আগরতলা, ৭ মে ২০২৩: সমাজে চক্ষুদান, দেহদান, বিদ্যাদানের মতো অনেক দান রয়েছে। কিন্তু রক্তদান সমস্ত দানের উর্ধ্বে। কারণ রক্তের বিকল্প এখনও আবিষ্কার হয়নি। আজ আগরতলা প্রেস ক্লাবে অল ইন্ডিয়া ব্যাংক অফিসার্স কনফেডারেশনের ত্রিপুরা স্টেট ইউনিটের উদ্যোগে আয়োজিত রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা একথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানব শরীরে রক্তের ভূমিকা অপরিহার্য্য। মানুষের শরীরে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, অক্সিজেন ইত্যাদি পরিবহণে রক্তের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রক্তের বিকল্প চিকিৎসা বিজ্ঞানে এখনো আবিষ্কার হয়নি। একজন মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচাতে রক্তদান খুবই প্রয়োজন। তাই রক্তদানকে মহৎ দান হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রক্তদানের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে একটা আধ্যাত্মিক অনুভূতির সৃষ্টি হয় যা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। রক্তদাতা ও রক্তগ্রহীতার মধ্যে একটা মৈত্রীর বন্ধন তৈরী হয়। একজন ব্যক্তির দান করা রক্তের মাধ্যমে ৩-৪ জন মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাচানো যেতে পারে। রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় সরকারি ১২টি ও বেসরকারি ২টি ব্লাড ব্যাংকে রক্তের অভাব পরিলক্ষিত হয়। রক্তের এই অভাব দূর করতে নির্বাচনের পর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যব্যাপী রক্তদান শিবির করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। রাজ্য সরকারের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও রাজ্যবাসী রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছে। ব্যাংক অফিসার ও অন্যান্য কর্মচারিগণ তাদের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মানবিক কর্মকান্ডে এগিয়ে আসার জন্য মুখ্যমন্ত্রী সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যুব সমাজকে নেশার করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার নেশামুক্ত ত্রিপুরা গড়ার আহ্বান জানিয়েছে। নেশার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। নেশার বিরুদ্ধে রাজ্যব্যাপী একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যাংক কর্মীদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে অল ইন্ডিয়া ব্যাংক অফিসার্স কনফেডারেশনের ত্রিপুরা স্টেট ইউনিটের সম্পাদক সঞ্জয় দত্ত বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক আহ্বানে সাড়া দিয়েই অল ইন্ডিয়া ব্যাংক অফিসার্স কনফেডারেশনের ত্রিপুরা স্টেট ইউনিট প্রথমবারের মতো রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করেছে। আগামীদিনেও এই ধরণের কর্মসূচি বজায় থাকবে। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন অল ইন্ডিয়া ব্যাংক অফিসার্স কনফেডারেশন ত্রিপুরা স্টেট ইউনিটের সভাপতি তাপস চৌধুরী।
রামকৃষ্ণ সেবা সমিতির উদ্যোগে রক্তদান শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী
সমস্ত দানের মধ্যে রক্তদান সবার ঊর্ধে রক্তদান মহৎ দান। সমস্ত দানের মধ্যে রক্তদান সবার ঊর্ধে। আজ আগরতলার অরুন্ধতীনগরের এমবি টিলায় রামকৃষ্ণ সেবা সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এক রক্তদান শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা একথা বলেন। রামকৃষ্ণসেবা সমিতির ১৫তম বার্ষিক প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী রক্তদাতাদের সাথে মিলিত হয়ে তাদের উৎসাহিত করেন। সমিতির প্রার্থনা গৃহে আয়োজিত এই রক্তদান শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একজন রক্তদাতার রক্তদানে শুধু মুমূর্ষু মানুষেরই প্রাণ বাঁচেনা, রক্তের পৃথকীকরণের মাধ্যমে আরও তিন চারজন উপকৃত হন। তিনি বলেন, রক্তদানের ফলে রক্তদাতা এবং রক্তগ্রহীতা উভয়ের মনে এক আলাদা অনুভূতির সৃষ্টি হয়। রক্তগ্রহীতা ভাবেন, রক্তদাতার রক্তে তার প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। অন্যদিকে রক্তদাতাও ভাবেন, রক্তগ্রহীতার জীবন বাঁচাতে তার সামান্য হলেও ভূমিকা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রক্তদান আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমরা সবাই প্রত্যেকের জন্য।
রক্তদান শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের বর্তমান সরকার বিভিন্ন সেবামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে জনকল্যাণে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। আগামীদিনে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে উঠবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। মুখ্যমন্ত্রী রামকৃষ্ণ সেবা সমিতির রক্তদান কর্মসূচির ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং আগামীদিনেও এই ধরণের সমাজ সেবামূলক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন। রক্তদান শিবিরে বিধায়ক মীনা রাণী সরকার, আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক
মজুমদার, নিগমের কর্পোরেটরগণ, ধলেশ্বর রামকৃষ্ণ মিশনের সন্নাসী ভক্তিপ্রভানন্দ মহারাজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শিবিরে রক্তদাতাদের হাতে স্মারক উপহারও তুলে দেওয়া হয়।
0 মন্তব্যসমূহ