আগরতলা, ২৪ অক্টোবর: মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব ও সুস্থ কৈশোর অভিযান এবারও ১০০% সাফল্য অর্জন করবে। টিবি মুক্ত ত্রিপুরা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য সরকার। ত্রিপুরা রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার।
আজ তেলিয়ামুড়া টাউন হলে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক 'মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব ও সুস্থ কৈশোর অভিযান' (MSSSKA) ৮.০ এর উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর, সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে প্রতি বছর এই কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব ও সুস্থ কৈশোর অভিযান রাজ্য সরকারের নিজস্ব উদ্যোগে করা হয়েছে। সমাজে শিশু ও কৈশোর বয়সীদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য এবং তাদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ইত্যাদির বিকাশ ঠিকভাবে করার জন্য এই অভিযানের সূচনা করা হয়েছে। কৃমির সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা, ভিটামিনের অভাব দূর করা, ডায়রিয়া, আয়রন ইত্যাদির ঘাটতি পূরণের জন্য এই কার্যক্রম করা হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর সেটা হলে সত্যিকার অর্থে ভারতবর্ষ উন্নত হবে।
আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক ছেলেমেয়ে অপুষ্টি, রক্তাল্পতায় ভুগে। তাই তাদের সার্বিক বিকাশের জন্যই আজকের এই কার্যক্রমের আয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব ও সুস্থ কৈশোর অভিযানে শূন্য থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত একটা পর্যায় রাখা হয়েছে। এবার ১০,৫৯,১৮২ জন শিশু ও কৈশোরকে টার্গেট করা হয়েছে। আজ অর্থাৎ ২৪ অক্টোবর থেকে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এই অভিযান চলবে। এই অভিযানকে মাথায় রেখে বিভিন্ন জায়গায় স্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই অভিযানে ৬ মাস থেকে ১৯ বছর বয়সীদের আয়রন ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টেশন এর ব্যবস্থা করা হবে। অনেক শিশুর মধ্যে শ্বাস কষ্টের প্রবনতা থাকে। এছাড়া ডায়রিয়া, জ্বর ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। এগুলিকে যথাসময়ে চিহ্নিত করার জন্য এই অভিযানে কার্যক্রম রাখা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, এই অভিযানে ছেলেমেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং মাদক ও ধূমপান বিরোধী কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরায় মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। পুলিশ সহ অন্যান্য নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। টিবি মুক্ত ভারত গঠনের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই দিশায় ত্রিপুরাকেও টিবি মুক্ত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য সরকার। বিভিন্ন স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ডিগ্রি কলেজ, আইআইটি, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টারগুলিকেও মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব ও সুস্থ কৈশোর অভিযানে যুক্ত করা হবে। এছাড়াও চা বাগান, ইট ভাটা, বস্তি এলাকা, অনাথ আশ্রম, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও এই অভিযানে গুরুত্ব পাবে। এই অভিযান শুরু করার সময় লক্ষ্যমাত্রার নিরিখে ৯৯.৪০% ছেলেমেয়েদের অভিযানের আওতায় আনা হয়। ২.০তে ৯৩.৫৬%, ৩.০তে ৯৬.৯৭%, ৪.০তে ৯৭.৪৪%, ৫.০তে ৯৮.৯৬% ও ৬.০তে ৯৭.৯৭% ছেলেমেয়েদের অভিযানের আওতায় আনা হয়। আর ৭.০তে লক্ষ্যমাত্রার ১০০% সফল হয়েছে। তাই এবারও আশা করবো যে ১০০% সফল হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ত্রিপুরা রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উন্নত করার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। বর্তমানে আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা পরিষেবার জন্য সব বন্দোবস্ত রয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আরো উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি দিল্লিতে স্বাস্থ্য দপ্তর ও দিল্লির এইমসের সঙ্গে একটি মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমরা চাই আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ অন্যান্য হাসপাতালগুলি আরো শক্তিশালী হোক। এজিএমসিতে ৯টি সুপার স্পেশালিটি চালু করা হয়েছে। রোগী রেফারের সংখ্যা অনেক কমেছে। রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে চিকিৎসার জন্য যাতে কাউকে বাইরে যেতে না হয়।
মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো বলেন, এইচআইভি এখন ত্রিপুরার জন্য একটা উদ্বেগের বিষয়। তাই আমি সকলকে বলবো যে এই বিষয়টি নিয়ে আরো গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। এইচআইভি নিয়ে জনসাধারণকে আরো সচেতন করতে হবে। এক্ষেত্রে সিরিঞ্জের মাধ্যমে ড্রাগস নেওয়ার প্রবণতা রুখতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা বিধানসভার মুখ্য সচেতক কল্যানী সাহা রায়, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, খোয়াই জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক অভিজিত চক্রবর্তী, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ তপন মজুমদার সহ অন্যান্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের আধিকারিকগণ।
0 মন্তব্যসমূহ