Advertisement

Responsive Advertisement

ত্রিপুরার অর্গানিক ব্ল্যাক রাইস: বিশ্ববাজারে পা রাখল রাজ্যের কৃষিপণ্য





আগরতলা, ২৫ জুলাই : ত্রিপুরা, উত্তর–পূর্ব ভারতের একটি ছোট ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর রাজ্য, এখন ধীরে ধীরে ভারতের কৃষিখাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে অর্গানিক পদ্ধতিতে ব্ল্যাক রাইস চাষ শুরু হয়েছে এবং এখন সেই ফসল পাড়ি দিচ্ছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে। সম্প্রতি রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী [মন্ত্রীর নাম – চাইলে আপনি সংযোজন করতে পারেন] এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে এই ব্ল্যাক রাইস রপ্তানির শুভ সূচনা করেন, যা ত্রিপুরার কৃষি ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

ব্ল্যাক রাইস: ঐতিহ্য ও পুষ্টির সম্মিলন
ব্ল্যাক রাইস, স্থানীয়ভাবে 'কালো চাল' নামে পরিচিত, অনেকটা 'ফরবিডেন রাইস' নামেও খ্যাত। একসময় শুধুমাত্র চীনা রাজ পরিবারেই এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই ধান বিশ্বের নানা প্রান্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবার, আয়রন, এবং ভিটামিন ই-এর জন্য।
ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন অংশে আগে সীমিত পরিসরে এই ধানের চাষ হলেও, এবার তা সরকারি সহায়তায় একটি বাণিজ্যিক ও অর্গানিক প্রকল্পে রূপ পেয়েছে।

অর্গানিক চাষে নতুন অধ্যায়
ত্রিপুরা সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর গত কয়েক বছর ধরেই পরিবেশবান্ধব কৃষির ওপর জোর দিচ্ছে। ব্ল্যাক রাইস চাষের ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম নয়। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই, পুরোপুরি জৈব পদ্ধতিতে এই ধান উৎপাদন করা হচ্ছে। চাষিরা ব্যবহার করছেন ভার্মি কম্পোস্ট, গোবর সার, এবং প্রাকৃতিক কীটনাশক। রাজ্য সরকার এই প্রকল্পে কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা, প্রশিক্ষণ, এবং ক্ষেত্রভিত্তিক গাইডলাইন দিচ্ছে।
এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত রাজ্যের উনকাটি, খোয়াই, সিপাহিজলা ও দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় চাষ শুরু হয়েছে, এবং ধীরে ধীরে অন্যান্য জেলাতেও বিস্তার ঘটানো হচ্ছে।

রপ্তানির আনুষ্ঠানিক সূচনা: আন্তর্জাতিক বাজারে ত্রিপুরার আত্মপ্রকাশ
এই ব্ল্যাক রাইস চাষ কেবল কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রেই সাফল্য এনে দেয়নি, বরং ত্রিপুরাকে একটি রপ্তানিমুখী কৃষি রাজ্য হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেছে। সম্প্রতি ত্রিপুরা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ব্ল্যাক রাইস বিদেশে রপ্তানির সূচনা করেন। প্রথম দফায় চালান গেছে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এর পর পর্যায়ক্রমে ইউরোপ, আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।
 রাজ্য সরকারের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ জানান, “এই উদ্যোগ শুধু রাজ্যের কৃষিকে উন্নত করবে না, বরং রাজ্যের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।”
কৃষকরা পাচ্ছেন ন্যায্য দাম ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
ব্ল্যাক রাইস চাষ করে রাজ্যের কৃষকরা আগের চেয়ে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি আয় করতে পারছেন। স্থানীয় বাজারে যেমন এর চাহিদা বেড়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এর অর্গানিক সার্টিফিকেশন থাকায় দাম মিলছে আরও বেশি। অনেক কৃষকই এখন অন্য ফসল ছেড়ে এই ধানের দিকে ঝুঁকছেন।
ত্রিপুরার কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, “আমরা চাই এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি কৃষক নিজের জমিতে লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব কৃষি করতে সক্ষম হন।”

নারী ও যুবকদের অংশগ্রহণ: নতুন সমাজিক পরিবর্তন
এই প্রকল্পে শুধু পুরুষ কৃষকরাই নয়, গ্রামীণ এলাকার অনেক মহিলাও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। অনেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে জৈব সার তৈরি ও সরবরাহ করছেন। পাশাপাশি রাজ্যের শিক্ষিত তরুণ সমাজের একাংশও এখন "অর্গানিক অ্যাগ্রিপ্রেনিউর" হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে।

 ত্রিপুরার কৃষিতে নতুন দিগন্ত
ত্রিপুরার ব্ল্যাক রাইস এখন কেবল একটি খাদ্যশস্য নয়, বরং রাজ্যের গর্ব, কৃষকের সম্মান ও ভবিষ্যতের রপ্তানি সম্ভাবনা। অর্গানিক কৃষির এই উদ্যোগ কৃষি ও পরিবেশ – উভয় ক্ষেত্রেই এক ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে এসেছে। যদি এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, তবে ত্রিপুরা ভবিষ্যতে ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্গানিক কৃষি রপ্তানিকারক রাজ্য হয়ে উঠতে পারবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ