আগরতলা, ২২ জুলাই: জনস্বার্থে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিধান তৈরি হয় বিধানসভায়। জনস্বার্থে বিভিন্ন ইস্যুতে বিধানসভায় কথা হয় ও আলোচনা হয়। এটা এমন একটা প্রতিষ্ঠান যেটা মন্দিরের মতো পবিত্র। আজকে যারা বিধানসভায় জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের আরো সচেতন হতে হবে। এর পাশাপাশি প্রকৃতিকে রক্ষায় বৃক্ষরোপণ উৎসবকে গণআন্দোলন হিসেবে পরিণত করতে হবে।
আজ রাজ্য বিধানসভায় আয়োজিত 'ঐতিহাসিক জুলাই: ত্রিপুরা বিধানসভার পদচিহ্ন' কার্যক্রমে অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এই উপলক্ষে বিধানসভা চত্বর এলাকায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতেও সামিল হন মুখ্যমন্ত্রী।
এই কার্যক্রমে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ১৯৬৩ সালে গঠিত ত্রিপুরা বিধানসভার দীর্ঘ পথচলায় ২০১১ সালের ২২ জুলাই ছিলো এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। আজ থেকে ১৪ বছর আগে এই বিশেষ দিনটিতে ত্রিপুরা বিধানসভা উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ পরিসর থেকে বর্তমান পরিসরে স্থানান্তরিত হয়। সেই উপলক্ষে আজকের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। এই প্রথমবারের মতো এধরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। ত্রিপুরা বিধানসভার প্রথম অধ্যক্ষ (স্পিকার) ছিলেন স্বর্গীয় উপেন্দ্র কুমার রায়। তিনি ১৯৬৩ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯৬৭ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আগে ত্রিপুরা টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল হিসেবে ছিল। পরবর্তী সময়ে ত্রিপুরা পূর্ণ রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম বারের বিধায়ক, প্রথম বারের মুখ্যমন্ত্রী। আর প্রথম বার সাংসদ, প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে সংসদে প্রবেশের সময় ষষ্টাঙ্গে প্রণাম করে প্রবেশ করেছিলেন। এমন একজন প্রধানমন্ত্রী আমরা আগে কখনো দেখি নি। এক ঐশ্বরিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সংসদে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। ডাঃ সাহা বলেন, বিধানসভা এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে বিভিন্ন বিষয়ে বিধান তৈরি হয়। ১৯৬৩ সালের ১ জুলাই ত্রিপুরায় প্রথম বিধানসভা হয়। বিধানসভায় জনস্বার্থে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলা হয়। গণতন্ত্রের স্বার্থে সেখানে বিরোধী পক্ষ থেকেও অনেক বক্তব্য রাখা হয়। সরকার পক্ষও উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আজ এই দিনটি পালন করার পাশাপাশি যারা প্রয়াত হয়েছেন তাদেরকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করি। যারা বিধানসভায় জনগনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তাদের শ্রদ্ধা জানানো উচিত। যারা জীবিত আছেন তাদেরকেও আমন্ত্রণ জানানো উচিত। তিনি পরামর্শ দেন যে পরের বছর থেকে এধরণের অনুষ্ঠানে প্রাক্তন স্পিকার এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের (যারা এখনও বেঁচে আছেন) আমন্ত্রণ জানাতে হবে। প্রয়োজনে বড় পরিসরে এধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতি আমাদের অনেককিছু শেখায়। কেউ কাউকে ছাড়া বাঁচতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য গাছের প্রয়োজন। একটা পরিণত গাছ ২৬০ পাউন্ড পর্যন্ত অক্সিজেন দিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ২০৭০ সালের মধ্যে দেশকে কার্বন নিউট্রেল কান্ট্রি হিসেবে গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছেন। মায়েদের নামে এক পেড় মা কি নাম কার্যক্রম শুরু করেছেন তিনি। আর গাছ লাগানোর আগে দেখা উচিত যাতে এটি ভবিষ্যতে কাটা না পড়ে। শুধু গাছ লাগানো নয়, এক সঠিকভাবে পরিচর্যা করার ব্যবস্থা করতে হবে। ২০২২ সাল থেকে রাজ্য বন দপ্তর সারা রাজ্যে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে ত্রিপুরা কোন অংশে কম নয়। রাজ্যে প্রায় ৭,৭২২ বর্গ কিলোমিটারের মতো বনভূমি রয়েছে। যা রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থানের প্রায় ৭৩% এর অধিক। তাই একে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
এই কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন, উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল, কৃষি মন্ত্রী রতন লাল নাথ, অর্থমন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায়, বনমন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, মুখ্য সচেতক কল্যাণী সাহা রায়, বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী, সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিগণ। এদিন এই বিশেষ দিনে ত্রিপুরা বিধানসভার গৌরবময় ইতিহাসকে স্মরণ করে বিধানসভা পরিসরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য মন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধিগণ।
0 মন্তব্যসমূহ