সুদীপ চন্দ্র নাথ, আগরতলা, ৮ সেপ্টেম্বর : ত্রিপুরার স্বাস্থ্যসেবায় শুরু হয়েছে এক নতুন অধ্যায়। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা কেবল আধুনিকই হয়নি, বরং সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্যখাতে একের পর এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ রাজ্যের মানুষের আশা ও আস্থা বাড়িয়ে তুলেছে।
অতীতের দুরবস্থা, বর্তমানের সাফল্য
একসময় জটিল রোগে আক্রান্ত হলে রাজ্যের মানুষকে ভরসা করতে হত কলকাতা, চেন্নাই কিংবা ভেলোরের মতো শহরের ওপর। দূরপাল্লার যাত্রা, বিপুল খরচ ও দীর্ঘ প্রতীক্ষার কারণে বহু রোগী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হতেন। সেই চিত্র পাল্টে দিয়েছে রাজ্যের সাম্প্রতিক স্বাস্থ্য অবকাঠামোর উন্নয়ন।
আধুনিক প্রযুক্তি ও নতুন সুবিধা
অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট চালু হয়েছে।
ডায়ালাইসিস ইউনিট এবং অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও প্রশিক্ষিত সার্জন এখন রাজ্যের ভেতরেই রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত।
রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা হাসপাতালগুলোতেও বিশেষজ্ঞ বিভাগ চালু হওয়ায় সাধারণ মানুষ কাছেই উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন।
কিডনি প্রতিস্থাপনে ঐতিহাসিক অগ্রগতি
ত্রিপুরার স্বাস্থ্যসেবার সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো কিডনি প্রতিস্থাপন। আগে এই জটিল অপারেশনের জন্য বাইরে যেতে হত, কিন্তু এখন আগরতলাতেই তা সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। এতে কেবল রোগীর জীবনই রক্ষা হচ্ছে না, বরং পুরো রাজ্যের মানুষের মনে জন্ম নিচ্ছে এক নতুন আত্মবিশ্বাস।
দরিদ্র মানুষের জন্য সহায়তা
‘মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য সাথী যোজনা’ সহ বিভিন্ন প্রকল্পে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছেন। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা রোগীরা বলছেন—
“এখন আর কলকাতা যেতে হচ্ছে না। এখানেই ডাক্তাররা যত্ন নিয়ে আমাদের চিকিৎসা করছেন।”
ভবিষ্যতের লক্ষ্য
সরকার এখানেই থেমে নেই। আগামী দিনে রাজ্যে হার্ট ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিট চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য আরও আধুনিক রেডিয়োথেরাপি মেশিন বসানো হবে। সেই সঙ্গে টেলিমেডিসিন পরিষেবার মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করার কাজও চলছে।
ত্রিপুরার স্বাস্থ্যসেবা আজ নতুন পরিচয়ে পরিচিত— জটিল অপারেশন এখন এখানেই সম্ভব, জীবন বাঁচানো এখন রাজ্যের ভেতরেই সম্ভব। আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সরকারি উদ্যোগের মিলিত প্রয়াসে স্বাস্থ্যখাতে এই অগ্রগতি নিঃসন্দেহে ত্রিপুরার গর্বের বিষয়।
0 মন্তব্যসমূহ