Advertisement

Responsive Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে ২০০পরিবারের ৬৯০ ভোটারের বিজেপিতে যোগদান



আগরতলা, ২২ অক্টোবর: কমিউনিস্টদের কায়দায় এখনও কিছু ব্যক্তি বিভাজনের রাজনীতি ও চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জনজাতি সমাজকে ভুল পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করে কোন লাভ হবে না।
ত্রিপুরার মানুষ শান্তি, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। গায়ের জোর প্রয়োগ এই রাজ্যে কোন অবস্থাতেই বরদাস্ত করবে না সরকার। কেউ আমাদের আঘাত করলে আইনি পদ্ধতিতে আমরা তার উপযুক্ত জবাব দেব।
আজ টাকারজলা মন্ডল কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। 
সভায় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আমাদের পূর্বসূরীরা আত্মবলিদানের মাধ্যমে ভারতীয় জনতা পার্টিকে দাঁড় করিয়েছিলেন। ভারতের অখণ্ডতা রক্ষা করতে গিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছিল ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির। আর পণ্ডিত দীন দয়াল জীর আদর্শ নিয়ে এগিয়ে চলছে ভারতীয় জনতা পার্টি। মোঘলসরাইয়ে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছিল। ভারতীয় জনতা পার্টির কার্যকর্তাগণ কোন অবস্থায় ভয় পান না। কাউকে আটকাবে, জোর করে মাথা ফাটিয়ে দেবে - এটা সাময়িক। কিন্তু সবসময় সেটা সম্ভব হবে না। ভারতীয় জনতা পার্টি সংগঠন শক্তিশালী করার মাধ্যমে কমিউনিস্টদের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল। কাজেই ভারতীয় জনতা পার্টিকে ভয় দেখিয়ে কেউ কিছু করবে, সেটা অলীক স্বপ্ন দেখছেন। রাজনীতি করার আমাদের সবার অধিকার আছে। কিন্তু রাজনীতি করার মধ্যেও একটা সুন্দরতার দরকার। আমরা এরআগে কমিউনিস্ট ও কংগ্রেসের রাজত্ব দেখেছি। খুন, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ সহ ইত্যাদি ঘটনা তাদের জমানায় দেখেছি। আর ভারতীয় জনতা পার্টি সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস ও সবকা প্রয়াস এ বিশ্বাস করে। কারণ সবাইকে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। সবারই উন্নয়ন প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিক নির্দেশনায় আমরা কাজ করছি। 
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টির জনজাতি মোর্চা জনজাতিদের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। কিন্তু কেউ যদি মনে করে জনজাতিদের উন্নয়নকে দাবিয়ে দেবে তবে সে অলীক স্বপ্ন দেখছে। এরআগেও আমি এখানে কয়েকবার এসেছি। আমাদের মন্ডল সভাপতির বাড়িতে আক্রমণ শাণিত হয়েছিল। বারবার একই কায়দায় কমিউনিস্টদের ধাঁচে এধরণের সংস্কৃতি এখানে রয়েছে। আমরা চাই একটা সুষ্ঠু পরিবেশ ত্রিপুরায় গড়ে উঠুক। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে রাজনীতির পরিভাষা পাল্টে দিয়েছেন, আমরাও চাই ত্রিপুরার রাজনীতির পরিভাষা পাল্টানোর। কারোর কোন বক্তব্য থাকলে তিনি বলতে পারেন। কিন্তু কাউকে কোনকিছু জোর করবে সেটা ভারতীয় জনতা পার্টি কোন অবস্থায় মেনে নেবে না। প্রধানমন্ত্রীর মন কি বাত কার্যক্রমে আশারাম বাড়িতে আমাদের কার্যকর্তাদের উপর আক্রমণ হয়েছিল। এর পরের মাসে আমি সেখানে গিয়েছি। আইন আইনের পথে চলবে। কেউ গায়ের জোরে কিছু করবে সেটা এই সরকার কোন অবস্থায় বরদাস্ত করবে না। আমাদের সুরক্ষার প্রশ্নে যা যা করার দরকার সেটা আমরা করবো। আমরা কারোর উপর আঘাত করবো না। কিন্তু কেউ আমাদের উপর অন্যায়ভাবে আঘাত করলে আইনের মাধ্যমে সেটার প্রতিকার করা হবে। 
সভায় মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে জনজাতি জনগোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা। এরআগে জনজাতিদের নিয়ে ভোটের রাজনীতি করা হয়েছে। তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে অনেক পার্টি রাস্তায় নামিয়েছে। আর আমাদের সরকার আসার পর জনজাতিদের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। এরআগে মানিক্য রাজ বংশকে কেউ সম্মান দেয়নি, কেউ খবর নেয়নি। কিন্তু আমাদের সরকার তাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে এসে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের নামে আগরতলা এয়ারপোর্টের নামকরণ করেছেন। সেখানে মহারাজার পূর্ণবয়ব মর্মর মূর্তির উন্মোচন করা হয়েছে। যা এরআগে কোন পার্টি করেনি। ১৯ আগস্ট মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের জন্মদিনকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেছে আমাদের সরকার। কামান চৌমুহনী সংলগ্ন আইল্যান্ডে মহারাজার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। জনজাতি অধ্যুষিত ১২টি ব্লককে এসপিরেশনাল ব্লক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে বাজেটে এসব ব্লকগুলির জন্য অধিক অর্থ বরাদ্দ করা। আগে গড়িয়া পুজো উপলক্ষে একদিন ছুটি ছিল। কিন্তু আমাদের সরকার সেটা বাড়িয়ে দুদিন করেছে। জনজাতিদের সংগ্রমা পুজোর দিনে রেস্ট্রিক্টেড হলিডে হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। 
                                    বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ব্রু রিয়াং শরণার্থীদের দীর্ঘ বছরের সমস্যা সমাধান করেছে এই সরকার। জনজাতি অংশের মানুষের কল্যাণে যা যা করার দরকার সেটা করবে বর্তমান সরকার। জনজাতিদের নিয়ে আমরা কোন ধরণের রাজনীতি করতে চাই না। তাদের উন্নয়ন ছাড়া কোন কথা হবে না। আর জনজাতিদের উন্নয়ন হলেই ত্রিপুরার উন্নয়ন সম্ভব হবে। জনজাতিদের ব্যবহৃত রিসা, পাছড়া জিআই ট্যাগ পেয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত জনজাতিদের লিজেন্ড ব্যক্তিত্বদের পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়া হয়েছে। রাজ পরিবারের এক সদস্য জিষ্ণু দেববর্মাকে তেলেঙ্গানার মতো বড় রাজ্যের রাজ্যপাল করা হয়েছে। জনজাতি সমাজপতিদের সাম্মানিক ভাতা ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। জনজাতিদের সম্মান করতে জানে একমাত্র ভারতীয় জনতা পার্টি। 
সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক বিপিন দেববর্মা, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, জেলা সভাপতি বিপ্লব চক্রবর্তী, টাকারজলা মন্ডলের নেতা নির্মল দেববর্মা সহ দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব। এদিন এই সভায় ২০০ পরিবারের ৬৯০ ভোটার ভারতীয় জনতা পার্টিতে সামিল হন। মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য নেতৃত্ব তাদের দলে স্বাগত জানান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ