লেখা ও ছবি: ড. শ্রীমন্ত রায়
কাঞ্চনপুর, উত্তর ত্রিপুরা: মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্থানের এক ব্যতিক্রমী ও ভাবনাজাগানিয়া মুহূর্তে সম্প্রতি উত্তর ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরে অবস্থিত সরকারি ডিগ্রি কলেজের একটি শ্রেণিকক্ষে আলমারির ওপর শান্তভাবে বসে থাকতে দেখা গেছে ইন্ডিয়ান স্কপস পেঁচা (Otus bakkamoena)। বিরল এই দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করেন আলোকচিত্রী ড. শ্রীমন্ত রায়।
স্বভাবসিদ্ধ সোজা ভঙ্গিতে নিঃশব্দে বসে থাকা এই ক্ষুদ্র পেঁচাটি তার প্রাকৃতিক ছদ্মবেশের মাধ্যমে চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে এমনভাবে মিশে গিয়েছিল যে এক মুহূর্তে তাকে আলাদা করে চেনা কঠিন হয়ে পড়ে। দিনের বেলায় নিরাপদ ও নিরিবিলি আশ্রয় খোঁজার এই প্রবণতা প্রজাতিটির অসাধারণ অভিযোজন ক্ষমতারই পরিচয় বহন করে।
ঘটনাটি সম্পর্কে আলোকচিত্রী ড. শ্রীমন্ত রায় বলেন,
“প্রকৃতি আজ এতটাই সংকুচিত হয়ে পড়েছে যে বন্যপ্রাণীরা আমাদের শ্রেণিকক্ষ ও ঘরের ভেতর আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। এই পেঁচাটির নীরব উপস্থিতি আমাদের কাছে এক সতর্কবার্তা—আমরা প্রতিদিনই প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি।”
আকারে ছোট হলেও ইন্ডিয়ান স্কপস পেঁচা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পোকামাকড়, ইঁদুরসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র প্রাণী শিকার করে এটি প্রাকৃতিক কীটনিয়ন্ত্রকের কাজ করে, যা কৃষি ও মানবজীবনের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
তবে ক্রমাগত বন নিধন, পুরনো গাছ কাটা ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস করছে। ফলে বহু বন্যপ্রাণী আজ মানব বসতিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। যদিও এই প্রজাতিটি বর্তমানে আইইউসিএন-এর তালিকায় ‘Least Concern’ হিসেবে চিহ্নিত, বিশেষজ্ঞদের মতে এভাবে প্রকৃতি ধ্বংস চলতে থাকলে সাধারণ প্রজাতিও ভবিষ্যতে বিরল হয়ে উঠতে পারে।
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে এই পেঁচার উপস্থিতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সংরক্ষণ শুধু বনভূমিতে সীমাবদ্ধ নয়, তা শুরু হয় সচেতনতা, সহানুভূতি ও সহাবস্থান থেকে।
0 মন্তব্যসমূহ