আগরতলা, ৩ নভেম্বর: রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হয়েছে এপিকাল রুটেড কাটিং (এ আর সি) প্রযুক্তির মাধ্যমে। আধুনিক এই পদ্ধতি রাজ্যের আলু চাষে সাফল্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। গোমতী জেলার কিল্লা কৃষি মহকুমায় সোমবার অনুষ্ঠিত এক প্রস্তুতি বৈঠকে এই সাফল্যের ধারাকে আরও বিস্তৃত করার লক্ষ্যে আলোচনা হয়।
বৈঠকে রাজ্যিক উদ্যান ও বাগিচা ফসল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ড. রাজীব ঘোষ বলেন, “এ আর সি প্রযুক্তির মাধ্যমে আলু উৎপাদন ও বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রটি নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এখন সময় এসেছে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আলু চাষকে একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক রূপ দেওয়ার।” তিনি আরও জানান, রাজ্যের কৃষকদের হাতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়াই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কিল্লা ব্লকের বিধায়ক রামপদ জামাতিয়া, কিল্লা ব্লক বি এ সি-র চেয়ারম্যান বাগানহারি মলসম এবং সহ অধিকর্তা অরিন মজুমদার। অরিন মজুমদার বৈঠকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে এ আর সি পদ্ধতিতে আলু চারা তৈরি ও রোপণ করা হয়, এবং কেন এই পদ্ধতিতে ফলন বেশি ও গুণগত মান উন্নত হয়।
এলাকার কৃষি তত্ত্বাবধায়ক শুভেন্দু মজুমদার জানান, কিল্লা কৃষি মহকুমার আঠারভোলা, খুপিলং এবং কোয়াই মুড়া অঞ্চলের কৃষকদের ইতিমধ্যে নাম নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। এই বছর দুটি প্রকল্পের আওতায় আলু চাষ করা হবে—রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা এবং জৈবিক কৃষির আর্থিক আনুকূল্যে। পাশাপাশি জল বিভাজিকা প্রকল্পের অধীনেও এ আর সি পদ্ধতিতে চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
দুই বছর আগে মাত্র একশ জন কৃষককে নিয়ে ত্রিপুরায় শুরু হয়েছিল এ আর সি পদ্ধতিতে আলু চাষ। প্রথম বছরের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে পরের বছর এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় চারশ। চলতি মরশুমে প্রায় ছয় হাজার কৃষক এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, যা রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
এই সাফল্য এখন আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। লাতিন আমেরিকার পেরুস্থিত আন্তর্জাতিক আলু গবেষণা কেন্দ্র (সি আই পি) ত্রিপুরার এই প্রকল্পের অগ্রগতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সম্প্রতি ওই কেন্দ্রের মহা নির্দেশক ড. সাইমন হক এবং ভারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ড. নীরজ শর্মা নাগিছড়া এসে প্রকল্পের কার্যকারিতা দেখে প্রশংসা করেন। তাঁদের মতে, বর্তমান গতি অব্যাহত থাকলে ২০২৯-২০৩০ সালের মধ্যেই ভারত, বিশেষত ত্রিপুরা, আলুর বীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে।
ভারতের মধ্যে ত্রিপুরা এখন চতুর্থ রাজ্য, যেখানে এ আর সি প্রযুক্তিতে আলু চাষ সাফল্যের মুখ দেখেছে। এই প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ শুধু ফলন বৃদ্ধি নয়, বরং স্থানীয় কৃষকদের আত্মনির্ভরতার পথও প্রশস্ত করছে।
কিল্লার বৈঠকে বক্তারা একবাক্যে মত দেন—ত্রিপুরার কৃষকরা আজ আর কেবল উৎপাদক নয়, তাঁরা উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন। সরকারের সহায়তা, গবেষণার পরামর্শ এবং আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে ত্রিপুরার আলুচাষ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে।
0 মন্তব্যসমূহ