৮ জন কৃষককে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি নিষ্পত্তির পরিমাণ ৬.০৯ কোটি টাকা। সচিব জানান, রাজ্যের ৭টি বাজারকে প্রথম পর্যায়ে ই-ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল মার্কেট-এর সাথে যুক্ত করা হবে। সভায় শিক্ষা দপ্তরের সচিব শরদিন্দু চৌধুরী কেন্দ্রীয় প্রকল্প পি এম পোষাণ (স্কুল মিড ডে মিল ) এবং সমগ্র শিক্ষা প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি জানান, রাজ্যে পি এম পোষাণ প্রকল্পে ৮৪৪টি বিদ্যালয়ে কিচেন গার্ডেন করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের মিড ডে মিল তৈরী করার জন্য ৩ হাজার ২৩৯টি বিদ্যালয়ে এলপিজি গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৩,৩১৬টি বিদ্যালয়ে এলপিজি গ্যাস সংযোগের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমগ্র শিক্ষায় শীঘ্রই রাজ্যের ৭৫২টি বিদ্যালয়ে স্মার্ট ক্লাস রুম চালু করা হবে। ৩০৪টি বিদ্যালয়ে ডিজিটাল লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে। রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে সমগ্র শিক্ষায় আরও বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সচিব জানান। সভায় স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব ড. দেবাশিস বসু জানান, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রাজ্যে ৪,৭৯,৬২৫টি পরিবারকে আয়ুষ্মান কার্ড প্রদান করা হয়েছে।
আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে রাজ্যের ৭৬,৫৫৬ জন রোগী উপকৃত হয়েছেন। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৬৪.৬৮ কোটি টাকার দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। রাজ্যে মোট ১১১৮টি হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টার চালু রয়েছে। সভায় রাজ্যে রূপায়িত পিএমইজিপি, প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও, অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্প সমূহ, বিদ্যুৎ দপ্তরের অন্তর্গত কেন্দ্রীয় প্রকল্প, জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন, ভূমি ও রাজস্ব এবং তথ্য প্রযুক্তি দপ্তরের কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির বর্তমান অবস্থা ও অগ্রগতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধান সচিব ও সচিবগণ আলোচনা করেন।
0 মন্তব্যসমূহ