আগরতলা, ২৯ জুলাই : ত্রিপুরা, পাহাড় আর জঙ্গলে ঘেরা এক সবুজ রাজ্য। এখানকার জুম চাষের ঐতিহ্য শুধু কৃষির নয়, এক জীবনধারা। আর সেই জীবনধারারই এক অনন্য ফসল হচ্ছে ত্রিপুরার বিখ্যাত ধানীলঙ্কা — যাকে বাইরের পৃথিবী চেনে Bird’s Eye Chili নামে। ছোট্ট এই লঙ্কার দানা যেন প্রকৃতির আগুন, ঝালে ও গন্ধে অনন্য, আর তার গন্তব্য শুধু স্থানীয় হাটে নয়, ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের বাজারেও। এই কাজটির দায়িত্বের সঙ্গে করছি এই কাজটির দায়িত্বের সঙ্গে করছে ত্রিপুরা স্টেট অর্গানিক ফায়ার্মিং ডেভেলপমেন্ট এজেন্সী। দেশ-বিদেশে রাজ্যের রাজধানী পণ্যকে ছড়িয়ে দিতে সংস্থার আধিকারিক ও বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন।
অর্গানিক জুম চাষে উৎপাদন
ত্রিপুরার পাহাড়ি জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে ‘জুম’ পদ্ধতিতে চাষ করে আসছেন। রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে লঙ্কা চাষ হয় পাহাড়ের ঢালে। মাটি, জলের গুণমান ও প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে এই ধানীলঙ্কা হয় অত্যন্ত ঝাল ও সুগন্ধযুক্ত।
গবেষকদের মতে, এই লঙ্কার ক্যাপসাইসিনের মাত্রা (যা ঝালের উৎস) দেশের অনেক প্রজাতির লঙ্কার তুলনায় বেশি। ফলে এর ঝাল ও স্বাদ আন্তর্জাতিক মানের।
জুমচাষিদের নতুন আশার আলো
অর্গানিক কৃষিপণ্য এখন বিশ্ববাজারে বিপুল জনপ্রিয়। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ভারতীয় অর্গানিক পণ্যের চাহিদা বাড়ছে দ্রুত। সেই ধারায় ত্রিপুরার ধানীলঙ্কাও পেয়েছে বিশেষ মর্যাদা। বর্তমানে এটি ত্রিপুরার অন্যতম জিআই ট্যাগ প্রাপ্ত কৃষিপণ্য হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
ফলস্বরূপ, স্থানীয় কৃষকরা সরকারি সহায়তা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এখন অর্গানিক সার্টিফিকেশনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। এতে উৎপাদন বাড়ছে এবং রপ্তানির সুযোগও তৈরি হচ্ছে।
বাজারে ‘ত্রিপুরা ব্র্যান্ড’
আগরতলা ও অন্যান্য শহরের স্থানীয় বাজারে যেমন এর চাহিদা, তেমনি দিল্লি, কলকাতা, বেঙ্গালুরুসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের রেস্টুরেন্ট ও খাদ্যপ্রস্তুতকারীরা এখন ত্রিপুরার ধানীলঙ্কা ব্যবহার করছেন।
এর পাশাপাশি, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য-এর মতো দেশেও ছোট পরিসরে রপ্তানি শুরু হয়েছে। অনলাইন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে ‘Tripura Organic Bird’s Eye Chili’ নামে বিক্রি হচ্ছে শুকনো ধানীলঙ্কা ও পাউডার ফর্মে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই উৎপাদন ব্যবস্থা আরও বৈজ্ঞানিকভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে ধানীলঙ্কা ত্রিপুরার অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ হয়ে উঠতে পারে। সরকারের উদ্যোগে কো-অপারেটিভ মডেল, সংগ্রহ কেন্দ্র ও আধুনিক প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট গড়ে তোলা গেলে রপ্তানির পরিমাণ বহুগুণে বাড়বে।
পাহাড়ের মাটির গন্ধ, জুমচাষিদের ঘাম আর প্রকৃতির আশীর্বাদে জন্ম নেওয়া ত্রিপুরার ধানীলঙ্কা এখন শুধু এক ফসল নয় — এটি এক সাংস্কৃতিক পরিচয়, এক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। ছোট্ট এই লঙ্কার আগুনে ঝাল আজ জ্বালিয়ে দিচ্ছে বিশ্ববাজারের স্বাদের ক্যানভাসে ত্রিপুরার নাম।
0 মন্তব্যসমূহ